শিরোনাম

ভয়ের প্রতীক নয়, আস্থার বাহিনী হোক পুলিশ: প্রধান উপদেষ্টা

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৩ সপ্তাহ আগে
ছবি : সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে দেশের পুলিশ বাহিনী দলীয় স্বার্থে ব্যবহৃত হয়ে পড়েছিল। এতে করে বাহিনীর কাঠামোগত ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং সাধারণ মানুষের আস্থা বিঘ্নিত হয়।

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে তিন দিনব্যাপী ‘পুলিশ সপ্তাহ ২০২৫’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. ইউনূস বলেন, অবৈধ ও অন্যায় নির্দেশ পালন করতে গিয়ে পুলিশ বাহিনী একাধিকবার জনগণের ক্ষোভের মুখে পড়েছে। এতে অনেক সৎ ও আদর্শবান পুলিশ সদস্যকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে। এখন সময় এসেছে সেই আস্থার জায়গায় ফেরার—যেখানে পুলিশ জনগণের নিরাপত্তার প্রতীক হয়ে উঠবে।

তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সময় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল নাজুক, আর পুলিশের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক ছিল বিচ্ছিন্ন। তবে সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপ ও সংস্কারের ফলে বর্তমানে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে।

রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পুলিশের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধের কথা স্মরণ করে ড. ইউনূস বলেন, এটি পুলিশের ইতিহাসে একটি গৌরবময় অধ্যায়। শহিদ পুলিশ সদস্যদের প্রতি তিনি শ্রদ্ধা জানান।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, অপরাধ দমন, জনগণের সঙ্গে পুলিশের সম্পর্ক উন্নয়ন এবং বাহিনীর সদস্যদের মনোবল বাড়াতে বিভিন্ন প্রণোদনা চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন, “শুধু অপরাধ দমন নয়—পুলিশের দায়িত্ব হচ্ছে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানো এবং মানবিক রাষ্ট্র গঠনে ভূমিকা রাখা।”

দুর্গাপূজা, বিশ্ব ইজতেমা, ঈদ ও বাংলা নববর্ষের মতো বড় উৎসবগুলো শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হওয়ায় তিনি পুলিশ সদস্যদের প্রশংসা করেন। সেইসঙ্গে জানান, বর্তমানে প্রতিটি অপরাধে পুলিশ তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, পুলিশ একটি ন্যায়ভিত্তিক ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং জনগণের স্বপ্ন বাস্তবায়নের অন্যতম মাধ্যম হবে।

জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচন যেন সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হয়, তা নিশ্চিত করতে পুলিশ বাহিনীকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। ভোটার যেন নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন—সেই পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।

তিনি বলেন, “যদি কেউ অন্যায়ভাবে নির্বাচিত হয়, তবে তার দ্বারা ন্যায় প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তাই কারও হাতিয়ার হবেন না—আপনারা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেবেন।”

নির্বাচনের আগে সময়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, “পরাজিত শক্তি যেন দেশকে অস্থিতিশীল করতে না পারে, সে জন্য সর্বদা সজাগ থাকতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা এখনো যুদ্ধের মধ্যে আছি। অশুভ শক্তিগুলো আমাদের ঐক্য ও স্বপ্নকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। সেই অপচেষ্টা প্রতিহত করতে আপনাদের দায়িত্বশীল ও সতর্ক থাকতে হবে।”

ড. ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় বিভিন্ন আন্দোলনের মধ্যে পুলিশ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। ভবিষ্যতেও সেই ধৈর্য ও দায়িত্বশীলতা বজায় রাখার আহ্বান জানান তিনি।

পুলিশকে “জনগণের বন্ধু” আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এই ভাবমূর্তি গড়েই সামনে এগিয়ে যেতে হবে। প্রথমবারের মতো পুলিশ সপ্তাহে ধর্মীয়, সাংবাদিক ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের আয়োজনকে তিনি ইতিবাচক উল্লেখ করেন এবং বলেন, “এ ধরনের সংলাপ নিয়মিত হওয়া উচিত, যাতে জনগণের সঙ্গে পুলিশের দূরত্ব আরও কমে।”