বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেরে গণঅভ্যুত্থানের ফলে ক্ষমতা হারানোর আগে শেখ হাসিনা সরকার ১০ লাখ কোটি টাকার বিদেশি ঋণ রেখে গেছে।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুন মাস শেষে দেশের বিদেশি ঋণের মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০৩ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসেবে)। এর মধ্যে সরকারের ঋণ প্রায় ৮৩.২১ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। এই ঋণের মধ্যে রয়েছে সরকারের নিজস্ব ঋণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং সরকারি সংস্থাগুলোর ঋণ। বাকি ঋণ বেসরকারি খাতের।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, উচ্চ সুদ ও কঠোর শর্তে নেওয়া এসব ঋণ সরকারি সংস্থাগুলোর সেবার মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে।
২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৫০ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার। গত ১৫ বছর ৮ মাসে তা বেড়ে ৫৩ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
২০২৩ সালের মার্চ মাস শেষে সরকার ও বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ৯৯ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, পরবর্তী তিন মাসে সরকার প্রায় ৪ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার নতুন ঋণ গ্রহণ করেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, সাবেক সরকারের ঋণ ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে দেশি উৎস থেকে অতিরিক্ত ঋণ নেওয়া হয়েছে। যদিও বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নেওয়া অনেক সময় বিশেষজ্ঞরা সমর্থন করেন, তবে বিগত সরকার দরকষাকষি না করেই অনেক বিদেশি ঋণ নিয়েছে, যা ঋণ পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছে।
করোনার কারণে বৈশ্বিক আর্থিক সংকট এবং মার্কিন সুদের হার বৃদ্ধির ফলে বিদেশি ঋণের সুদও বেড়েছে। এছাড়াও, দেশের টাকার অবমূল্যায়ন বেসরকারি খাতে ঋণ নেওয়া ব্যবসায়ীদের বিপাকে ফেলেছে। তবে ডলারের মান কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ার পর এবং দেশীয় ঋণে সুদের হার বাড়ায়, ব্যবসায়ীরা আবারও বিদেশি ঋণ নিতে শুরু করেছে।
২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার সরকার পদ্মা সেতু, ঢাকা মেট্রোরেল, শাহজালাল বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প, কর্ণফুলী টানেল, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, যা বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াতে ভূমিকা রেখেছে।