সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। তাই আদালতের চূড়ান্ত রায় না আসা পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের অপেক্ষা করতে বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এছাড়াও তিনি জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হতে পারে এমন আন্দোলন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা আশা করি, দেশের উচ্চ আদালত বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে রায় প্রদান করবেন। শেখ হাসিনা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার যে সংগ্রাম শুরু করেছেন, তার প্রধান চালিকা শক্তি হলো মেধাবী জনগোষ্ঠী। শিক্ষিত, দক্ষ এবং স্মার্ট প্রজন্মের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের সংগ্রামকে সফল করতে মেধাবী তরুণ প্রজন্ম আমাদের প্রধান সম্পদ।’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালে একটি পরিপত্র জারি করে সব ধরনের কোটা বিলোপ করেছেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে সাতজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করেন। দেশের উচ্চ আদালত কোটা বাতিলের পরিপত্র বাতিল করেছেন এবং সরকারপক্ষের আইনজীবী এই রায়ের বিপক্ষে আপিল করেছেন। সরকার কোটা বাতিলের দাবির প্রতি আন্তরিক বলেই অ্যাটর্নি জেনারেল আপিল করেছেন।
উচ্চ আদালতে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে কোনো মন্তব্য করা আইনসিদ্ধ নয় উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আদালত উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনে নিশ্চয়ই একটি চূড়ান্ত রায় প্রদান করবেন। উচ্চ আদালতের রায় না হওয়া পর্যন্ত সবার অপেক্ষা করা উচিত এবং কোনো ধরনের উত্তেজনা বা রাস্তাঘাট বন্ধ করে মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি করা উচিত নয়। বিশেষ করে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের অসুবিধা হয় এমন কর্মসূচি পরিহার করা উচিত।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, এর আগে যে কোটা আন্দোলন বাংলাদেশে হয়েছিল, তার প্রথম সারির ৩১ জন নেতা কিন্তু বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি। এ তথ্য সাংবাদিকেরা যাচাই করতে পারেন।
কোটাবিরোধী আন্দোলনে রাজনৈতিক উপাদান যুক্ত হয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, “আমাদের বিভক্ত ও মেরুকরণের রাজনীতি এখানে যুক্ত হয়ে গেছে। কারণ, বিএনপি প্রকাশ্যে এবং তাদের সমমনারা এই কোটা আন্দোলনকে সমর্থন করেছে। সমর্থন করা মানেই তারা এর মধ্যে অংশগ্রহণও করেছে। কাজেই এটি এখন মেরুকরণের রাজনীতির ধারার মধ্যে পড়েছে। এর রাজনৈতিক রং নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।”
সড়ক পরিবহনমন্ত্রী আরও বলেন, “এই আন্দোলনে কারা যুক্ত আছে এবং এটি কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ কিনা, তা আন্দোলনের গতিধারায় বোঝা যাবে। সময়ের পরিবর্তনে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। কিছুই লুকানো সম্ভব হবে না এবং আমরা তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।”
সারা বিশ্বে আন্দোলনে রাজনৈতিক দল ও ইউনিয়নের কর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। এটাকে আওয়ামী লীগ নেতিবাচকভাবে দেখে কেন—এই প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক দল পৃথিবীর কোন দেশে আন্দোলনে শামিল হয়েছে? এটা বিচারাধীন। কোনো রাজনৈতিক দল এভাবে পারে না। আদালতের রায়, যা সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল এবং সরকারই আবার আপিল করেছে। আদালত রায় দিয়েছেন। এখানে সরকারের দোষ কোথায়? আদালতের এখতিয়ারে থাকা বিষয়ে কথা বলা বা সমালোচনা করা, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা, এটা আইনসিদ্ধ নয়। আমরা সেটাই বলছি।”
কোটাবিরোধী আন্দোলনে জনদুর্ভোগ কমাতে সরকারের কঠোর হওয়ার পরিকল্পনা আছে কি না— জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, “সরকারপক্ষ তো আপিল করছে। আদালত চূড়ান্ত রায় দেননি। তাঁরা কীভাবে হস্তক্ষেপ করেন, সেটা আদালতের রায়ের মধ্যে দেখা যাবে। আমি এখানে বলছি যা বলার বলে দিয়েছি।
আন্দোলন স্থগিত বা প্রত্যাহারের অনুরোধ করছেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা যা বক্তব্য দিয়েছি, এ থেকে বুঝে নিন। আমাদের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ আছে। আনুষ্ঠানিক বসাবসি এখনো হয়নি। সিদ্ধান্ত তো নিতে হবে বাস্তব পরিস্থিতির আলোকে।
সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ কর্মসূচি বাস্তবায়নের বিরোধিতা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, এখানে ভুলবোঝাবুঝি থাকতে পারে। তাঁদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগও আছে। আনুষ্ঠানিক বসাবসি এখনো হয়নি। সিদ্ধান্ত তো নিতে হবে বাস্তব পরিস্থিতির আলোকে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।