শিরোনাম

আন্দোলনে পুলিশকে গুলি করার নির্দেশ দেন রাজনৈতিক নেতারা

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২ দিন আগে
ছবি : সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের ভূমিকার পেছনে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে। সংস্থাটি একাধিক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৩ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত আন্দোলনে পুলিশের পদক্ষেপ রাজনৈতিক নেতাদের নির্দেশনায় পরিচালিত হয়েছে। ৫০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে আন্দোলনের সময় পুলিশের ভূমিকা, নির্দেশদাতাদের পরিচয় এবং ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার বিস্তারিত উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘আফটার দ্য মনসুন রেভোলিউশন: এ রোডম্যাপ টু লাস্টিং সিকিউরিটি সেক্টর রিফর্ম ইন বাংলাদেশ’। এতে অতীতে কীভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে এবং শেখ হাসিনার সরকারকে স্বৈরাচারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এইচআরডব্লিউ জানায়, পুলিশের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন যে আন্দোলনের সময় অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের নির্দেশ সরাসরি রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে এসেছে। এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, “আন্দোলনের সময় মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের ভূমিকা নয়, বরং রাজনৈতিক নেতারাই পুলিশের কার্যক্রম নির্ধারণ করতেন।”

আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে সিনিয়র কর্মকর্তাদের সরাসরি সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আন্দোলনকারীদের প্রতি গুলি চালানোর নির্দেশ দিতে দেখেছেন। তিনি বলেন, “তাদের আচরণ এমন ছিল যেন ভিডিও গেমের কোনো চরিত্রকে গুলি করার নির্দেশ দিচ্ছেন।”

প্রতিবেদনে আমির হোসেন নামের এক ১৮ বছর বয়সী আন্দোলনকারীর অভিজ্ঞতাও উল্লেখ করা হয়েছে। আমির জানান, পুলিশের তাড়া খেয়ে একটি নির্মাণাধীন ভবনে উঠে তিনি বাঁচার চেষ্টা করেন। তবে পুলিশ তাকে লাফ দিতে বাধ্য করে এবং পরে তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। লাফ দিয়ে নিচে পড়ায় তার একটি পা ভেঙে যায়।

পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন যে তাদের কঠোর হতে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। যদিও সরাসরি ‘গুলি করার’ নির্দেশ দেওয়া হয়নি, তবে নির্দেশনায় ‘যে কোনো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ’ করতে বলা হয়েছিল।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আন্দোলনের সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন সরাসরি পুলিশের কার্যক্রমের ওপর নির্দেশ দিয়েছিলেন। এক ভিডিওতে দেখা যায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেও পুলিশের কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করেছেন এবং একজন কর্মকর্তা তাকে ‘গুলি করার’ বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন।

এই প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে নতুন প্রশ্ন উত্থাপন করেছে।