বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দূর্ণীতি বিরোধী অভিযানে নামছে শিক্ষামন্ত্রনালয় ; জঙ্গিবাদ মাদক যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধের পরিকল্পনা
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:৫৪:৩৫,অপরাহ্ন ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ৩৮৫ বার পঠিত

দেশের সরকারি ও বেসরকারি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারের নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৩৭ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নজরদারিতে থাকবে। শিক্ষার মান বাড়ানোর পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ, জামায়াত-শিবিরসহ মৌলবাদী ও নিষিদ্ধ সংগঠনের কার্যকলাপ ঠেকানো, বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমুহে দূর্ণীতিগ্রস্থ গভর্ণিংবডি/ম্যানেজিং কমিটির প্রমাণিত দূর্ণীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহন, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ স্কুল-কলেজে মাদকের বিস্তার রোধ করা, শিশু শিক্ষার্থীদের শারীরিক শাস্তি বন্ধ এবং নারী শিক্ষক ও ছাত্রীদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধ করাই এ বিশেষ নজরদারির মূল উদ্দেশ্য। একইসঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব, দলাদলি ,কমিটি কর্তৃক ব্যক্তিগত রোষানলে শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষক/কর্মচারীর বিষয়ে মানবিক বিবেচনা ও দোষী কমিটির বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ করে তহবিল সুরক্ষাও এ নজরদারির আওতায় থাকবে। এ জন্য বিশদ এক কর্মপরিকল্পনা হাতে নিচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী ৮ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) বিভাগে অনুষ্ঠিতব্য সভায় এ কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এতে এমপিওভুক্ত হওয়া প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ক্লাস হয় কি-না, শিক্ষকদের উপস্থিতি ঠিক আছে কি-না, শিক্ষক অনুপস্থিত থেকে বেকন-ভাতা খাচ্ছে কিনা,শিক্ষার্থীরা প্রকৃতই শিখল কি-না এসব বিষয়ে নজরদারির তাগিদ দেওয়া হয়। সূত্র মতে, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানীর হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নজরদারির ইস্যু প্রথমবারের মতো সবার সামনে আসে। ওই হামলায় একটি শীর্ষ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষার্থীদের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার তথ্য মেলে। এরপর গুলশান ও ধানমণ্ডিতে পরিচালিত লেকহেড গ্রামার স্কুলের মালিকপক্ষ ও শিক্ষকদের জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ততা ও অর্থায়নের তথ্য পাওয়া যায়। খোদ রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে পরিচালিত এ স্কুলের বিরুদ্ধে এমন তথ্য আসায় নড়েচড়ে বসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও। এরপর প্রতিটি স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়, টানা ১০ দিন বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত থাকা শিক্ষার্থীদের তালিকা সরকার ও স্থানীয় থানাকে জানাতে হবে। প্রথম কিছুদিন এ নির্দেশ প্রতিপালিত হলেও এখন আবার তা থেমে গেছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. গোলাম ফারুক বলেন, এসডিজি অর্জনে এখন আমরা সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি মানসম্মত শিক্ষায়। মানসম্মত শিক্ষা দিতে গেলে আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে মাদক , যৌন হয়রানি ও দূর্ণীতি দূর করতে হবে। তিনি বলেন, যে কোনো মূল্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাত্রী ও নারী শিক্ষকদের জন্য নিরাপদ করতে হবে। বিশেষত যৌন হয়রানির ব্যাপারে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। তিনি বলেন, মাঠপর্যায়ে শিক্ষা কর্মকর্তারা তদারকি আরও বাড়াবেন। সে জন্য তাদের কাজের পথ সহজ করা হচ্ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শিশু শিক্ষার্থীদের মারধর করে আহত করার অভিযোগ মন্ত্রণালয়ে প্রায় দিনই আসছে। কিছু কিছু শিক্ষক শিশুদের সঙ্গে নির্মম আচরণ করেন। এগুলো বন্ধ হওয়া দরকার। তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক সব ধরনের ‘বাণিজ্য’ বন্ধ করতে হবে। ভর্তি বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য, কোচিং বাণিজ্য- এ সবই সুশিক্ষার অন্তরায়। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটিতে থাকা নিয়ে দ্বন্দ্ব-লড়াই খুব স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসবের সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক দুর্নীতি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তহবিল তছরুপের ঘটনাও ঘটছে। এসব কারণে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারের নজরদারিতে থাকলে তহবিল তছরুপ সহজ হবে না। সঙ্গে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ) দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তহবিল অডিট করা হবে।
ডিআইএ’র যুগ্ম পরিচালক বিপুল চন্দ্র সরকার বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কিছু শিক্ষক-কর্মচারীর শিক্ষা সনদ জাল। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে চাইলেও বাস্তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কমিটির লোকেরা জেনেশুনেই তাদের নিয়োগ দিয়েছেন অসৎ উদ্দেশ্যে। এসব কারণে প্রতিষ্ঠানে সরেজমিন পরিদর্শন বাড়ানো হবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ডিআইএ তাদের পরিদর্শনের আওতা বাড়াচ্ছে।
মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা কর্মপরিকল্পনা অনুসারে, সারাদেশে শিক্ষার মানোন্নয়নে জবাবদিহিমূলক শিক্ষা প্রশাসন তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রতি বছর সরকারি-বেসরকারি ৩৭ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা হবে। সরকারের শিক্ষা খাতে নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই তা করা হবে। এ-সংক্রান্ত একাধিক সভাও হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসেন এসব সভায় উপস্থিত ছিলেন। এসব সভার প্রস্তাবগুলো সমন্বয় করে আগামী ৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা।