সত্যের সন্ধানে পদার্থ বিজ্ঞান
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:১০:৫৬,অপরাহ্ন ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | সংবাদটি ২১ বার পঠিত
আনোয়ার হোসেন : এমন কিছু মজার ঘটনা আছে যা আমাদের সত্য বলে মেনে নিতে কষ্ট হলে ও ব্যাপারগুলোআসলেই পদার্থবিদ্যার সাহায্যে সত্য বলে প্রমান করা যায়।
১। টুইন প্যারাডক্সঃ এক জোড়া যমজের কথা ভাবা যাক। অনুমান করা হোক, একজন থাকল একটি পাহাড়ের চূড়ায় আর আন্যজন রইল সমুদ্রপৃষ্টের সমতলে। প্রথম জনের বয়স দ্বিতীয় জনের তুলনায় তাড়াতাড়ি বাড়বে। সুতরাং তাদের যদি আবার দেখা হয় তাহলে একজনকে আর এক জনের চাইতে বয়স্ক বলে মনে হবে। এক্ষেত্রে বয়সের পার্থক্যটা হবে অতি সামান্য কিন্তু পার্থক্যটা বেশি হবে যদি তাদের ভিতর একজন মহাকাশ যানে চড়ে আলোর বেগের কাছাকাছি বেগে ভ্রমন করতে বের হয়। যখন সে ফিরে আসবে তখন সে পৃথিবীতে যে ছিল তাঁরতুলনায় অনেক বেশী তরুন থাকবে। এই ব্যাপারটাকে বলা হয় যমজ সম্পর্কীয় স্ববিরোধ বা টুইন প্যারাডক্স। কিন্তু এটা শুধু মাত্র তখনই আপনার কাছে অসম্ভব বলে মনে হবে যখন আপনি মনে করবেন সময় স্থির। কিন্তু আপেক্ষিক তত্তে পরম কালের কোন অস্তিত্ব নেই তার বদলে রয়েছে প্রতিটি ব্যক্তির কালের নিজস্ব যাপন। সেটা নির্ভর করে তার অবস্থানেরউপরে এবং সে কি ভাবে চলমান তার উপর।
২। এন্টিম্যাটারের বিড়ম্বনাঃ বলা হয়ে থাকে মহাবিশ্ব সৃষ্টির সময় সম পরিমান ম্যাটার এবং এন্টিম্যাটারের সৃষ্টি হয়েছিল । ম্যাটারগুলোর বিবর্তনেই সৃষ্টি হয়েছি আমরা এবং আমাদের চারপাশের জগৎ তা হলে এন্টিম্যাটার গুলো গেল কই? এটা নিয়ে অনেক থিউরি আছে। সে যাই হোক, ধরা যায় এন্টিম্যাটারগুলো ও মহাবিশ্বের কোথাও রয়েছে এবং একই ভাবে বিবর্তনের ফলে সৃষ্টি হয়েছে এন্টিম্যাটার জগৎ। ধরুন আপনার নাম রফিক। হয়ত সেই জগতেও রয়েছে অবিকল আপনারই মতো এন্টিম্যাটারের তৈরি রফিক এন্টিরফিক। ধরা যাক সে কোন ভাবে চলে এল আমাদের এই জগতে এবং দেখা হল আপনারই সাথে। আপনি আনন্দিত হয়ে এগিয়ে গেলেন ভাবলেন কোলাকুলিটা সেরে ফেলি। কিন্তু যেই তাকে জড়িয়ে ধরলেন পরক্ষনেই ভ্যানিশ!
আপনারা পরিণত হলেন এক ঝলক আলোকে। পদার্থবিদ্যা তাই বলে। কাজেই সাবধান, হুবহু নিজের মত কাউকে দেখলে আগে জেনে নেবেন সে এন্টিম্যাটার জগত থেকে এসেছে কিনা।
৩। মাধ্যাকর্ষণ বাচার মাধ্যমঃ পৃথিবীর টান তথা মাধ্যাকর্ষণ আছে বলেই আপনার ওজন আছে। এই রহস্যময় বলের কারণে পৃথিবীর বুকে ঘর বেধে বসবাস করা যায়। নইলে বিষুব রেখা বরাবর প্রতি ঘন্টায় এক হাজার মাইল বেগে ঘুরতে থাকা এই গ্রহের মাঝ থেকে আমরা ছিটকে পড়তাম অসীম মহাশূন্যে। এই প্রাকৃতিক বলই ধরে রেখেছে বায়ুমন্ডল যাতে আমরা বুক ভরে
শ্বাস নিতে পারি। শুধু তাই নয় এরই টানে নেমে আসে বৃষ্টি, বয়ে চলে নদী-মেঘ সাগরের চিরন্তন জলচক্র যার উপর পৃথিবীর সকল প্রাণী ও উদ্ভিদ নির্ভর করে আছে।
০৪। মৃত সাগরে মানুষ ভাসেঃ পানিতে আপনি ডুব দেওয়ার চেষ্টা করছেন কিন্তু ডুবতে পারছেন না। সাগরের পানিতে পিঠ দিয়ে হাত পা ছাড়িয়ে শুয়ে থাকতে পারছেন কোন কষ্ট হচ্ছে না। কি অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে? অবিশ্বাস হলেও এটি সত্যি জর্ডানে মৃত সাগর বা ডেড সিতে। সাধারণ সাগরের পানিতে লবনের পরিমান এক বা দুই পার্সেন্ট কিন্তু মৃত সাগরে এই লবনের পরিমান ২৭ পার্সেন্ট। মানুষের ঘনত্ব এখানকার পানির ঘনত্ব অপেক্ষা কম এমন কি সাগরের উপরিভাগ থেকে যতই নিচে যাওয়া যায় লবনের পরিমান ততই বাড়তে থাকে। প্লবতার সূত্রানুসারে তাই এই সাগরে মানুষ ভাসে। ডুব দিয়ে গোসল করা এক কষ্টকর ব্যাপার।
৫। ব্রিজের উপর মার্চ করে চলা নিষেধঃ একটি ব্রিজের উপর দিয়ে একদল সৈন্য মার্চ করে এগিয়ে গেলে ব্রিজটি ভেঙ্গে যেতে পারে। অবাস্তব বলে মনে হলেও এটাই সত্যি এবং এমন একটি ঘটনা ঘটেছে আমেরিকার ওয়াসিংটন। যখন ব্রিজটি ভেঙ্গে যায় তখন এর বয়স হয়েছিল মাত্র চারমাস। কারণ অনুসন্ধান করে জানা গেল সৈন্যদের মার্চ করার ফলে যে কম্পন (ফ্রিকুয়েন্সি ) সৃষ্টি হয়েছিল তা ব্রিজটির নিজস্ব কম্পাংকের সমান ফলে উৎপন্ন হয়েছিল অনুনাদ বা রেজোন্যান্স। এই অনুনাদের ফলে যে বিরাট কম্পনের সৃষ্টি হয়েছিল তাতেই ব্রিজটিভেঙ্গে যায়। এই কারনেই ব্রিজের উপর মার্চ করে চলা নিষেধ।
৬। একটা আস্ত বিশাল জাহাজকে মাত্র কয়েক বালতি পানির মাঝে ভাসিয়ে রাখা সম্ভবঃ আস্ত বিশাল ১টি জাহাজকে কয়েক বালতি পানিতে ভাসিয়ে রাখতে হলে, পানির ঘনত্ব পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি করতে হবে। তবে বিশাল জাহাজটির সমান আকৃতির কোনো পাত্রে কয়েক বালতি পানি ঢাললে তাতে জাহাজটি ভাসবে।
৭। উত্তল লেন্স দিয়ে সূর্যের আলোতে এক টুকরা কাগজে আগুন ধরানো সম্ভবঃ উত্তল লেন্স প্রধান অক্ষের সমান্তরাল একগুচ্ছ রশ্মিকে প্রধান ফোকাসে একত্রিত করে। তাই সূর্য থেকে আগত আলোকরশ্মি লেন্সের উপর পড়লে লেন্স ঐ আলোকরশ্মি এক টুকরা কাগজের উপর কেন্দ্রীভূত করে আলোক শক্তিকে তাপ শক্তিকে রূপান্তরিত করে। ফলে আগুন ধরে যায়।
লেখক : আনোয়ার হোসেন, প্রভাষক – পদার্থবিজ্ঞান, মোহাম্মদ আব্দুল গণি আদর্শ কলেজ, কুলাউড়া।