রোনালদোর কীর্তির দিনে পর্তুগালের দারুণ জয়

বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে বয়স যে কেবলই একটি সংখ্যা, তা আবারও প্রমাণ করলেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের আগে শেষ প্রস্তুতিমূলক ম্যাচে প্রথমবার মাঠে নেমেই দুর্দান্ত দুটি গোল করে অনন্য একটি রেকর্ড গড়লেন তিনি। দলের সেরা তারকার উজ্জ্বল পারফরম্যান্সে দাপুটে জয় দিয়ে ইউরোর প্রস্তুতি সারল পর্তুগাল।

মঙ্গলবার রাতে দেশের মাটিতে প্রীতি ম্যাচে রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ডকে ৩-০ গোলে পরাজিত করেছে ২০১৬ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়নরা। জোয়াও ফেলিক্স প্রথমে দলকে এগিয়ে নেওয়ার পর জোড়া গোল করেন রোনালদো।
গত সপ্তাহে ফিনল্যান্ডের বিপক্ষে ৪-২ গোলে জয়ের ম্যাচে স্কোয়াডে ছিলেন না রোনালদো। পরে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে হারের ম্যাচে দলে থাকলেও পুরোটা সময় বেঞ্চে কাটান। মূল প্রতিযোগিতা শুরুর দুই দিন আগে, শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে শুরুর একাদশে মাঠে নামেন ৩৯ বছর বয়সী এই তারকা।
রাফায়েল লেয়াও এবং জোয়াও ফেলিক্সকে সঙ্গে নিয়ে ধারাল আক্রমণভাগ সাজান পর্তুগাল কোচ রবের্তো মার্তিনেস। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে থাকে তারা।
গোলের জন্যও অপেক্ষা দীর্ঘ হয়নি। অষ্টাদশ মিনিটে ডান দিক থেকে ব্রুনো ফের্নান্দেসের পাস পেয়ে জায়গা তৈরি করে কোনাকুনি শটে গোল করেন ফেলিক্স। সবাইকে ফাঁকি দিয়ে বলটি দূরের পোস্ট দিয়ে জালে জড়িয়ে যায়।

খানিক পর রোনালদোও গোল পেতে পারতেন। দূর থেকে নেওয়া তার ফ্রি কিক রক্ষণ দেয়ালে একজনের মাথায় লেগে দিক পাল্টে গোলমুখে যাচ্ছিল, কিন্তু পোস্টে লেগে ফিরে আসে।
প্রথমার্ধে একচেটিয়া চাপ ধরে রাখার পর ৫০তম মিনিটে চমৎকার এক গোলে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন রোনালদো। মাঝমাঠ থেকে রুবেন নেভেসের উঁচু করে বাড়ানো বল ডি-বক্সে দারুণভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে, একজনকে কাটিয়ে কোনাকুনি শটে বল জালে পাঠান তিনি।

রোনালদো আন্তর্জাতিক ফুটবলের ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে জাতীয় দলের হয়ে টানা ২১ পঞ্জিকাবর্ষে গোল করার কীর্তি গড়লেন । পর্তুগাল মূল দলে তার অভিষেক ২০০৩ সালে, পরের বছর প্রথম গোলের দেখা পান এবং সেই থেকে প্রতি বছরই গোল করে আসছেন। ১০ মিনিট পর আরেকটি দারুণ গোলে স্কোরলাইন ৩-০ করেন রোনালদো। বাঁ দিক থেকে দিয়োগো জটার পাস পেয়ে প্রথম ছোঁয়ায় বাঁ পায়ের শটে গোলটি করেন পাঁচবারের বর্ষসেরা এই ফুটবলার।
আল নাসরের হয়ে ২০২৩-২৪ মৌসুমে ৪৪ গোল করা রোনালদো এ বছর দেশের হয়ে প্রথমবার জালের দেখা পেলেন। আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড অনেক আগেই নিজের করে নেওয়া রোনালদোর গোলসংখ্যা বেড়ে হলো ১৩০। ফুটবলের রাজা পেলে তার পুরো ক্যারিয়ারে ব্রাজিলের হয়ে গোল করেছিলেন ৭৭টি, আর রোনালদো বয়স ৩০ পার হওয়ার পরই জাতীয় দলের হয়ে করেছেন ৭৮টি গোল।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ ও ইউভেন্তুসের সাবেক এই তারকার ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে মোট গোলসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৯৫-এ। পুরো ম্যাচে ৬৫ শতাংশের বেশি সময় বল দখলে রেখে পর্তুগাল গোলের জন্য ২০টি শট নেয়, যার মধ্যে ৯টি ছিল লক্ষ্যে। পরিষ্কার কয়েকটি সুযোগ নষ্ট না হলে ব্যবধান আরও বড় হতে পারত।
ঢেউয়ের সামনে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো তেমন কিছুই করতে পারেনি আইরিশরা। মার্তিনেসের কোচিংয়ে ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত ১১ ম্যাচ খেলে সবগুলো জিতেছিল পর্তুগাল। তবে গত মার্চেই স্লোভেনিয়ার মাঠে ২-০ গোলে হেরে বসে রোনালদোরা। এরপর গত সপ্তাহে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ওই হার—সবশেষ তিন ম্যাচের দুটি হারায় কড়া সমালোচনার মুখেও পড়ে দলটি।তবে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে গোছানো পারফরম্যান্সে ঠিক সময়ে ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস দিতে পারল তারা। এবার মূল লড়াইয়ে নামার পালা।
জার্মানিতে আগামী শুক্রবার পর্দা উঠবে এবারের আসরের ইউরো ফুটবল। ১৯ জুনে চেক রিপাবলিকের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শিরোপা পুনরুদ্ধারের অভিযান শুরু করবে পর্তুগাল। ‘ডি’ তাদের অন্য দুই প্রতিপক্ষ হলো তুরস্ক ও জর্জিয়া।