মাগুরা জেলা প্রতিনিধিঃ এস এম মেহেদী হাসান সবুজ
কৃষিবিদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. আলী আফজালের পক্ষ থেকে বিকেএসপিতে চান্স পাওয়া ঈমন মিয়াকে আর্থিক সহায়তা
মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর উপজেলার বলিদিয়া গ্রামের কৃতি সন্তান ও বিশিষ্ট কৃষি বিজ্ঞানী ড. আলী আফজাল এক মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি বিকেএসপিতে (বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) ভলিবল বিভাগে চান্স পাওয়া ঈমন মিয়া নামের এক মেধাবী ও প্রতিভাবান কিশোরকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন। ঈমন মিয়ার পরিবারের আর্থিক দুরবস্থার কথা জানতে পেরে ড. আলী আফজাল তার পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেছেন এবং ভবিষ্যতেও তার সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
মোঃ ঈমন মিয়া, পিতা মোঃ জাকির মিয়া, মাগুরার মোহাম্মদপুর উপজেলার বলিদিয়া গ্রামের বাসিন্দা। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি প্রবল আগ্রহ ও প্রতিভা ছিল ঈমনের। গ্রামের মাঠে খেলতে খেলতেই সে স্বপ্ন দেখত দেশের জন্য কিছু করার। কিন্তু দারিদ্র্যের শৃঙ্খল তার অগ্রগতির পথে এক বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। পরিবারে নিত্যদিনের খাবার জোগাড় করাই যেখানে কষ্টকর, সেখানে খেলাধুলার জন্য পর্যাপ্ত সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা একপ্রকার অসম্ভব ছিল।
তবে প্রতিভা কোনোদিনই দমিয়ে রাখা যায় না। কঠোর পরিশ্রম ও আত্মপ্রত্যয়ের মাধ্যমে ঈমন সুযোগ পায় বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি)। তার অসাধারণ নৈপুণ্য দেখে বিকেএসপি তাকে ভলিবল বিভাগে প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত করে। কিন্তু ভর্তি ফি, পোশাক, অনুশীলনের সরঞ্জাম ও অন্যান্য খরচ জোগাড় করা তার পরিবারের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ে।
ঈমনের এই দুঃখ-কষ্টের কথা জানতে পারেন কৃষিবিদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. আলী আফজাল। মানবতার সেবায় নিবেদিতপ্রাণ এই কৃষি বিজ্ঞানী ও সমাজসেবক বরাবরই পিছিয়ে পড়া মেধাবীদের পাশে দাঁড়িয়ে এসেছেন।
তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে ঈমনের বিকেএসপিতে ভর্তি সংক্রান্ত যাবতীয় খরচ বহন করার দায়িত্ব নেন তিনি। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে ঈমনের পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণের জন্যও পাশে থাকার আশ্বাস দেন। তার এই উদ্যোগ শুধু ঈমনকেই নয়, বরং আরও অনেক প্রতিভাবান ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য এক অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
ড. মোঃ আলী আফজাল শুধু একজন বিজ্ঞানী নন, তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা ও মানবসেবায় নিবেদিত ব্যক্তি। তার সারাজীবনের লক্ষ্য দেশের কৃষি উন্নয়ন এবং সাধারণ মানুষের কল্যাণ সাধন। তিনি বিশ্বাস করেন, সমাজের অগ্রগতির জন্য দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের সঠিক দিকনির্দেশনা ও সহায়তা প্রদান করা অত্যন্ত জরুরি।
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের সমাজে অনেক প্রতিভাবান শিশু-কিশোর রয়েছে, যারা শুধু আর্থিক অনটনের কারণে নিজেদের প্রতিভা বিকশিত করতে পারছে না। আমি চাই ঈমনের মতো আরও অনেক শিশু তাদের স্বপ্ন পূরণের সুযোগ পাক। আমি সর্বদা চেষ্টা করি, যেকোনোভাবে সমাজের জন্য কিছু করতে।”
ড. মোঃ আলী আফজালের এই সহায়তায় ঈমন ও তার পরিবার অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। ঈমন বলেন, “আমি কখনো ভাবিনি যে বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাব। যখন সুযোগ পেলাম, তখন ভাবলাম হয়তো অর্থের অভাবে স্বপ্নটা অধরাই থেকে যাবে। কিন্তু আলী আফজাল স্যারের সহযোগিতায় আমার স্বপ্ন এখন বাস্তবে পরিণত হয়েছে। আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ। আমি কঠোর পরিশ্রম করে দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনতে চাই।”
ঈমনের বাবা মোঃ জাকির মিয়া আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, “আমি একজন সাধারণ কৃষক। ছেলের প্রতিভা আছে, কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে তাকে কিছুই দিতে পারিনি। আলী আফজাল স্যার যদি পাশে না থাকতেন, তাহলে ছেলের স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব হতো না। উনি শুধু ঈমনকে নয়, আমাদের গোটা পরিবারকে একটা নতুন আশার আলো দেখিয়েছেন। আমরা সারাজীবন তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব।”