বড়লেখায় কুখ্যাত গাছচুর ফজলুর বাড়ী হতে চুরিকৃত গাছ উদ্ধার; এসিল্যান্ডের রহস্যজনক ভূমিকা !
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৩৮:০৬,অপরাহ্ন ২৭ অক্টোবর ২০২০ | সংবাদটি ১০৭৪ বার পঠিত
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় দক্ষিণভাগ এলাকার বহুল আলোচিত দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও পুলিশের খাতায় ও আদালতে কালো তালিকাভুক্ত আসামী ফজলুর রহমান অরফে ফজলুর বিরুদ্ধে সরকারী কবরস্থান হতে গাছ চুরি ও চুরিকৃত গাছের বিশাল বিশাল খন্ড প্রশাসন কর্তৃক উদ্ধার করার খবর পাওয়া গেছে।
গত ১০ অক্টোবর সকাল ১১টার সময় উপজেলার পশ্চিম দক্ষিণভাগ এলাকার মৃত ওমর উদ্দিনের ছেলে ফজলুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যগণ সহ সংগীয় আরো ১৫/২০জন গাছচুর মিলে গ্রামের সরকারী কবরস্থান হতে অনেক পুরোনো ও বিশাল আকৃতির বটগাছ টি কেটে নিয়ে যায়। কবর স্থানের কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান বটল ও সোহেল মিয়া গঠনাস্থলে এসে বাধা প্রদান করলেও চুরগণ কোন বাধার তোয়াক্কা না করে গাছ কেটে নিয়ে যান। উপরন্তু বাধাদান কারগণ চুরদের দা,কুড়াল,সাবল ইত্যাদি দ্বারা প্রাণে হত্যার চেষ্ঠার স্বীকার হোন।
এ বিষয়ে এলাকাবাসীর পক্ষে সাইফুর রহমান বটল, বশির আহমদ, আব্দুস সোবহান, আব্দুল গণি, সোহেল মিয়া, আজিম উদ্দিন, অদুদমিয়া, আং আহাদ, হাসান মিয়া, মাহমুদুল হাসান ও ফয়ছল আহমদ বাদী হয়ে উপজেলা নির্বাহি অফিসার বড়লেখা, সহকারী কমিশনার ভ’মি বড়লেখা বরাবরে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এছাড়াও ঘটনার দিন পশ্চিম দক্ষিণভাগ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের কবর স্থানের সহ-সেক্রেটারী সাইফুর রহমান বটল বাদি হয়ে বড়লেখা থানায় উক্ত গাছ চুরি বিষয়ে ফজলুর রহমান ফজলুকে আসামী করে একটি জিডি এন্ট্রি করেন। জিডি নং ৪৪৬ (তারিখ : ১০/১০/২০২০ইং)
সাইফুর রহমান বটলের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বড়লেখা উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি নুসরাত লায়লা নীরা এর নেতৃত্বে বড়লেখা থানার পুলিশ ও দক্ষিণভাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন, তহশিলদার নুরুল ইসলাম এবং বিভিন্ন পত্রিকার গণমাধ্যম কর্মীগণ সহ গত ১২/১০/২০২০ তারিখে সন্ধা ৭.০০টার সময় এক ঝটিকা ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হয়। অভিযানে এলাকার দুর্ধর্ষ গাছ চুর ফজলুর রহমানের বাড়ীর ভিতর হতে চুরিকৃত গাছের ৯ খন্ড(৯ খাড়ি) গাছ এবং পার্শবর্তী স’মিল হতে আরো ২ খন্ড(খাড়ি) গাছ উদ্ধার ও জব্দ করা হয়। জব্দকৃত গাছ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আজির উদ্দিনের জিম্মায় হস্তান্তর করেন এসিল্যান্ড নুসরাত লায়লা। অভিযান কালে গাছ চুর ফজলুর ভাই জানান, গাছ গৃুলো ফজলু তার মায়ের পূর্বের স্বামীর সন্তান নজরুলের কাছ থেকে ক্রয় করেছেন। অবশ্য নজরুল পলাতক থাকায় বিষয়টি প্রমান করা সম্ভব হয়নি। তবে স্থানীয় গনমাধ্যম কর্মী আব্দুর রব নিজেকে কবরস্থান কমিটির সদস্য পরিচয় দিয়ে গাছ চুর ফজলুর পক্ষে ওকালতি করার চেষ্ঠা ও চুরিকৃত গাছ নিজ জিম্মায় নেয়ার চেষ্টা করলে অভিযোগের বাদী সাইফুর রহমান বটলের চ্যালেঞ্জের কারণে টিকতে পারেননি। পরেরদিন এসিল্যান্ডের কাছে জমাকৃত কমিটি রেজুলেশন মতে আব্দুর রব ফজলু নেতৃত্বাধীন ভূয়া কমিটির সদস্য বলে প্রমাণিত হয়।
অভিযোগ সমুহ ও জিডি এন্ট্রির বিবরণ ও এলাকাবাসী হতে জানা যায়, পশ্চিম দক্ষিণ ভাগ এলাকার ফজলুর রহমান পারিবারিক ভাবে গাছ চুরি ,মাদক ব্যবহার ও বিক্রয়, অবৈধ সুদের ব্যবসা সহ এলাকায় নানা ধরনের প্রতারনামূলক কাজের সাথে জড়িত। তাদের দ্বারা প্রতারিত বা ক্ষতির স্বীকার হয়নি এলাকায় এমন লোক খুব কমই পাওয়া যায়। ঘটনার দিন উপজেলার পশ্চিম দক্ষিভাগ জামে মসজিদের সরকারী কবরস্থানের পুরাতন বিশাল বট গাছটি চুরিকরে কেটে নিয়ে যেতে দেখে কবরস্থান কমিটির সহ-সেক্রেটারী সাইফুর রহমান বটল বাধাদিলে সন্ত্রাসী গণ তাদের হাতের দেশীয় গাছ কাটার অস্ত্রদিয়ে তাকে প্রাণে মারতে উদ্ধত হন। বটল প্রাণ নিয়ে দৌড় নিজেকে রক্ষা করেন। ইতিপূর্বেও উক্ত ফজলু উল্লেখিত কবরস্থান হতে প্রায় শতাধিক বড়-বড় গাছ কখনো জোর পূর্বক আবার কখনো চুরি করে নিয়ে গেছেন বলে এলাকাবাসী উল্লেখ করেন।
এছাড়াও কিছুদিন পূর্বে উক্ত ফজলুর রহমান ও তার সহযোগীরা স্থানীয় স্থানীয় এন.সি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামন হতে রেলওয়ের জায়গা হতে বিশাল আকৃতির অনেক মূল্যবান কয়টি গাছ রাতের আধারে চুরি করে নিয়ে যান। এ অভিযোগে ফজলুর রহমান ও তা সহযোগীদের বিরুদ্ধে রেলওয়ে পুলিশ বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেছেন যা চলমান রয়েছে।
সন্ত্রাসী ফজলুর রহমান ফজলুর বিরুদ্ধে গণমাধ্যম কর্মীকে হত্যা চেষ্ঠার অভিযোগে নির্বাহি ম্যাজিষ্ট্র্যাট আদালত মৌলভীবাজারে মামলা রয়েছে। গত ২২সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজার নির্বাহি ম্যাজিষ্ট্যাট আদালত মৌলভীবাজারে সাংবাদিক রাহেলা সিদ্দিকা উপরোক্ত আসামী বড়লেখা দক্ষিণভাগ এলাকার মৃত উমর আলীর ছেলে ফজলুর রহমান ফজলু ও হারিছ আলীর ছেলে জয়নাল মিয়াকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। এ ছাড়াও গত ১ সেপ্টেম্বর এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের প্রকাশ্য হুমকি দেয়ার অভিযোগে ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে বড়লেখা থানায় একটি জিডিএন্ট্রি করা হয়েছে। জিডি নং ৬৬৪।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দক্ষিণভাগ এলাকার বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট মুরব্বি জানান, ফজলুর বাড়ী হতে চুরিকৃত গাছ উদ্ধারের পরও প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন না করায় বা মামলা না দেয়ায় এলাকাবাসী বিশ্মিত হয়েছেন। এতে দুর্ধর্ষ গাছ চুর ও সন্ত্রাসী ফজলু আরো বেশী বেপোরয়া হয়ে উঠবে। উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা ও এসিল্যান্ডকে ইপিূর্বেও মোটা অংকের অর্থ দিয়ে অনেক বড় বড় অপকর্মকে ফজলু ধামাচাপা দিয়েছে। কবরস্থানের গাছ চুরির ঘটনায়ও একি কায়দায় সে প্রশাসনকে অর্থ দিয়ে ম্যানেজ করে নিয়েছে বলে এলাকাবাসী মনে করেন।
সহকারী কমিশনার ভূমি বড়লেখা নুসরাত লায়লা নীরা জানান, অভিযুক্ত ফজলুর রহমান ও তার সহযোগিদের চুড়ান্ত ভাবে সতর্ক করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এজাতীয় অপকর্মে জড়িত প্রমাািণত হলে ফজলুর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হবেনা।
দক্ষিনভাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন বলেন, ফজলু কর্তৃক চুরিকৃত গাছ এসিল্যান্ড ম্যাডাম আমার জিম্মায় প্রদান করেছেন। গাছগুলি বিধি মাফিক বনবিভাগের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে নিলামে বিক্রয় করা হয়েছে।
চুরের বাড়ী হতে গাছ উদ্ধারের পরও এসিল্যান্ড কর্তৃক মামলা না করার কারণ বিষয়ে প্রশ্ন করলে চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন বলেন,সেটি এসিল্যান্ডের এখতিয়ার। তবে মামলা করা বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল।
এ বিষয়ে মামলার বাদী সাইফুর রহমান বটল বলেন, বিবাদীগণ অত্যন্ত হিংস্র ও এলাকায় চুরি-সন্ত্রাসী সহ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। যেকোন সময় তাদের দ্বারা আমার জীবন বিপন্ন হতে পারে। সে প্রশাসনকে ঘোষ দিয়ে এতবড় জঘন্য অপকর্ম থেকেও পার পেয়ে গেল। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।