বিএনপির স্থায়ী কমিটির শূন্য পদ পূরণের উদ্যোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:৪২:০৫,অপরাহ্ন ২২ আগস্ট ২০২০ | সংবাদটি ৩৮১ বার পঠিত
ঊষারবাণী ডেস্ক : বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল শিগগিরই হচ্ছে না। তবে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির চারটি শূন্য পদ পূরণের উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে সম্মতিও দিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। পরীক্ষিত ও ত্যাগী প্রবীণ নেতার পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত কম বয়সী নেতাদেরও স্থায়ী কমিটিতে স্থান দিতে চায় দলটি। একই সঙ্গে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ, দলের ভাইস-চেয়ারম্যানসহ নির্বাহী কমিটির ফাঁকা পদও পূরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বিএনপির একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, গত বছরের মার্চে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কাউন্সিলের উদ্যোগ নেয়নি দলটি। এর মধ্যে আবার মার্চ থেকে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়েছে। সবকিছু মিলে শিগগিরই জাতীয় কাউন্সিল হচ্ছে না বলে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চাইলে স্থায়ী কমিটিতে শূন্য পদ পূরণ করতে পারেন। দলে আরও বেশ কিছু শূন্য পদ রয়েছে। সেগুলোও পূরণ করতে পারেন। এ নিয়ে আমি কোনো আলোচনা শুনিনি।
তবে বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা যুগান্তরকে বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির শূন্য পদ পূরণের বিষয়ে ইতোমধ্যে হাইকমান্ড কাজ শুরু করেছে। শিগগিরই এ পদে নিয়োগ দেয়া হবে। দুর্দিনে যারা বিএনপির, বিশেষ করে জিয়া পরিবারের পাশে ছিলেন এবং নানা প্রতিকূল পরিবেশেও দল ছাড়েননি- এমন পরীক্ষিত নেতার মাধ্যমে স্থায়ী কমিটির শূন্য পদ পূরণ করা হবে।
সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল করেছিল বিএনপি। দলটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় নির্বাহী কমিটি তিন বছরের জন্য নির্বাচিত হবে এবং পরবর্তী জাতীয় নির্বাহী কমিটি দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত এই কমিটিই দায়িত্ব পালন করবে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণার সময় ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটির দুটি পদ ফাঁকা ছিল। বাকি ১৭ সদস্যের মধ্যে তরিকুল ইসলাম, আ স ম হান্নান শাহ ও এম কে আনোয়ার মারা গেছেন। এ ছাড়া রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান। এর মধ্যে গত বছরের জুনে বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে স্থায়ী কমিটির শূন্য পদে নিয়োগ দেয়া হয়। ফলে এখনও চারটি পদ ফাঁকা রয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, স্থায়ী কমিটির শূন্য পদে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ, বরকতউল্লাহ বুলু, মো. শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের নাম আলোচনায় রয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্তত দু’জন অপেক্ষাকৃত কম বয়সী নেতাকে অন্তর্ভুক্ত করার সম্ভাবনা রয়েছে।
উপদেষ্টা-ভাইস চেয়ারম্যানসহ নির্বাহী কমিটির শূন্য পদও পূরণ হচ্ছে : শুধু স্থায়ী কমিটি নয় দলের চেয়াপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিল, জাতীয় নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তা ও সদস্যের অন্তত ৪০টি পদ শূন্য রয়েছে। এক মাসের মধ্যে শূন্য পদে নতুনদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, দলটির ৭৩ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটির ফজলুর রহমান পটল, বেগম সরোয়ারি রহমান, হারুন-অর রশীদ খান মুন্নু, আখতার হামিদ সিদ্দিকী, জাফরুল হাসান, নূরুল হুদা, কবির মুরাদ, সঞ্জীব চৌধুরী, ওয়াহিদুল ইসলাম ও এমএ হক মারা গেছেন। এছাড়া নির্বাহী কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আবু সাইদ খোকন, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক বদরুজ্জামান খসরু, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ মোজাফফর হোসেন, কুমিল্লা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আউয়াল খান মারা গেছেন।
নির্বাহী কমিটির সদস্যদের মধ্যে মারা গেছেন- স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, আহসান উল্লাহ হাসান, আবুল কাশেম চৌধুরী, এএফএম ইকবাল, মোজাহার হোসেন, মোজাহার আলী প্রধান, কামরুদ্দিন ইয়াহিয়া খান মজলিশ, সরোয়ার আজম খান, কাজী আনোয়ার হোসেন, শফিকুর রহমান ভূঁইয়া, চমন আরা, এমএম মতিন, এমএ মজিদ, মিয়া মোহাম্মদ সেলিম, কাজী সেকান্দার আলী ডালিম প্রমুখ।
নির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ ছাত্র ও সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক পদ দুটি কমিটি ঘোষণার পরই ফাঁকা। নির্বাহী কমিটির সাতটি আন্তর্জাতিক সম্পাদকের মধ্যে দুটি ফাঁকা। সহ-যুববিষয়ক সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হলেও যুববিষয়ক সম্পাদকের পদটি এখনও ফাঁকা। এছাড়া বিএনপি থেকে পদত্যাগ করা অন্য নেতারা হলেন- কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সিনহা, সহ-সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মনির খান, সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক শাহাবুদ্দিন আহমেদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আলী আসগর লবী ও ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল। পদোন্নতি হওয়া চার নেতার মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান থেকে স্থায়ী কমিটিতে গেছেন সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
নির্বাহী কমিটির সদস্য থেকে রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন সাবেক ছাত্র ও যুবনেতা আবদুল খালেক। এছাড়া পদোন্নতি দিয়ে সহ-ব্যাংকিং বিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে খন্দকার মোক্তাদির হোসেন এবং সহ-তথ্য ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে রিয়াজউদ্দিন আহমেদ নসুকে।