শিশুরা স্কুলে ভর্তি হবে ৪ বছর বয়সে
প্রকাশিত হয়েছে : ২:১৭:০৫,অপরাহ্ন ২৬ জুন ২০২০ | সংবাদটি ৩২১ বার পঠিত
ঊষারবাণী ডেস্ক : বর্তমানে শিশুরা স্কুলে ভর্তি হয় ৫ বছর বয়সে। অভিভাবকরা তাদের সন্তান ‘ছোট ওয়ান’ বা কেজি ক্লাসে ভর্তি করেন। কিন্তু বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী এরও আগে স্কুলে যায়। কোথাও প্লে-স্তর থেকে আবার কোথাও নার্সারি থেকে শিক্ষাজীবন শুরু হয়। এতে প্রথম শ্রেণিতে ওঠার আগেই চলে যায় তিন বছর। পাশাপাশি তিন বছর বয়সে ভর্তি করায় শিশুদের ওপর সৃষ্টি হয় মানসিক চাপ। এই চাপ থেকে মুক্তি দিতে সরকারি বিদ্যালয়েই প্রথম শ্রেণির আগে দুই বছর মেয়াদি শিক্ষা চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘প্রাক-প্রাথমিক’ শিক্ষা। চার বছর বয়সে ভর্তি হবে ছাত্রছাত্রীরা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন প্রস্তাব বৃহস্পতিবার অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম-আল-হোসেন যুগান্তরকে বলেন, প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। খুব শিগগিরই এ সংক্রান্ত সরকারি আদেশ জারি করা হবে। তিনি বলেন, এখন আমরা পাঠ্য উপকরণ তৈরির কাজ করব। ২০২১ সালেই স্কুলে এ স্তর চালু করা হবে। এই স্তরের জন্য শিক্ষক নিয়োগ এবং অবকাঠামোও তৈরি করা হবে।
১৬ জুন প্রধামন্ত্রীর কাছে পাঠানো প্রস্তাবে বলা হয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক স্তর ৫ বছরের বেশি বয়সের শিশুদের জন্য ১ বছর মেয়াদি শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে। এ স্তরে অর্জিত সাফল্য ও অভিজ্ঞতা অর্জনে ৪ বছর প্লাস বয়সের শিশুদের জন্য ২ বছর মেয়াদি করা যেতে পারে।
এতে আরও বলা হয়, বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০১৯ জরিপে দেখা যায়, প্রাথমিক স্তরে ২০১০ সালে ঝরে পড়ার হার ছিল ৩১ দশকি ৮ শতাংশ আর ২০১৯ সালে তা ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ হয়েছে। কাজেই প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার হ্রাস পাওয়ার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। বিদ্যালয়ে এ স্তরটি চালুর পর শিক্ষার্থী ভর্তি হার বৃদ্ধি, উপস্থিতি ও পাসের হার বেড়ে গেছে। দেশে এ স্তরটি ২ বছর মেয়াদি না হওয়ায় শহর ও গ্রামের মধ্যে বেসরকারি উদ্যোগে কিন্টারগার্টেন স্কুলের প্রসার ঘটছে, এতে অসম প্রতিযোগিতা ও বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, শিক্ষার ব্যয় বাড়ছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় ওঠে এসেছে।
প্রস্তাবে এটি বাস্তবায়নে পাঁচটি পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- প্রাক-প্রাথমিক স্তর ২ বছর মেয়াদি কার্যকর করতে একটি পরিকল্পনা তৈরি, ২ বছর মেয়াদি এ স্তরের জন্য একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের মাধ্যমে শিক্ষাক্রম প্রণয়ন এবং শিখন সামগ্রী উন্নয়ন করা, শিশুর বিকাশ ও যত্নের সঙ্গে সম্পর্কিত নীতিনির্ধারণ, পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা, অবকাঠামোগত বিদ্যামান সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে প্রথম পর্যায়ে প্রতিটি ক্লাস্টারে ১টি করে মোট ২ হাজার ৫৮৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২ বছর মেয়াদে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা এবং কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিকের সহায়তায় শিশুদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরিচর্যার বিষয়টি নিশ্চিত করা।
এ জন্য পরবর্তী ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২ বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক স্তর চালু করা হবে। প্রয়েজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ করা ও তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। শিশুদের অধিকতর যত্ন প্রয়োজনে একজন করে স্কুলে আয়া নিয়োগ দেয়া হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, প্রাক-প্রাথমিক স্তরের ক্লাসরুম উপযোগী করে তুলতে সারা দেশে নতুন করে আরও ৩০ হাজার ‘ডেডিকেটেড ক্লাসরুম’ বা ‘শিশু উপযোগী শ্রেণি কক্ষ’ নির্মাণ করা হবে। প্রাক-প্রাথমিকের ২৬ হাজার বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে।