নির্বাচনী সংস্কারের পরই ঘোষণা হবে ভোটের রোডম্যাপ
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে এবং এটি আর থামবে না। তবে নির্বাচন সফলভাবে আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে এসব সংস্কার প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে নেওয়া হবে।
রোববার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. ইউনূস বলেন, “আমরা এমন একটি নির্বাচন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আদর্শ হবে। এটি রাজনৈতিক সংকট থেকে দেশকে মুক্তি দিতে সক্ষম। তবে এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের আরও কিছু সময় প্রয়োজন। নির্বাচনী সংস্কারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার পরই খুব দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে, এটি আর থামবে না। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছাতে হলে আমাদের রেললাইন ঠিকঠাক বসিয়ে নিতে হবে। এই প্রক্রিয়া সফল হবে তখনই, যখন রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাবে।”
প্রধান উপদেষ্টা জানান, নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। খুব শিগগিরই নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে, যা ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুরু করবে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগের ব্যবস্থাও নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
ড. ইউনূস জানান, অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো নির্বাচনী সংস্কার কমিশন। এই কমিশন নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশমালা প্রস্তুত করছে। তিনি জনগণকে উৎসাহিত করে বলেন, “আপনারা এসব কমিশনের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে গিয়ে মতামত জানান। জাতি হিসেবে আমাদের তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ তৈরি করতে সংস্কার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করুন।”
তিনি আরও বলেন, “সংবিধান সংস্কার কমিশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ কমিশনের সুপারিশমালার ভিত্তিতে নির্বাচনী আইন সংশোধন করা হবে। পাশাপাশি ভোটার তালিকা হালনাগাদ প্রক্রিয়াও চলমান থাকবে। রাজনৈতিক দলগুলো এবং জনগণের মতামতের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
ড. ইউনূস তার ভাষণে বলেন, “সংস্কার জাতির দীর্ঘমেয়াদি জীবনীশক্তি। এটি জাতিকে নতুন পৃথিবী গড়ার সুযোগ দেবে। তাই শুধু নির্বাচন নয়, সংস্কার প্রক্রিয়ার গুরুত্বও অনুধাবন করুন। নির্বাচনের কথা বলার পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রে সংস্কারের বিষয়ে কথা বলুন।”
তিনি বলেন, “নির্বাচনের সময়সূচি সবার মনে প্রশ্ন জাগালেও এটি নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারের অগ্রগতির ওপর। আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করেই অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা হবে। তবে এজন্য আপনাদের ধৈর্য ধারণ করতে হবে।”