ইরান-ইসরাইল সাম্প্রতিক উত্তেজনার কারণ মূলত সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে অবস্থিত ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলি হামলা। সেই হামলায় নিহত হন ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের জ্যেষ্ঠ কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদি। জাহেদি ছাড়াও এই হামলায় নিহত হন আরো ছয়জন।
জাহেদি ১৯৬০ সালের ২ নভেম্বর ইরানের মধ্যাঞ্চলীয় শহর ইসফাহানে জন্ম নেন।
ইরানের ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের দুই বছর পর আইআরজিসিতে যোগ দেন জাহেদি।
সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পরে ধীরে ধীরে ওপরের দিকে উঠতে থাকেন জাহেদি। ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি আইআরজিসির স্থল বাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্রিগেডের নেতৃত্ব দেন। এই ব্রিগেড একাধিক বড় অভিযানে অংশ নেয়।
এরপর জাহেদিকে ইরানের ১৪তম ইমাম হোসেন ডিভিশনের কমান্ডার হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় সংগঠিত ইরানি স্থল বাহিনীর আরেকটি প্রধান অংশ ছিল এই ডিভিশন।
ডিভিশনটি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে অংশ নিয়েছিল। ইরান-ইরাক যুদ্ধ শেষ হওয়ার কয়েক বছর পরও ১৯৯১ সাল নাগাদ এই পদে দায়িত্ব পালন করেছেন জাহেদি।
ইরানের সামরিক পদে জাহেদির আরও ওপরে ওঠার পরবর্তী রেকর্ডটি আসে ২০০৫ সালে। তখন তিনি অল্প সময়ের জন্য রেভল্যুশনারি গার্ডের বিমানবাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। একই বছর জাহেদিকে আইআরজিসির স্থল বাহিনীর কমান্ড দেওয়া হয়। এই পদে তিনি দায়িত্ব পালন করেন তিন বছর।
সেই সময়ে জাহেদি এক বছর থার-আল্লাহ সদর দপ্তরের নেতৃত্ব দেন। এই দপ্তরের দায়িত্ব প্রধানত রাজধানী তেহরানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
অন্তত ২০০৮ সাল থেকে জাহেদি পুরো অঞ্চলে ইরানের প্রভাব বিস্তারের কাজে ব্যাপকভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি আইআরজিসির অভিজাত কুদস ফোর্সের বিদেশ শাখায় কমান্ডার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন।
জাহেদি সিরিয়া ও লেবাননে কুদস ফোর্সের নানা কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে কয়েক দশক ধরে এই দুই দেশে ইরানের রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামরিক প্রভাব বাড়ছে।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে ইরাকে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছিলেন কুদস ফোর্সের প্রধান মেজর জেনারেল কাসেম সোলেইমানি। এ ঘটনার পর জাহেদি হলেন ইরানের সর্বোচ্চ পদধারী কোনো সামরিক কমান্ডার, যিনি বিদেশি হামলায় নিহত হলেন।
মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরানি স্বার্থের প্রধান প্রতিনিধি হিসেবে জাহেদির ওপর ইসরায়েলি গোয়েন্দারা বছরের পর বছর ধরে নজর রাখছিলেন।
বেশ কয়েকবার ইসরায়েলি গণমাধ্যমে জাহেদির নাম আসে। তাঁর ছবিও প্রকাশ করা হয়। ইসরায়েলি গণমাধ্যমে জাহেদির পরিচয় দেওয়া হয়, আইআরজিসির কুদস ফোর্সের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে।