বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করে গণমিছিল করেছে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
বৃষ্টির পরোয়া না করে, শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগ, প্রেস ক্লাব, শহিদ মিনার, মিরপুর, উত্তরা, আফতাবনগর, সায়েন্সল্যাব এবং বায়তুল মোকাররমের সামনে থেকে শুরু হয় এই গণমিছিল।
শুক্রবার সকাল থেকে শিক্ষার্থী, পেশাজীবী, শিল্পী এবং চিকিৎসকরা বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। বৃষ্টির মধ্যেও তারা গণমিছিল ও অন্যান্য প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।
বেলা সাড়ে ১১টায় আফতাবনগরের ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে থেকে গণমিছিল শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এই মিছিলটি ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে শুরু হয়ে রামপুরা ব্রিজ ঘুরে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সামনে গিয়ে পৌঁছায়। পরে মিছিলটি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি থেকে আবার রামপুরা ব্রিজ হয়ে দুপুর ১২টার দিকে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে গিয়ে শেষ হয়।
দুপুরে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজসহ আশপাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা গণমিছিলে অংশগ্রহণ করেন।
শুক্রবার দুপুর ২:৩০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আন্দোলন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদ এবং কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা।
জুমার নামাজের পর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ছাত্র-জনতার ব্যানারে পূর্ব ঘোষণা করা আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। তারা দ্রুত নয় দফা দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। এরপর তারা প্রেস ক্লাবের অবস্থান ছেড়ে হাইকোর্টের সামনে দিয়ে শাহবাগের দিকে চলে যান।
অন্যদিকে, বায়তুল মোকাররম মসজিদে জুমার নামাজ শেষে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা গণমিছিল শুরু করেন। মিছিলটি বায়তুল মোকাররম থেকে পল্টনের দিকে যাত্রা করে এবং শাহবাগ পৌঁছালে পুলিশ মিছিলটি আটকে দেয়।
সকাল ১০টার দিকে ঢাকার উত্তরা এলাকায় রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের সামনে শিক্ষার্থীরা গণমিছিল করেন। এ সময় কলেজের বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক ও অভিভাবকরা তাদের সাথে যোগ দেন। শিক্ষার্থী হত্যার বিচার দাবিতে স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে চারপাশ।
বিকেলে মিরপুরের ইসিবি চত্বরে কয়েকশো শিক্ষার্থী সমবেত হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন এবং আটক শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি জানান।
সকালে বৃষ্টি উপেক্ষা করে শত শত শিল্পী ও সাধারণ মানুষ ধানমন্ডির আবাহনী মাঠের সামনে দাঁড়িয়ে ছাত্র-জনতা হত্যার প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করেন। তারা নিহতের সঠিক সংখ্যা প্রকাশ, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচার এবং সরকারের পদত্যাগের দাবি জানান।
এছাড়া, সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মেডিকেল শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকেরা বিক্ষোভ করেন। বাংলামোটরে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সামনে ‘কবি-লেখক সমাজ’ ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলামোটরে পরিকল্পনাবিদরাও মানববন্ধন করেন। তারা বলেন, সমাজে প্রতি পদে-পদে ভয় বিরাজ করছে, তবে এই শিক্ষার্থীরা কোনো ভয় ছাড়াই অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। তারা আশা করেন, ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষার্থী যেন হয়রানি বা গুলির শিকার না হন এবং হত্যাকাণ্ডের স্থানগুলোর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানান।