গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হলো বড়লেখার সেই প্রতারক মাদ্রাসা শিক্ষক কাওসার ও ১০ সহযোগীর বিরুদ্ধে
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৩৩:০৩,অপরাহ্ন ০৬ জানুয়ারি ২০২১ | সংবাদটি ১০৪৩ বার পঠিত
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের বড়লেখার দক্ষিণভাগের বহুল আলোচিত সেই প্রতারক মাদ্রাসা শিক্ষক কাওসার আহমদ ও তার সহযোগী ১১জন আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেছেন মৌলভীবাজার নির্বাহি ম্যজিষ্ট্র্যাট আদালতের বিচারক মৌসুমী আক্তার। বড়লেখা টিলাবাজার মোহাম্মদিয়া মাদ্রাসার মোহতামিম প্রতারক মাদ্রসা শিক্ষক কাওসার আহমদ সহ ও তার সহযোগিদের প্রতারণার ফাদে পড়ে সর্বস্ব হারানু সহজ সরল তাজউদ্দিন মৌলভীবাজার নির্বাহি ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে নিজের ও পরিবারের জানমালের নিরাপত্তা চেয়ে মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলা নং ১৭/২০২০।
বুধবার (০৬জানুয়ারী) ধার্য তারিখে মামলার শুনানী শেষে সকল আসামীর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় সকল আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন মামলার বিচারক বিজ্ঞ নির্বাহি ম্যাজিষ্ট্র্যাট মৌসুমী আক্তার।
গত ৬ আগষ্ট ২০১৯ তারিখে উপরোক্ত মামলা দায়ের করেন প্রতারণার স্বীকার প্রবাসী হাজী তাজ উদ্দিন। গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হওয়া আসামীগণ হলেন, টিলাবাজার মোহাম্মদিয়া মাদ্রাসার প্রতারক শিক্ষক কাওসার আহমদ, তার সুদের ব্যবসা ও সকল প্রতারনার সহযোগী আব্দুল খালিক, কাওসার মুল্লার ওস্তাদ ও অপরাধের অন্যতম সহযোগী আব্দুল কাদির মুল্লা, দক্ষিণভাগ এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ফজলুর রহমান, আব্দুস শহীদ মুক্তা, ওবায়দুল্লাহ, সামছুল হক, গিয়াস উদ্দিন, মুজিবুর রহমান জয়নাল, জাহেদুল ইসলাম ও কয়েছ মিয়া।
ইতোপূর্বে আসামীগণের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সমুহের জবাব দাখিল করেছিলেন আসামী পক্ষের আইনজীবি। কিন্তু আদালতের নিকট তা গ্রহনযোগ্য না হওয়ায় আসমীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়না জারি করেছেন আদালত।
এদিকে আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়াানা জারি হওয়ার সংবাদে বড়লেখার সর্বত্র আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন যাবত এলাকায় প্রতারক চক্রের গডফাদার কাওসার বহিনী কর্তৃক এলাকার শতশত লোক সর্বস্বান্ত হয়েছেন। কেউই তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেননি। এই প্রথম এই চক্রের শীর্ষ সন্ত্রসীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হওয়ায় এলাকাবাসী আনন্দে উদ্বেলিত এবং প্রকাশ্যে বেরিয়ে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করলো।
সরেজমিনে এলাকাবাসী হতে জানা যায়, প্রতারক কাওসার ও তার সন্ত্রাসী চক্রের প্রতারনা করে প্রবাসী সহজসরল তাজ উদ্দিন এর ৬ কোটি টাকারও অধিক সম্পদ লুটে নিয়েছেন। গত কিছুদিন যাবত দেশের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিকসহ স্থানীয় প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ায় প্রতারক শিক্ষক কাওসার আহমদ ও তার সহযোগী প্রতারক চক্র কর্তৃক সহজসরল হাজী তাজ উদ্দিনের সর্বস্ব হরনের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হতে থাকলে বিষয়টি সিলেট বিভাগ সহ দেশের সর্বত্র ভাইরাল হয়ে যায়। সাথে সাথে প্রতারক চক্রের শীর্ষ নেতা কাওসার মুল্লা, কাদির মুল্লা, আব্দুল খালিক,ফজলুর রহমান ও সামছুল হক সহ অপরাধ চক্রের নেতারা বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য বড়লেখা উপজেলার সর্বোচ্চ পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে সর্বত্র হন্য হয়ে ঘুরেও কোথাও কোন আশ্রয় না পেয়ে বেছে নিয়েছেন তার সেই চিরচেনা অপরাধী ও সন্ত্রাসী পথ। এরই মধ্যে গত ৪এপ্রিল ও ৩আগষ্ট পরপর দু’দফা কাওসার ও তার সন্ত্রাসী চক্র তাজউদ্দিনকে প্রাণে হত্যার চেষ্ঠা করেছেন। একমাত্র ভাগ্যের জোরে মানুষজন চলে আসায় তিনি প্রাণে বেঁচে গেছেন।
এলাকাবাসী হতে আরো জানান তাজ উদ্দিন নিজের জানমালের নিরাপত্তা চেয়ে মামলা দায়েরের খবর পেয়ে গত ২০ আগষ্ট কাওসার মুল্লার নেতৃত্বে টিলাবাজার মোহাম্মদিয়া মাদ্রাসায় সাধারণ সভা আহ্বান করে উক্ত সভা থেকে হাজী তাজউদ্দিন সহ তার পরিবারের সদস্যবৃন্দ এবং নাম উল্লেখ করে কয়েক জন গণমাধ্যম কর্মীকে গলা, হাত,পা কেটে প্রাণে হত্যার প্রকাশ্যে হুমকি প্রদান করা হয়েছে। আর হুমকি দাতাদের মধ্যে অন্যতম হলেন, কাওসার মুল্লার প্রতারনা,সুদ ব্যবসা সহ সকল কুকর্মের সার্বক্ষনিক সহযোগী,মাদক,নারী কেলেংকারী সহ নানা অপরাধে জড়িত এবং বড়লেখা এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী,মোস্ট ওয়ান্টেড আসামী হিসেবে পুলিশের খাতায় ও আদালতে যার নাম রয়েছে সেই ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী ফজলু মিয়া।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতারক কাওসার মুল্লা, তাজ উদ্দিনের মতো আরো অনেককে প্রতারিত করে সর্বস্ব হাতিয়ে নিচ্ছে। তার কর্মস্থল টিলাবাজার মাদ্রাসার প্রায় ৫০লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে, তাও তার সহকর্মীগণই এই অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। এ নিয়ে মাদ্রাসায় তুলপাড় চলছে।
টিলাবাজার মোহাম্মাদয়া মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির কয়েকজন সদস্য সভা থেকে তাজউদ্দিনের পরিবারকে প্রকাশ্যে প্রাণে হত্যার হুমকির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বেসরকারী স্কুল, কলেজ বা মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্ণিং বডিতে ৮ জন থেকে ১৩জনের বেশী লোক কমিটিতে থাকার সুযোগ নেই। অথচ মৌলানা কাওসার এলাকার জনসাধারণকে ধোকা দিয়ে বোকা বানিয়ে ৮০জন লোক দিয়ে একটি ভূয়া ম্যানেজিং কমিটি করেছেন। এর বাহিরে বিভিন্ন উপকমিটিও রয়েছে,যেমন কাওসার মুল্লার পক্ষে নানা মিথ্যা গুনকীর্তন ও ভুয়া কেরামতি প্রচারের জন্য কমিটি, সুদের ব্যবসা দেখাশোনা করার জন্য কমিটি,তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগকে প্রটেকশন দেয়ার জন্য কমিটি, অভিযোগকারীদের মারপিট করে দমনের জন্য ‘দুরমুছ’ কমিটি ইত্যাদি।
ভন্ড ও প্রতারক কাওসার মৌলানাকে বিশ্বাস করে সকল কিছু হারিয়ে পথে বসা প্রবাসী হাজী তাজ উদ্দিন বলেন, কাওসার ও তার পালিত সন্ত্রাসীরা আমাকে ও আমার পরিবারকে প্রাণ হত্যার প্রকাশ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাদের ভয়ে কেউ আমার সহায়তায় আসার সাহস পাচ্ছেনা, কারণ আমার শুভাকাঙ্খীদেরও প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আদালত কর্তৃক গ্রেফতারী পেরায়ানা জারি হওয়ার পরও আসামীগণ বিভিন্নরকম হুমকি প্রদান অব্যাহত রয়েছে।