"বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন" শীর্ষক সেমিনার আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে জহুর হোসেন চৌধুরী হলে অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন মাসিক ইতিহাস অন্বেষার সম্পাদক ও প্রকাশক এস এম নজরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা লেঃ জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান অস্থিরতা সংক্রান্ত জরূরি কাজে হঠাৎ ব্যস্ত থাকায় তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবদুর রব, ডুয়েটের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান, ফ্রেন্ডস অব গ্রামীনের (বাংলাদেশ চ্যাপ্টার) সদস্য সচীব রাদোয়ান হোসেন, শিব্বির মাহমুদ, চেয়ারম্যান দিগন্ত মিডিয়া, কর্নেল (অবঃ) আবদুল হক, কৃষিবিদ গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আলমগীর সহ আরও অনেকে।
আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন অভিজ্ঞ কৃষিবিদ ও সামরিক/বেসামরিক সূধীজন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কৃষিবিদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশিষ্ট কৃষিবিজ্ঞানী ডক্টর আলী আফজাল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদ ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরন করার মাধ্যমে তিনি তার বক্তব্য শুরু করেন।
মাননীয় কৃষি উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে ড. আফজাল অনেকটা দুঃখের সাথেই বলেন, কৃষি খাতের এই বিশাল ক্ষেত্রের সমন্বয় ও উন্নয়নের বিষয়ে সকল সরকারই উদাসীন ছিল। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন বর্তমান সরকার এই বিষয়ে যথাযথ গুরুত্ব দিবেন এবং সঠিক ব্যাক্তিকে সঠিক দায়িত্বটা দিবেন।
তিনি আরও বলেন, কৃষকের উন্নয়ন ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।
বিগত সময়ে কৃষি সেক্টরে দূর্নীতির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি এর তদন্ত ও বিচারের আবেদন করেন।
“বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন” শীর্ষক মূল প্রবন্ধে তিনি সুনির্দিষ্ট ২৮ টি পয়েন্ট তুলে ধরেন যার মাধ্যমে দেশের কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন সম্ভব।
তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পয়েন্টগুলো হলো:
১. গত ১৬ বছরে শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে বঞ্চিত সৎ, দক্ষ ও অভিজ্ঞ কৃষি বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তাদের দ্রুত মূল্যায়ন এবং প্রশাসনের পুলিশ ক্যাডারের মতোই পদোন্নতি দেওয়া উচিত।
২. কৃষি উৎপাদনকে সহায়তা করতে ভর্তুকি প্রয়োজন, যদিও কিছু ক্ষেত্রে আধুনিক কৃষিকে উৎপাদন প্যাকেজ বা সহায়ক মূল্যের মাধ্যমে ভর্তুকি দেওয়া হয়। বাংলাদেশও ভর্তুকি বাড়ানো এবং তা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। তবে ভর্তুকির অর্থ টেন্ডার, দুর্নীতি বা সার কেলেঙ্কারির মাধ্যমে রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারা আত্মসাৎ হওয়া কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। ভর্তুকি ব্যবস্থা অবশ্যই সঠিকভাবে কার্যকর হবে।
৩. প্রায়ই আবহাওয়ার অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কারণে ফসলের ক্ষতি বা কম উৎপাদন ঘটে। কৃষি বীমা কৃষক এবং কৃষি উৎপাদনকে সাহায়তা একটি্ উপায় হতে পারে। কৃষকদের সাহায্য করতে কৃষি ভর্তুকি করা প্রয়োজন।
৪. গবেষণা ও উন্নয়ন (আরএন্ডডি) সুবিধাসম্পন্ন বেসরকারি বীজ বিতরণের ক্ষেত্রে বড় অবদান রাখে। আরএন্ডডি সুবিধাসম্পন্ন সফল বীজ কোম্পনির গবেষণাকে ভর্তুকি হিসেবে দেওয়া উচিত, যা উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করবে এবং কৃষকদের জন্য উপকারী হবে।
৫. কৃষি প্রক্রিয়াকরণ গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে বরং শিল্প ক্ষেত্রে ব্যাপক সম্ভাবনা সৃষ্টি করছে। প্রক্রিয়াজাত পণ্যগুলি প্রাথমিক পণ্যগুলির চেয়ে বেশি লাভজনক। প্রক্রিয়াজাত পণ্য প্রাথমিক পণ্যের তুলনায় বেশি লাভজনক। বিশেষায়িত পণ্য যেসব এলাকায় বেশি পাওয়া যা (যেমন রাজশাহী ও দিনাজপুর অঞ্চলের আম), সেখানে কৃষি শিল্প উন্নয়নে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন।
৬. প্ল্যান্ট ভ্যারাইটি প্রোটেকশন অথরিটি (PVPA) যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রতিষ্ঠা করা উচিত। এটি ০৬ মে ২০১৯-এ বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে অনুমোদিত হয়েছিল এবং ০৯ মে ২০১৯-এ গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছিল।
৭. জাতীয় উদ্ভিত সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ (NPPA) জরুরিভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। এটি ০৫ এপ্রিল ২০১১-এ বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার পর মহামান্য রাষ্ট্রপতির সম্মতি পায়।
এছাড়া তিনি কৃষি কমিশন গঠন করে একটি দীর্ঘমেয়াদী কৌশল এবং পরিকল্পনা তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার কথাও বলেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মোঃ আলমগীর বলেন, প্রবন্ধে কৃষি সংক্রান্ত কোনো উন্নয়নের জায়গা তিনি বাদ দেন নাই। সম্মানিত কৃষি উপদেষ্টা উপস্থিত থাকলে জাতি আরও উপকৃত হত।
বিশেষ অতিথি ড. আব্দুল মান্নান বলেন, সব সময় স্টককারী ও মধ্যস্বত্বভোগীরা বেশি লাভবান হয়। কৃষকও লাভবান হয় না, ভোক্তাদেরও অনেক বেশি দাম গুনতে হয়।
বিশেষ অতিথি রাদোয়ান হোসেন বলেন, বিষয়গুলোর বাস্তবায়নের সাথে সম্পৃক্ত ব্যাক্তিগুলোর এমন অনুষ্ঠানের সাথে থাকা জরুরী। তাহলে এর লক্ষ্য অর্জন সম্ভব। তিনি মূল প্রবন্ধের উপর আলোচনা করেন।
বিশেষ অতিথি অধ্যাপক ড. আব্দুর রব তার বক্তব্যে এমন ব্যতিক্রম ও উদ্ভাবনী সেমিনারের দারুণ প্রশংসা করেন। তিনি গতানুগতিক কৃষিপণ্যের বাইরে রপ্তানিযোগ্য পণ্য চাষের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
উক্ত সেমিনারে কৃষি সেক্টরের বিভিন্ন কর্মকর্তা এবং সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন। বিশেষভাবে আয়োজিত এ সেমিনারের কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্যগুলো সফলভাবে বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এই অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশের কৃষি খাতের জন্য একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে, যা দেশের কৃষিকে নতুন এক উচ্চতায় নিয়ে যাবে।