পিলখানা ট্রাজেডির ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলায় জামিন পেয়ে ১৬ বছর পর কারামুক্ত হচ্ছেন ১৭৮ জন সাবেক বিডিআর সদস্য। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে গাজীপুরের কাশিপুর কারাগার থেকে একে একে বেরিয়ে আসতে দেখা যায় সাবেক বিডিআর সদস্যদের। এ সময় কারাফটকের সামনে তাদের স্বজনরা উল্লাস প্রকাশ করেন এবং মুক্তি পাওয়া সাবেক বিডিআর সদস্যদের মিষ্টিমুখ করান।
এছাড়া, কেরানীগঞ্জে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকেও আজ মুক্তি পাবেন আরও কিছু সাবেক বিডিআর সদস্য, যারা বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলায় জামিন পেয়েছেন।
গত ১৯ জানুয়ারি কেরানীগঞ্জের অস্থায়ী আদালতে ঢাকার বিশেষ ট্রাইবুন্যাল-২ এর বিচারক ইব্রাহীম মিয়ার আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ ও জামিন শুনানি শেষে বিস্ফোরক মামলার আসামিদের জামিনে মুক্তির আদেশ দেন। আদালতের আদেশে বলা হয়, যারা বিডিআর বিদ্রোহের হত্যা মামলায় খালাস পেয়েছেন এবং যাদের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল নেই, তারা জামিনে মুক্তি পাবেন। একইভাবে, যারা হত্যা মামলায় সাজাভোগ শেষ করেছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে কোনো আপিল নেই, তারাও মুক্তি পাবেন। তবে মুক্তির সংখ্যা আদেশের দিন নির্দিষ্ট করা হয়নি।
শর্তাবলি পর্যালোচনা করে গত ২২ জানুয়ারি ট্রাইবুনালের প্রসিকিউশন ১৭৮ জনের জামিননামা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠায়।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। এই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজা শেষ হওয়া আসামিরা বিস্ফোরক আইনের মামলায় আটকে ছিলেন, যার ফলে ৪৬৮ জনের মুক্তি বিলম্বিত হচ্ছিল।
হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর শেষ হয়। এতে ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। এছাড়া ২৭৮ জন খালাস পেয়েছিলেন। ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর এই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায় দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের রায়ে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়, ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন এবং ২২৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। পাশাপাশি ২৮৩ জনকে খালাস দেয়া হয়।
তবে হাইকোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ ৫৪ জন আসামি মারা যান। ফলে, হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল এবং লিভ টু আপিল করেছেন। অন্যদিকে, হাইকোর্টের ৮৩ জন আসামির খালাস ও সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল করেছে। এসব আপিল এবং লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ ২০১০ সালে শুরু হয়, তবে মাঝপথে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয় এবং শুধু হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করা হয়, ফলে এই মামলার বিচারকাজ দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে ছিল।
ক্ষমতার পালাবদলের পর অন্তর্বর্তী সরকার বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার পুনঃতদন্ত শুরুর দাবি তোলেন। ১৯ ডিসেম্বর শহিদ পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যান, এবং ২৪ ডিসেম্বর সরকার আ ল ম ফজলুর রহমানকে প্রধান করে একটি কমিশন গঠন করে, যা ৯০ দিনের মধ্যে পুনঃতদন্ত প্রতিবেদন দেবে।
এ ঘটনায় সাবেক বিডিআর সদস্যদের মুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা বিডিআর বিদ্রোহের মামলার বিচারকাজের দীর্ঘসূত্রিতা এবং চলমান তদন্তের সাথে সম্পর্কিত।