কুলাউড়ায় গৃহবধুকে নির্যাতনকারী সেই শশুড় ও স্বামী অবশেষে শ্রীঘরে
প্রকাশিত হয়েছে : ১:১৩:৫৭,অপরাহ্ন ১৯ এপ্রিল ২০২৩ | সংবাদটি ১৫১ বার পঠিত
রেহানা আক্তার, কুলাউড়া : মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার পৃথ্বিমপাশা ইউনিয়নে রুজিনা বেগম (২৫) নামে এক গৃহবধূকে শশুর ও স্বামী কর্তৃক অমানবিক নির্য াতনের ঘটনা ঘটেছে।। সোমবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ভাইরাল হওয়া ওই ঘটনার ২ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে এমন অমানবিক নির্যাতনের বিষয়টি দেখা গেছে। ঘটনাস্থল বাড়ির ভিতর থেকে শশুড় কতৃক পুত্রবধুকে রাস্তা দিয়ে প্রকাশ্যে টেনে হিচড়ে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি গৃহবধূর তিনবছরের শিশুপুত্রের চোখের সামনেই ঘটেছে বলে জানা গেছে।
সোমবার (১৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায় (ইফতারের পূর্বে) উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশ গৃহবধূর স্বামী আব্দুছ সালামকে মঙ্গলবার সকালে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে।তখন নির্য াতনকারী শশুড় পলাতক ছিল। পরে ওইদিন সন্ধ্যায় কুলাউড়া থানার এস আই হারুনুর রশীদ ও এএসআই তাজুল ইসলাম মৌলভীবাজারে অভিযান চালিয়ে গৃহবধূর শশুড় শফিক মিয়াকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, একটি বাড়ির (জোছনা বেগমের বাড়ি) ভিতর থেকে টেনে হিচড়ে গূহবধূ রুজিনাকে রাস্তায় নিয়ে যাচ্ছেন শশুর শফিক মিয়া। সাথে রয়েছেন তাঁর শাশুড়ী জরিদা বেগম, শিশুপুত্র মাহি, তাঁর স্বামী সালামসহ একাধিক লোকজন। এসময় রুজিনার আর্তচিৎকার করলেও কেউ তাঁকে শশুরের হাত থেকে উদ্ধারের জন্য চেষ্টা করেননি। শিশুপুত্র মাহি চোখের সামনেই মায়ের প্রতি এমন অমানবিক নির্যাতন দেখে কান্না শুরু করে। এভাবেই গৃহবধূকে রাস্তা দিয়ে টেনে হিচড়ে শশুর বাড়ীর বাহিরে নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার রুজিনার ভাই বাবুল মিয়া বাদি হয়ে বোনের শশুর শফিক মিয়া (৬৫), ভগ্নিপতি আব্দুছ সালাম (৩২) ও দেবর রুমান মিয়া (২৮) কে অভিযুক্ত করে থানায় একটি মামলা (মামলা নং-২০) দায়ের করেন।
জানা যায়, গত ১৬ এপ্রিল রাতেও অনুরুপভাবে যৌতুকের দাবিতে ও শরবতের প্যাকেট ছেড়ার অজুহাতে রুজিনাকে মারধর করেন সালাম ও দেবর রুমান। পরদিন বিকেলে স্বামী সালাম ও শশুড় বাড়ির লোকজন ১ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে আবারো রোজিনাকে নির্যাতন শুরু করেন। রুজিনা ওই সময় আত্মরক্ষার্থে পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী জোস্না বেগমের বাড়িতে আশ্রয় নেন। ইফতারের আগ মুহূর্তে রুজিনার শশুড় শফিক মিয়া ও স্বামী সালামসহ শশুড় বাড়ির লোকজন জোছনা বেগমের বাড়িতে গিয়ে জোরপূর্বক তাঁকে (রুজিনাকে) ঘর থেকে বের করেন। এ সময় শফিক মিয়া পুত্রবধূ রুজিনাকে নির্যাতন করে তাদের বাড়িতে নিয়ে যান। পরে রাতে পুলিশ গিয়ে রুজিনাকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।
রুজিনার ভাই বাবুল মিয়া বলেন, সোমবার যৌতুকের কারণে শশুড় শফিকসহ সবাই তাকে নির্যাতন শুরু করলে আমার বোন আত্মরক্ষার্থে জোছনা বেগমের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকে বোনের শশুড় শফিক প্রকাশ্যে অমানবিক নির্যাতন করে ও রাস্তা দিয়ে টেনে হিচড়ে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়। এসময় তাদের পরিবারের সবাই সাথে ছিলো। পরে তাদের প্রতিবেশী একজন আমার মোবাইলে ফোন করে ঘটনাটি জানান।
কুলাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রতন দেবনাথ বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় খবর পেয়ে এসআই হারুনুর রশীদ শশুরবাড়ি থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। এ ঘটনায় গৃহবধুর স্বামী সালামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শশুরকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মৌলভীবাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেবর পলাতক রয়েছেন।