অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় একটি বড় ধরনের কাঠামোগত সংস্কার বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে। এর আওতায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে রাজস্ব প্রশাসনকে দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে—রাজস্ব নীতি বিভাগ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ। এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বার্থের সংঘাত কমানো এবং দেশের করব্যবস্থা আরও শক্তিশালী ও স্বচ্ছ করা।
মঙ্গলবার (১৩ মে) বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের পাঠানো এক বার্তায় এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
বার্তায় বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে এনবিআর কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে। বর্তমানে দেশের কর-জিডিপি অনুপাত মাত্র ৭.৪ শতাংশ, যা এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম। তুলনামূলকভাবে মালয়েশিয়ায় এই হার ১১.৬ শতাংশ, আর বৈশ্বিক গড় ১৬.৬ শতাংশ। দেশের উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে কর-জিডিপি অনুপাত কমপক্ষে ১০ শতাংশে উন্নীত করার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে বলা হয়, এনবিআরের কাঠামোগত দুর্বলতা এ লক্ষ্য পূরণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
একই সংস্থার মাধ্যমে নীতিনির্ধারণ এবং বাস্তবায়নের মতো দায়িত্ব পালনে স্বার্থের দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে বলে বার্তায় উল্লেখ করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে আসছেন, রাজস্ব প্রশাসন শুধুমাত্র আদায়ের ওপর গুরুত্ব দেয়, অথচ দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি ও সুষ্ঠু নীতির দিকে যথাযথ দৃষ্টি দেয় না।
এই সংস্কারকে একটি আমলাতান্ত্রিক রদবদল নয় বরং একটি মৌলিক কাঠামোগত পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ন্যায্য, দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক করব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
বার্তায় এনবিআরের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়, যার মধ্যে রয়েছে:
স্বার্থের দ্বন্দ্ব: একই প্রতিষ্ঠানে নীতি নির্ধারণ এবং বাস্তবায়নের ফলে জবাবদিহির অভাব, অনিয়ম ও দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কর কর্মকর্তারা অনেক সময় কর ফাঁকি দেওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে আপস করেন।
দুর্বল রাজস্ব আহরণ: নীতির অভাব এবং সক্ষমতা বৃদ্ধিতে উদাসীনতার কারণে করজাল সংকীর্ণ থেকে গেছে, যা রাজস্ব সম্ভাবনাকে বাধাগ্রস্ত করেছে।
শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা: বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি, ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতায় ঘাটতি রয়েছে।
অতিরিক্ত আমলাতান্ত্রিকতা: একই ব্যক্তি অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এবং এনবিআরের দায়িত্বে থাকায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বন্দ্ব এবং অদক্ষতা দেখা দেয়।
নৈতিক সংকট: দীর্ঘদিনের কর্মকর্তাদের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে, তাদের বাদ দেওয়া বা উপেক্ষা করা হতে পারে।
নতুন কাঠামোতে স্পষ্টভাবে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হবে। রাজস্ব নীতি বিভাগ কর আইন, হার নির্ধারণ ও আন্তর্জাতিক চুক্তি নিয়ে কাজ করবে। অন্যদিকে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ কর আদায়, নিরীক্ষা এবং সম্মতি পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করবে।
এই সংস্কার প্রত্যক্ষ কর সংগ্রহ বাড়াতে, পরোক্ষ কর নির্ভরতা কমাতে এবং প্রমাণভিত্তিক, ভবিষ্যতমুখী নীতিমালা তৈরিতে সহায়ক হবে বলে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।