বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এবং হলের পদধারী হলেই সকলকে গণগ্রেফতার করা উচিত নয়। অনেকেই বাধ্য হয়ে ছাত্রলীগের সদস্য হতে হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।
সোমবার রাতে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্টে সারজিস এই কথা জানান।
তিনি লেখেন, “একটি বিষয়ে আমার দ্বিমত রয়েছে। এটি শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক। ১ জুলাইয়ের আগে এবং ১ থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত যে আন্দোলন চলছিল, সেখানে হলের শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। মূলত হলের ছাত্রছাত্রীরাই এ আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকতে হলে ছাত্রলীগের কার্যক্রমে অংশ নিতে বাধ্য হতে হয়। যারা হলে থাকত, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই নিরুপায় হয়ে এসব করত।”
তিনি আরও বলেন, “হলের কমিটিতে থাকা প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী মূলত ভালো সিট পাওয়া, চাকরি হওয়া পর্যন্ত হলে থাকার সুযোগের জন্য পদ নিত। আর বাকি ২০ শতাংশ ক্ষমতার অপব্যবহারে লিপ্ত থাকত। তবে ওই ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থীই হল থেকে একত্রে আন্দোলনে নেমেছিল এবং এর কারণেই সাধারণ শিক্ষার্থীরাও তাদের সঙ্গে রাজপথে নেমে আসতে পেরেছিল।”
সারজিস আরও বলেন, “এই হলের ছেলেগুলোই সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে। হলের পারিপার্শ্বিকতার প্রেক্ষাপটে সত্য এটাই যে, হলের এসব ছাত্রলীগের পদধারী কিন্তু তুলনামূলক ক্লিন ইমেজের ছেলেরা আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল বলেই এ আন্দোলনটি সম্ভব হয়েছিল। এখন প্রশ্ন হলো, এই পদধারী শিক্ষার্থীদের আমি কি শুধুমাত্র ছাত্রলীগের পরিচয়ে নিষিদ্ধের কাতারে ফেলব? আমার উত্তর – না।”
তিনি বলেন, “যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে নিজের জীবন বাজি রেখে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়েছে, তারা তাদের পরীক্ষা সফলভাবে পার করেছে। সত্য হলো, এ আন্দোলন সফল না হলে এই শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হতো। যে সিস্টেমের জন্য তাদের বাধ্য হয়ে ছাত্রলীগের সদস্য হতে হয়েছে, সেই সিস্টেমের জন্য আমাদেরও দায়ী হতে হবে। কারণ, আমরা চুপ ছিলাম।”
সারজিস আরও বলেন, “এই ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থীর মধ্যে কেউ যদি পূর্বে কোনো অন্যায়ে জড়িত থাকে তবে তা তদন্তসাপেক্ষে শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু গণহারে গ্রেফতার করার প্রক্রিয়াকে আমি সমর্থন করি না। যারা সময়ের প্রয়োজনে ন্যায়ের পক্ষে আমার সঙ্গে রাজপথে নেমেছে, আমি তাদের পাশে আছি।”