বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রদান সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এ প্রজ্ঞাপন জারি করেন। এই প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মেট্রোপলিটন এলাকা ছাড়া সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তাদের অধিক্ষেত্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন।
ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ১২(১) ধারার আওতায় সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের এই ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। এই ধারায় সরকারকে মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। যদিও পুলিশ সদস্যদের জন্য সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার নিচে দায়িত্ব প্রদান করা হয় না, তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে এ বিষয়ে আইন অনুযায়ী কোনো সীমাবদ্ধতা নেই।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে যে, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭(১) ধারার আওতায় ক্ষমতাপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা (যারা সেনা কর্মকর্তা) সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে কাজ করবেন।
গ্রেফতার, তল্লাশি ও বেআইনি সমাবেশ ভঙ্গের ক্ষমতা:
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা ফৌজদারি কার্যবিধির ৬৪, ৬৫, ৮৩, ৮৪, ৮৬, ৯৫(২), ১০০, ১০৫, ১০৭, ১০৯, ১১০, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১৩০, ১৩৩ এবং ১৪২ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন। এসব ধারার অধীনে, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা কাউকে আটক বা গ্রেফতার, গ্রেফতারের আদেশ প্রদান, তল্লাশির আদেশ প্রদান এবং বেআইনি সমাবেশ ভঙ্গের আদেশ দিতে পারবেন।
গ্রেফতার বা গ্রেফতারের আদেশ:
ফৌজদারি কার্যবিধির ৬৪ ও ৬৫ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেট তার উপস্থিতিতে স্থানীয় অঞ্চলে অপরাধ ঘটলে নিজে অপরাধীকে গ্রেফতার করতে পারবেন অথবা অন্য কাউকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিতে পারবেন। ৮৩ ও ৮৪ ধারায় অধিক্ষেত্রের বাইরে কার্যকর করার জন্য পরোয়ানা জারি করতে পারবেন। ৮৬ ধারার বিধান অনুযায়ী গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে মুচলেকা দিয়ে মুক্তি দিতে পারবেন অথবা জামিনযোগ্য না হলে আদালতে পাঠাবেন।
তল্লাশির আদেশ:
ফৌজদারি কার্যবিধির ৯৫(২) ধারার আওতায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে ডাক বা টেলিগ্রাম বিভাগের মাধ্যমে তল্লাশি পরিচালনার ব্যবস্থা করতে পারবেন। ১০০ ধারার বিধান অনুযায়ী বেআইনি আটক সংক্রান্ত বিশ্বাসযোগ্য সংবাদ পেলে তল্লাশি পরোয়ানা জারি করতে পারবেন। ১০৫ ধারায় নিজ উপস্থিতিতেও তল্লাশির আদেশ দিতে পারবেন।
শান্তিরক্ষায় মুচলেকা গ্রহণ:
শান্তি বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৭ ধারার অধীনে শান্তিরক্ষায় সদাচরণের মুচলেকা গ্রহণ করতে পারবেন। ১০৯ ধারার বিধান অনুযায়ী ভবঘুরে ও সন্দেহভাজন ব্যক্তির কাছ থেকে মুচলেকা নিতে পারবেন। ১১০ ও ১২৬ ধারায় অভ্যাসগত অপরাধীর কাছ থেকে জামিনদারসহ বা জামিনদার ছাড়াও শান্তিরক্ষায় মুচলেকা নিতে এবং প্রয়োজন হলে মুচলেকা বাতিল করতে পারবেন।
বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গের আদেশ:
ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৭ ধারার অধীনে পাঁচজন বা তার বেশি ব্যক্তির বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গের আদেশ দিতে পারবেন। আদেশ অমান্য করলে ১২৮ ধারার অধীনে বল প্রয়োগের নির্দেশ দিতে পারেন। ১৩০ ধারার বিধান অনুযায়ী সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের গ্রেফতার করতে পারবেন।
অপরাধ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আদেশ:
১৩৩ ধারার অধীনে পথ, নদী, খাল বা প্রকাশ্য স্থানে বেআইনি বাঁধা অপসারণ, ব্যবসা বা সংরক্ষিত এলাকায় মানুষের আরাম বিঘ্নিত করা, গৃহ বা তাবু থেকে ক্ষতিকর বস্তু অপসারণ, জলাশয় ঘেরাও, বিপজ্জনক প্রাণী ধ্বংস বা আটক ইত্যাদি আদেশ দিতে পারবেন। ১৪২ ধারার বিধান অনুযায়ী ক্ষতি এড়ানোর জন্য কোনো নির্দিষ্ট স্থানে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারবেন।