ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. গোলাম সাকলায়েনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মতামত চাওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পিএসসিকে পাঠানো এক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, তদন্তে উঠে এসেছে যে সাকলায়েনের সঙ্গে নায়িকা পরীমনির বিবাহবহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। সাকলায়েন পরীমনির বাসায় গিয়ে থাকতেন এবং সাকলায়েনের স্ত্রী তাঁর (সাকলায়েনের) সরকারি বাসায় না থাকার সময় পরীমনি সেখানে রাত্রিযাপন করেছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে ১৩ জুন পিএসসিকে চিঠি পাঠানো হয়। এতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮ অনুযায়ী ‘অসদাচরণের’ কারণে সাকলায়েনকে ‘গুরুদণ্ড’ হিসেবে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে সাকলায়েনের বক্তব্য জানতে প্রথম আলো তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। অন্যদিকে, নায়িকা পরীমনি প্রথম আলোকে বলেন, “বিষয়টি ব্যক্তিগত পর্যায়ে এখনো আসে নাই, ব্যক্তিগত পর্যায়ে যদি আসে তখন আমি কথা বলব। এখন মনে হয় না আমার কোনো কথা বলার দরকার আছে।”
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সাকলায়েন ডিবির গুলশান বিভাগে কর্মরত থাকার সময় নায়িকা পরীমনির সঙ্গে তাঁর প্রথম দেখা হয় এবং এরপর তাদের মধ্যে যোগাযোগ শুরু হয়। এই যোগাযোগের ধারাবাহিকতায় তিনি নিয়মিত পরীমনির বাসায় রাত্রিযাপন করতে থাকেন।
পুলিশ অধিদপ্তরের এলআইসি শাখা (বৈধ আড়িপাতার দায়িত্বে থাকা) থেকে পাওয়া সাকলায়েনের মুঠোফোনের সিডিআর (বিস্তারিত কল রেকর্ড প্রতিবেদন) বিশ্লেষণ করে তদন্তকারীরা দেখেছেন, ২০২১ সালের ৪ জুলাই থেকে পরবর্তী এক মাসে বিভিন্ন সময়ে (দিনে ও রাতে) সাকলায়েন পরীমনির বাসায় অবস্থান করেছেন।
নায়িকা পরীমনির মুঠোফোনের ফরেনসিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় তদন্তকারীরা দেখেছেন যে সাকলায়েনের সঙ্গে তার কথোপকথন শুধুমাত্র সাধারণ পরিচিতি বা পেশাগত প্রয়োজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং তা একটি অনৈতিক প্রেমের সম্পর্কের ইঙ্গিত দেয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাজারবাগ মধুমতি পুলিশ অফিসার্স কোয়ার্টার্সে নায়িকা পরীমনির যাতায়াতের সিসিটিভি (ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা) ফুটেজ রয়েছে। ফরেনসিক প্রতিবেদনের বিশ্লেষণ ও সাক্ষীদের জবানবন্দি অনুযায়ী প্রতীয়মান হয় যে, সাকলায়েনের পূর্বপরিকল্পনা ও সম্পূর্ণ জ্ঞাতসারে তার স্ত্রী না থাকার সময় নায়িকা পরীমনি তার রাজারবাগের সরকারি বাসায় যান। সেখানে প্রায় ১৭ ঘণ্টা অবস্থান করার পর ২ আগস্ট (২০২১) রাত দেড়টায় পরীমনি বাসাটি ত্যাগ করেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে সাকলায়েন, একজন দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তা হয়ে, সরকারি দায়িত্বের বাইরে নায়িকা পরীমনির সঙ্গে অতিমাত্রায় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। এতে আরও বলা হয়েছে, সাকলায়েন বিবাহিত ও এক সন্তানের জনক হলেও, পরীমনির সঙ্গে তাঁর বিবাহবহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্ক, পরীমনির সঙ্গে জন্মদিন উদ্যাপন, এবং নিজের সরকারি বাসভবনে স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে সময় কাটানোর মতো ঘটনাগুলো সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, এ ঘটনায় সাকলায়েনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে এবং তাকে কারণ দর্শানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যদিও তিনি অভিযোগ থেকে অব্যাহতির দাবি করেছিলেন, তার জবাব সন্তোষজনক হয়নি।