জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আন্দোলন নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। সোমবার (১২ মে) দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এনসিপি জানায়, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিকে তারা যৌক্তিক মনে করলেও, জনগণের ইতিহাসবিরোধী কোনো বক্তব্য বা দলীয় স্লোগানের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
দলটির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনে দলটির বিচার দাবি, পাশাপাশি জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র জারির আহ্বানে যে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন গড়ে উঠেছে, তাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তি ও সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিলেও—একটি পক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কিছু স্লোগান দিয়েছে যা বাংলাদেশের ঐতিহাসিক চেতনার পরিপন্থী। এই আচরণ সাম্প্রতিক আন্দোলনে জাতীয় ঐক্য গঠনের সুযোগকে বাধাগ্রস্ত করেছে বলে মনে করে এনসিপি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এনসিপির কোনো সদস্য এই আন্দোলনে দলীয় বা ইতিহাসবিরোধী স্লোগান দেয়নি। যারা এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছে, দায়ভার তাদেরই নিতে হবে। এনসিপিকে এসবের সঙ্গে যুক্ত করা অনাকাঙ্ক্ষিত ও ভিত্তিহীন। দলটির মতে, তাদের সদস্যদের বক্তব্য ও স্লোগানে বারবার উঠে এসেছে এই অঞ্চলের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়—১৯৪৭, ১৯৭১ এবং ২০২৪। তারা আরও উল্লেখ করে, জাতীয় সংগীত পরিবেশনের সময় একটি পক্ষ আপত্তি জানালেও আন্দোলনকারীরা সাহসিকতার সঙ্গে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেছে।
এনসিপির বক্তব্য অনুযায়ী, ১৯৪৭, ১৯৭১ এবং ২০২৪ সালের ঐতিহাসিক ঘটনাগুলোর সঠিক মূল্যায়ন ও সম্মানই বাংলাদেশে অর্থবহ রাজনীতির ভিত্তি। যারা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল বা যাদের বিরুদ্ধে গণহত্যায় সহায়তার অভিযোগ রয়েছে, তাদের উচিত নিজেদের অবস্থান স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা এবং ২০২৪-এর গণআকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যারা বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনামলে নিপীড়নের শিকার হয়ে ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে, তাদের ‘বাংলাদেশপন্থি’ অবস্থান বজায় রেখে নতুন বাংলাদেশের নির্মাণে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
এনসিপি মনে করে, অতীতের মতাদর্শ বা অবস্থান যদি বর্তমান রাজনৈতিক বিভাজনের উৎস হয়ে থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট দল বা গোষ্ঠীর দায়িত্ব হলো জনগণের সামনে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কার করে জাতীয় ঐক্য গড়ার পথে অগ্রসর হওয়া। মুজিববাদের রাজনৈতিক আদর্শকে পরাজিত করতে হলে জনগণের বৃহত্তর ঐক্যই হবে প্রধান অস্ত্র—এমনটাই মনে করে এনসিপি। তারা ভবিষ্যতের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে সব পক্ষকে দায়িত্বশীল ও দূরদর্শী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানায়।