মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিয়ে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে ড. ইউনূস রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তিনটি প্রস্তাব তুলে ধরেন। প্রস্তাবগুলো হলো:
১. জাতিসংঘের মহাসচিব রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে দ্রুত একটি সম্মেলন আয়োজন করতে পারেন, যেখানে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। সম্মেলনে সংকটের সামগ্রিক চিত্র বিশ্লেষণ করে নতুন ও কার্যকর সমাধানের পথে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া উচিত।
২. বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের যৌথভাবে পরিচালিত জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। বর্তমান অর্থায়নের পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে এ প্রক্রিয়ায় নতুনভাবে তহবিল সংগ্রহের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োজন।
৩. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। ড. ইউনূস বলেন, তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটর করিম খানের কাছ থেকে এই বিষয়ে অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। মিয়ানমারের দীর্ঘমেয়াদী শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য এই অপরাধের বিচার অপরিহার্য।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত জুলি বিশপ, ইউএনএইচসিআর হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
ড. ইউনূস বলেন, রোহিঙ্গাদের মর্যাদা, নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের পূর্ণ অঙ্গীকার রয়েছে এবং সংকটের একটি রাজনৈতিক সমাধানের জন্য তারা অপেক্ষা করছেন।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত প্রায় ১.২ মিলিয়ন রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে এবং প্রতি বছর প্রায় ৩২ হাজার নবজাতক শিশু শরণার্থী শিবিরের জনসংখ্যায় যুক্ত হচ্ছে। সাম্প্রতিক দুই মাসে আরও ২০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি বড় অর্থনৈতিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং বর্তমানে দেশটির ধৈর্যসীমা ছাড়িয়ে গেছে।
ড. ইউনূস স্পষ্টভাবে বলেন, যতই বাংলাদেশ মানবিক সহায়তায় নিয়োজিত থাকুক না কেন, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়াই এই সংকটের একমাত্র স্থায়ী সমাধান।