প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশত্যাগের দুই দিন আগে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়ররা অদৃশ্য হয়ে যান। একই সময়ে কাউন্সিলররাও আত্মগোপনে চলে যান। মেয়র ও কাউন্সিলরদের সম্পর্কে কারও কাছে সঠিক তথ্য নেই। ক্ষমতার পরিবর্তনের ফলে করপোরেশনে অনেক কর্মকর্তা আসতে সাহস পাচ্ছেন না। কিছু কর্মকর্তা এলেও তারা রুটিন কার্যক্রম চালাতে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। ফলে নাগরিক সেবা কার্যক্রম চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, গত শনিবার ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস দেশ ছাড়েন। বিমানবন্দর সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার সকাল ৮:৩০ টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে তিনি সিঙ্গাপুরে যান। অপরদিকে, ঢাকা উত্তরের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম শুক্রবার থেকে নিজ বাসভবনে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর রবিবার থেকে তিনি নিজের বাসভবন ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন। বর্তমানে তাঁর অবস্থান সম্পর্কে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা কিছুই জানেন না।
জানা গেছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরসহ মোট ১৭২ জন কাউন্সিলর রয়েছেন। তাদের মধ্যে বিএনপির ছয়জন কাউন্সিলর ছাড়া অন্যরা আত্মগোপনে চলে গেছেন। অনেক কাউন্সিলর কার্যালয় বন্ধ রয়েছে, যার ফলে নাগরিক সেবার অনেক কার্যক্রম স্থগিত হয়ে গেছে। বর্তমানে ডেঙ্গু মৌসুম চলছে, কিন্তু মশক নিধন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, নাগরিকত্বসহ ১৭ ধরনের সনদ ইস্যু হচ্ছে না। কাউন্সিলররা তাদের নিরাপত্তাহীনতা এবং এলাকাবাসীর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ভয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন, যা নাগরিক সেবা কার্যক্রমে মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয় এবং সড়কে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে ফুটপাত, সড়ক বিভাজক ও সড়কবাতিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখন মেরামতের জন্য কেউ নেই। সরেজমিনে দেখা গেছে, মালিবাগ আবুল হোটেল থেকে কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত সড়ক বিভাজনের রেলিং অনেক জায়গায় নেই, যা আন্দোলনকারীরা ভেঙে ফেলেছে। ভাঙা অংশ টোকাই ও ছিনতাইকারীরা নিয়ে গেছে, ফলে মানুষ যত্রতত্র রাস্তা পারাপার হচ্ছে। বনশ্রী এইচ ব্লকের ১, ২, ৩, ৪ নম্বর রোডের বেশিরভাগ সড়কবাতি নষ্ট হয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভাবের কারণে এসব সড়কে রাতে চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। নিউমার্কেট, শাহবাগ, পল্টন, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, উত্তরা ও ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনের অন্যান্য এলাকাতেও নাগরিক সেবার পরিস্থিতি বিপর্যস্ত।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে গিয়ে দেখা গেছে, সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা অসন্তুষ্ট, বঞ্চিত এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে নগর ভবনে টহল দিচ্ছেন। তারা মেয়র সেল এবং বিভাগীয় প্রধানদের দপ্তরে ঘোরাঘুরি করছেন। দীর্ঘদিন ধরে নগর ভবনের পরিচালনায় সক্রিয় থাকা কর্মকর্তারা অফিস খুললেও আসেননি। অনেক কর্মকর্তা অফিসে আসেননি এবং যাঁরা এসেছেন, তাঁরা বঞ্চিত কর্মচারীদের ক্ষোভের শিকার হচ্ছেন। একই পরিস্থিতি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনেও বিরাজ করছে, তবে সেখানে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তুলনায় কর্মকর্তাদের উপস্থিতি কিছুটা বেশি ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তীব্রতার সময়ে মেয়র বিদেশে চলে যান এবং তিনি কখন ফিরবেন তা অনিশ্চিত। পরিস্থিতি শান্ত হলে হয়তো তিনি দেশে ফিরতে পারেন। বর্তমানে কর্মকর্তারা আতঙ্কিত হয়ে নগর ভবনে আসছেন না। বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন নগর ভবনে টহল দিচ্ছেন এবং যে কোনো সময় হেনস্তার আশঙ্কা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অনেক কর্মকর্তা অফিসে আসতে সাহস পাচ্ছেন না। এর পাশাপাশি, কিছু কর্মকর্তা দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগের মুখোমুখি হওয়া সম্ভবনা রয়েছে। মেয়রের বিদেশে থাকা এবং কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতির কারণে নাগরিক সেবার কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।