তিস্তার পানির হিস্যা পাওয়ার আলোচনা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। লোকসভা নির্বাচনের পর টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসা নরেন্দ্র মোদির সরকারের অধীনে এবার কি তিস্তার পানি বণ্টনে অগ্রগতি হবে?
বাংলাদেশ-ভারতের অভিন্ন নদী তিস্তা। একসময় উত্তরাঞ্চলের চার জেলার মানুষের অর্থনীতির চালিকাশক্তি ছিল এই নদী। কিন্তু সীমানার ওপারে একের পর এক বাঁধ নির্মাণের ফলে এখন তা বিভীষিকায় রূপ নিয়েছে। বর্ষায় বাঁধের পানি ছেড়ে দিলে বন্যা আর গ্রীষ্মে পানি আটকে দিলে খরা দেখা দেয়। এই অবস্থায় উত্তরাঞ্চলের ৪ জেলার অন্তত ৫০ লাখ মানুষ নিঃস্ব হয়ে গেছে। ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে তিস্তা ইস্যু অনেক দিন ধরেই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভারত বলছে, কেন্দ্র সরকার তিস্তার পানি দিতে রাজি, তবে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার বেঁকে বসেছে। ফেব্রুয়ারিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফরেও তিস্তা ইস্যু ওঠে। আশ্বাস দেয়া হয়, লোকসভা নির্বাচনের পর তিস্তা বিষয়ক বিস্তারিত আলোচনা হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কেন্দ্র-রাজ্যের মধ্যে মতপার্থক্য দেখিয়ে ভারত বিষয়টিকে ঝুলিয়ে রেখেছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন,
বছরের পর বছর ধরে দিল্লি আর কলকাতার মধ্যে রাজনীতি চলছে। মমতা হোক বা যে কেউ হোক, পশ্চিমবঙ্গের কোনো সরকারই এটি মেনে নেবে না। কারণ পানিটা তাদের কৃষির জন্যও দরকার।
কেন্দ্রে আবারও বিজেপি সরকার এসেছে, যার ঘোর বিরোধী পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। ফলে কেন্দ্র-রাজ্যের মধ্যে দূরত্ব বেড়েছে, কমার সুযোগ নেই।
এদিকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলছেন, জনপ্রিয়তা হারানোর ভয়ে মমতা বন্দোপাধ্যায় নদীর পানি ছাড়তে রাজি হবেন না। তবে চীন তিস্তা নিয়ে আগ্রহ দেখানোয় ভারত কিছুটা নমনীয় হতে পারে।
মোমেন বলেন,
পানির জন্য চীন একটা প্রস্তাব দিয়েছে। তাতে আমাদের লাভ হবে। আমাদের অবস্থানটা একটু শক্তিশালী হয়েছে। এতে ভারত একটু সংবেদনশীল হবে বলে আশা করি। কারণ তারা ভাববে, চীন ঢুকলে ঝামেলা হবে। তবে আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে চাই। কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থে মমতার সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের আলোচনা দরকার।
এই বিশ্লেষণকে কিছুটা সমর্থন করে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সাম্প্রতিক দেয়া প্রস্তাব। তিস্তায় বর্ষা মৌসুমের পানি ধরে রাখতে চীন যে মহাপ্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশকে, মে মাসে ঢাকা সফরে এসে সম্পূরক প্রস্তাব দেয় ভারত। তবে সেখানে পানি ভাগাভাগির বিষয় নেই, আছে চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা।