প্রথমে শেয়ার কিনে পরিচালনা পর্ষদ নিয়ন্ত্রণে নেয়া, তারপর নতুন-পুরাতন কোম্পানির নামে ঋণের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে নেওয়া—এভাবেই এস আলম গ্রুপ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই গ্রুপটি ঋণের নামে ব্যাংক লুটের একটি নতুন কৌশল আবিষ্কার করেছে। নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে ছয়টি ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপ এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা ৯৫ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে। এই অপকর্মে তাদের সহায়তা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা।
বর্তমানে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৯৫ হাজার কোটি টাকার মধ্যে একমাত্র ইসলামী ব্যাংক থেকেই এস আলম গ্রুপ এবং এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো ৭৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে।
প্রথমে একটি নন-এসি বাস সার্ভিসের মাধ্যমে পরিচিত হওয়া এই গ্রুপটি, এখন সরকারি জনতা ব্যাংক থেকেও সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এছাড়া সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকসহ নিয়ন্ত্রিত অন্যান্য ব্যাংক থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে।
এই বিপুল অর্থ তারা কীভাবে ব্যাংক থেকে বের করে নিলো? বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রথমে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে নিজেদের লোক বসিয়ে, তাদের মাধ্যমেই ঋণ অনুমোদন করিয়েছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, বোর্ডকে দিয়ে ঋণ পাশ করানো হয়েছে। এসবের মধ্যে কিছুই বৈধ নয়। যেহেতু বোর্ডে সব এস আলমের লোক ছিল, তাই তারা বোর্ড থেকে পাশ করিয়ে বৈধভাবে ঋণ নিয়েছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, নীতিমালা উপেক্ষা করে নিজেরাই প্রভাবিত করে ঋণ দিয়েছে। এটা যেনো এক প্রকার পুকুর চুরি।
এস আলম গ্রুপ শুধু নিজেদের নামে ঋণ নেওয়াই নয়, বরং গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমেও এই ঋণ নিয়েছে। পাশাপাশি ছায়া কোম্পানি তৈরি করে নিয়ম লঙ্ঘনের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই অর্থ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ওদের উদ্দেশ্যই ছিল ভুল। এই ঋণগুলো এনপিএল হয়ে গেলে তা ফেরত আসবে না, ফলে ব্যাংকের মূলধনের ওপর চাপ পড়বে।
প্রশ্ন উঠছে, এত অনিয়ম ও লুটপাট কি শুধুমাত্র এস আলম গ্রুপ আর তাদের নিয়ন্ত্রিত বোর্ডের মাধ্যমে সম্ভব? বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বরং সহায়তা করেছে।
ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যাংক লুট হচ্ছে, আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছুই করছে না? তারা কেনো কিছু করেনি, বরং সহযোগিতা করেছে।
ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, এসব বিষয় কারও না কারো তো দেখা উচিত ছিল। কেউ যদি চেষ্টা করতো বন্ধ করতে, তাহলে বোঝা যেতো, কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক তা করেনি। বরং সুবিধা দেওয়ার জন্য সেভাবে সার্কুলার দিয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, সঠিক হিসাব বের হলে এস আলম গ্রুপের ঋণের পরিমাণ আরও বেশি হবে। এখন জালিয়াতির পথ বন্ধ করায় সামনে আসতে পারে হাজার হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ।