সম্প্রতি গাজায় গণহত্যার প্রেক্ষিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা দায়ের করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এ মামলায় এবার সমর্থন ও লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছে মিশর। রোববার মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ খবর জানানো হয়।
মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজায় ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের ওপর ক্রমবর্ধমান হামলা এবং ফিলিস্তিনের নাগরিকদের সরাসরি লক্ষ্যবস্তু করাসহ ইসরাইলি নানা অপরাধের পরিপ্রেক্ষিতে মিশর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘দখলদার শক্তি হিসেবে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরাইলের যে দায়িত্ব আছে, তা পালনের জন্য ইসরাইলকে আহ্বান জানিয়েছে তারা।’
এর আগে গাজার রাফায় হামলা না চালানোর জন্য ইসরাইলকে বেশ কয়েকবার সতর্ক করে দিয়েছিল মিসর। রাফার সাথে মিসরের সীমান্ত রয়েছে। এখানে ১০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছে। এখানে ইসরাইল হামলা চালালে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি মিসরে প্রবেশ করতে পারে।
ইসরাইলি বাহিনী মঙ্গলবার রাফার ফিলিস্তিনি ক্রসিং দখল করেছে। এর ফলে সীমান্তের মিসরীয় এলাকায় অবস্থানরত শত শত খাদ্য ও ওষুধবাহী ট্রাক আটকা পড়ে গেছে। আইসিজেতে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে যোগদানের বিবৃতিতে মিসর জানায়, বিশ্ব আদালত গাজায় মানবিক সহায়তা বাড়ানোর আদেশ দিয়েছে।
এদিকে, গাজায় পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছাতে এবং ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত না করতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত ইসরাইলকে যে নির্দেশনা দিয়েছে; সেটি মানার জন্য ইসরাইলকে আহ্বান জানানো হয়েছে বলেও জানিয়েছে মিশর।
গত সপ্তাহে মিসরের মধ্যস্ততায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবটি ইসরাইল প্রত্যাখ্যান করে। গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস এটি গ্রহণ করার কথা জানায়।
রোববার প্রকাশিত মিসরীয় বিবৃতিতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদ এবং প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
মধ্যস্ততাকারীর ভূমিকায় যুক্তরাষ্ট্রও আছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদে নয়, বরং আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার পক্ষে।
অন্যদিকে, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং স্পেন ও ইসরাইলের মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবিতে শনিবার হাজার হাজার ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারী মাদ্রিদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।
কর্তৃপক্ষের মতে প্রায় ৪,০০০ বিক্ষোভকারী ব্যানার ও প্রতীক বহন করে গাজায় ‘গণহত্যার’ নিন্দা এবং ফিলিস্তিনি জনগণের ‘প্রতিরোধের’ প্রশংসা করেছে।
ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ৭৬তম বার্ষিকীর আগে প্রায় ৩০টি সংগঠন এই সমাবেশের ডাক দেয়।
১৯৪৮ সালের এই যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের নিজভূমি থেকে বিতারিত করার ভয়াবহ ঘটনাকে তারা ‘নাকবা’ বা বিপর্যয় বলে অভিহিত করেছে। এ সময় ৭৬০,০০০ ফিলিস্তিনি নিজ ভূমি থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়।
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে মাদ্রিদ,বার্সেলোনা এবং ভ্যালেন্সিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্প্যানিশ শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ জুড়ে ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের অনুরূপ শান্তিপূর্ণ অবস্থান ও ক্যাম্প স্থাপন করেছে।
উল্লেখ্য, গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৩৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। রোববার হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ৭ মাসের যুদ্ধে গাজায় ৩৫ হাজার ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৭৮ হাজার ৭৫৫ জন।