বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যবসায়ী ও ধনকুবেররা প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের সহায়তায় ব্যাংক খাত থেকে ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছেন। এতে দেশের শক্তিশালী ব্যাংকগুলোও তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।
গত আগস্টে শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্ব নেন আহসান এইচ মনসুর। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এসব ব্যবসায়ী ও ধনকুবেররা ঋণ ও আমদানি খরচ বেশি দেখিয়ে প্রায় ১৬.৭ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছেন।
তিনি এটিকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ব্যাংকিং খাতে অন্যতম বড় ডাকাতি হিসেবে অভিহিত করেন। মনসুর বলেন, ডিজিএফআইয়ের সহায়তায় ব্যাংকগুলোকে নিয়ন্ত্রণে এনে ধনকুবেররা প্রতিদিন নিজেদের নামে ঋণ বের করছিলেন।
এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে ডিজিএফআইয়ের সহায়তায় ব্যাংক থেকে অন্তত ১০ বিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে এস আলম গ্রুপ অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছে, মনসুরের অভিযোগ ভিত্তিহীন।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস আরও জানায়, আইএসপিআর বা ডিজিএফআই থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
শেখ হাসিনার দীর্ঘমেয়াদি শাসনের সময়ে ভোট কারচুপি, বিরোধীদলীয় নির্যাতন ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর তিনি ভারতে আশ্রয় নেন।
নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় এসে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের উদ্যোগ নেয়। মনসুর যুক্তরাজ্যের সহায়তায় বিদেশে হাসিনার ঘনিষ্ঠদের সম্পদ অনুসন্ধানের কথা জানান।
এ সময়ে ব্যাংক খাতের অপব্যবস্থাপনার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ব্যাংকের পরিচালকদের ব্যাংক শেয়ার বিক্রি ও পদত্যাগে বাধ্য করা হতো, যা পরবর্তী সময়ে এস আলমের কাছে চলে যায়।
ব্যাংকিং খাতের আর্থিক স্থিতিশীলতা ফেরাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যাংক শেয়ার বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবং উচ্চমানের বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর মূলধন সংরক্ষণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।