বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা আরও কঠোর করে তুলেছে এবং ঋণ ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক মান অনুসরণের উদ্যোগ নিয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ঋণ বা তার কিস্তি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ না হলে সেটি পরবর্তী দিন থেকেই মেয়াদোত্তীর্ণ হিসেবে গণ্য হবে। যদি ঋণটি তিন মাসের মধ্যে পরিশোধ বা নবায়ন না করা হয়, তবে সেটি খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হবে।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে সকল বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে। এই নতুন নীতিমালা কার্যকর হবে ২০২৫ সালের ১ এপ্রিল থেকে।
এর আগে ঋণের ধরন অনুযায়ী খেলাপি হওয়ার সময়সীমা বিভিন্ন ছিল। তবে এখন সব ধরনের ঋণের জন্য তিন মাস পরিশোধ না হওয়া অবস্থায় খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। আগে কিছু ঋণের ক্ষেত্রে এই সময়সীমা ছয় মাস ছিল। ফলে নতুন নিয়মে খেলাপি ঋণ শনাক্ত করার সময়সীমা তিন মাসে নেমে আসায় ভবিষ্যতে খেলাপি ঋণের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যেমন আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক, বাংলাদেশের খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আপত্তি জানিয়ে আসছে। আন্তর্জাতিকভাবে কোনো ঋণ নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ না হলে তিন মাস পর সেটি খেলাপি হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ঋণগ্রহীতা ও বড় ঋণখেলাপিদের সুবিধার্থে পূর্ববর্তী সরকার এটি ছয় মাস পর্যন্ত বাড়িয়েছিল। মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে এই সময়সীমা ছিল ৯ মাস। পরবর্তীতে আইএমএফের আপত্তির কারণে কিছু ঋণের ক্ষেত্রে তিন মাসের নিয়ম প্রয়োগ করা হলেও কৃষি ও মেয়াদি ঋণের জন্য ছয় মাসের নিয়ম এখনো বহাল রয়েছে।
এদিকে, ৪ ডিসেম্বর আইএমএফের একটি মিশন ঢাকায় আসবে, যারা এবার খেলাপি ঋণের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে পর্যালোচনা করবে। কারণ, আইএমএফের ঋণ পাওয়ার অন্যতম শর্ত ছিল খেলাপি ঋণ কমানো। তবে সরকার পরিবর্তনের পর খেলাপি ঋণ আরও বেড়ে যাওয়ার তথ্য রয়েছে।
আইএমএফের ঋণ শর্ত অনুযায়ী, খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা অপরিহার্য। এই শর্ত পূরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের সংজ্ঞায় পরিবর্তন এনে আরও কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।