নির্বাচনি রোডম্যাপের দাবি আরও জোরালো করার, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী ‘ফ্যাসিবাদী’ সরকারের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে এবার দশটি সাংগঠনিক বিভাগে বড় সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
সোমবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং আগামী মাস থেকে এসব সমাবেশ শুরু হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। শিগগিরই সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করে সমাবেশের তারিখ নির্ধারণ এবং এর সফল বাস্তবায়নের জন্য ‘টিম গঠন’ করা হবে।
বৈঠকে আরও আলোচনা হয় যে, নির্বাচন ইস্যু এবং জাতীয় ঐকমত্যের প্রশ্নে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কোনো ধরনের বিরোধ কিংবা দূরত্ব তৈরি না হওয়ার বিষয়ে নজর রাখতে হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। জানা গেছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ, সিলেট, রংপুর, কুমিল্লা এবং ফরিদপুর বিভাগের শহরগুলোতে সমাবেশ হবে। ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে প্রথম সমাবেশ শুরু করার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।
বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল যুগান্তরকে বলেন, ঢাকায় ঐতিহাসিক সফল র্যালির মাধ্যমে সারা দেশের নেতাকর্মীরা অনেক উজ্জীবিত হয়েছেন। এবারের র্যালিতে ব্যাপক সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ছিল, যা শহিদ জিয়াউর রহমানের প্রতি তাদের সম্মান এবং ভালোবাসার প্রমাণ। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের সংগঠনের কার্যক্রম আরও সুন্দরভাবে পরিচালনা করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং নতুন কিছু কর্মসূচি আসবে।
বিএনপি দাবি করছে যে, অন্তর্বর্তী সরকার মেয়াদের তিন মাসেও নির্বাচনি রোডম্যাপ প্রকাশ না করায় তারা ডিসেম্বরের মধ্যে রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি করেছে। অন্যথায়, আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দাবিতে রাজপথে আন্দোলন শুরু করবে দলটি। গত ৪ নভেম্বর বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। নেতারা মনে করছেন, রাষ্ট্রকাঠামোর সংস্কার এবং নির্বাচনি প্রক্রিয়া দুটিই একসাথে চলা উচিত। সরকারকে অবিলম্বে রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে, যাতে নির্বাচনের বিলম্বের শঙ্কা দূর হয়। বিএনপির দাবি, একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করছে এবং এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
বৈঠকে গত শুক্রবার জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিএনপির বিশাল র্যালির মূল্যায়ন করা হয়। নেতারা বলেন, ঢাকার ওই র্যালি ছিল বিএনপির ইতিহাসের সর্ববৃহৎ র্যালি। লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করেছে যে বিএনপি দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক শক্তি। সুতরাং, বিএনপিকে বাদ দিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। তারা দাবি করেন, বিএনপি সরকার গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী শক্তি এবং সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দলের সঙ্গে আলোচনা জরুরি।
এছাড়া, বিএনপি মনে করছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ফ্যাসিবাদী ষড়যন্ত্র মোকাবিলা এবং নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা এই দুই ইস্যুতে মাঠে কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে। এই চিন্তা থেকেই দলের নেতারা দশ সাংগঠনিক বিভাগে বড় সমাবেশের আয়োজনের পরিকল্পনা করছে। বিজয় দিবসের সময়েও বড় শোডাউনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বিএনপি ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় আরেকটি বড় র্যালির আয়োজন করবে।
বৈঠকে সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে সম্প্রতি তিনজনের অন্তর্ভুক্তির বিষয়েও আলোচনা হয়। বিএনপি নেতারা মনে করেন, দুইজনের নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে ছাত্র-জনতা প্রশ্ন তুলছে এবং আন্দোলন করছে। তারা বলেন, যথাযথ যাচাই-বাছাই ছাড়া এই নিয়োগগুলি বিতর্ক সৃষ্টি করেছে এবং সরকারের উচিত বিতর্ক এড়িয়ে এগিয়ে যাওয়া।
এছাড়া, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদারের নিয়োগ নিয়ে বিএনপি আগেই প্রশ্ন তুলেছিল এবং তার পদত্যাগ দাবি করেছিল। বিএনপির মতে, তিনি ছিলেন প্রশাসনের বিতর্কিত কর্মকর্তা এবং তার নিয়োগের পর বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
বৈঠকে দলীয় নেতারা বিএনপি-জামায়াত সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেন। তারা বলেন, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির কোনও দ্বন্দ্ব ছিল না এবং তারা একসাথে আন্দোলন করেছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ২০ দলীয় জোট ভেঙে দেওয়ার পরও জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির যোগাযোগ অব্যাহত ছিল। তবে, জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি না হওয়ার জন্য দলের নেতারা সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন এবং নির্বাচনের ইস্যু এবং জাতীয় ঐকমত্যে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করার গুরুত্ব দেন।