বিরামহীন বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে আসা ঢলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার ছুবলে পড়েছে কুলাউড়া উপজেলার কয়েক হাজারো পরিবার। আশ্রয়হারা মানুষগুলো খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানিয়জলের সংকটে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মানুষের সাথে বসবাস করছে গবাদি পশুগুলো।
সিলেট বিভাগের বন্যার পানি, ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের নওয়াগাও, বেরকুড়ি, শাহামীর, খামাবুরা, বঢ়গাও ,শরীফপুর ও বালিদাড়া কাদিপুর ইউনিয়নের গুপ্তগ্রাম, মইন্তাম, রফিনগর, ছকাপন ও হাওর তীরের ভূকশিমইল ইউনিয়নের কাড়েরা, চিলারকান্দি, বড়দল, বাদে ভূকশিমইল,ভূকশিমইল, শসারকান্দি, কানেহাত, জাবদা, কুলাউড়া পৌরসভাসহ অনান্য গ্রামের সহস্রাধিক মানুষের বসত ঘরে বন্যার পানি ডুকে পড়েছে। এতে শংকটে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায় বন্যাকবলিত মানুষ জীবনমাল রক্ষায় আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে ছুটছেন। হাওর তীরের প্রায় সকল বসত ঘরে বন্যার পানি ডুকে পড়েছে। বন্ধ রয়েছে উপজেলার ৫৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষাদান কার্যক্রম।
উপজেলা পরিষদ ভবনের প্রধান সড়ক প্রায় ৬ ফিট পানিতে ডুবে থাকায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অফিসের কার্যক্রম চালানো কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে নৌকায় করে অফিসে যেতে দেখা যায় উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।এছাড়া হাসপাতালের প্রবেশ পথে সড়ক পানিতে ডুবে থাকার কারণে হাসপাতালের সেবাগ্রহীতাদের পড়তে হয়েছে ভোগান্তিতে। রিকশা ও নৌকায় করে চিকিৎসা নিতে দেখা যায় অনেককে।
প্রায় ২৭ কিলোমিটার সড়ক পানিতে ডুবে থাকায় কুলাউড়া শহরের সাথে অর্ধশতাধিক গ্রামের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে নৌকা দিয়ে গ্রামের মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে দেখা যায়।
ভূকশিমইল ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির জানান, ভূকশিমইলে গত কয়েকদিন থেকে বন্যার পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্লাবিত হয়েছে অসংখ্য বাড়িঘর। সড়কে পানি ওঠায় উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
ভাটেরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ এক্েমে নজরুল ইসলাম জানান, তার ইউনিয়নে বন্যকবলিত কয়েক হাজার মানুষকে তার পক্ষ হতে সাধ্যমতো ত্রাণসামগ্রি বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। তাছাড়া অনেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে ত্রান দিয়ে যাচ্ছেন।
বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে উপজেলার সাথে অর্ধশতাধিক গ্রামের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় বন্যার কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বিশুদ্ধ পানিয়জলের অভাব দেখা দিয়েছে তাছাড়া বাসা বাড়ীতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও কুলাউড়া শহরের আংশিক এলাকায় এখন থইথই পানি। আহমদাবাদ মাদ্রাসার রাস্তায় পানি আর পানি। কোথাও হাঁটু, কোথাও এর চেয়ে বেশি পানি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইফতেখার হোসেন ভুঁইয়া জানান, কুলাউড়া পৌরসভাসহ উপজেলার ৪২টি স্কুলে পানি প্রবেশ করায় শিক্ষাদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আনোয়ার জানান, ইয়াকুব-তাজুল মহিলা ডিগ্রি কলেজ, ভূকশিমইল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ ১৫টি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করায় শিক্ষাদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম সফি আহমদ সলমান জানান, তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে বন্যার্তদের মাঝে শুকনো খাবার ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় খাদ্যসংকট দেখা দিলে তাকে জানানোর জন্য তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শিমুল আলী জানান, বন্যাকবলিত কুলাউড়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এতে আশ্রয় নেওয়া সকলের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
ইউএনও এটিএম ফরহাদ চৌধুরী জানান ,বন্যাকবলিত মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে জনপ্রতিনিধিসহ স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে তিনি কাজ করছেন। পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের শুকনো খাবার ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।
এদিকে, বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ও জনজীবন বিপর্যস্ত হওয়ায় বন্যাদুর্গত মানুষজন তাদের গৃহপালিত গবাদিপশুসহ পরিবারপরিজন নিয়ে পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। বেশ কয়েকটি পরিবার ভূকশিমইল স্কুল অ্যান্ড কলেজে আশ্রয় নিতে দেখা যায়।
বন্যা কবলিত এলাকার বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, হাসপাতাল, কমিউনিটি ক্লিনিক বন্যায় প্লাবিত হয়ে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এসব এলাকার গ্রামীণ ছোটছোট রাস্তাঘাট, ব্রীজ, কার্লভাট পানির নিচে তালিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ বিপাকে পড়েছেন। কয়েক দিন যাবৎ তাদের আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।