ছাত্রলীগের নেতৃত্ব বদল: সিলেটে ১ ঘন্টার ব্যবধানে সব ব্যানার-ফেস্টুন উধাও!
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:১৮:৩২,অপরাহ্ন ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ৩৬০ বার পঠিত
নিউজ ডেস্ক : চলতি মাসের ৩ সেপ্টেম্বর সিলেট সফর করে গেছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। তাকে স্বাগত জানিয়ে হাজারো ব্যানার-ফেস্টুনে অন্যরকমভাবে সেজে ওঠেছিল সিলেট নগরী। একদিন থেকে শোভন সিলেট ছাড়লেও সেই ব্যানার-ফেস্টুন ঠিকই শোভা পাচ্ছিলো নগরীর অলিতে-গলিতে। কিন্তু মাত্র ১ থেকে দেড় ঘন্টার ব্যবধানে সব ব্যানার-ফেস্টুন উধাও! বিষয়টা বেশ আশ্চর্যের! যদিও এরই নাম রাজনীতি!
শনিবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে যখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর আসছিল যে- ‘ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ হারালেন শোভন-রাব্বানী।’ তখনও শোভনের ব্যানার-ফেস্টুন শোভা পাচ্ছিলো নগরীর মোড়ে মোড়ে। কিন্তু এর ঘণ্টাদেড়েকের মাঝেই বদলে যায় দৃশ্যপট। শোভনের শুভাকাঙ্ক্ষীরা একে নামীয়ে ফেলে শোভনকে শুভেচ্ছা জানানো সব ব্যানার। তখন শোভন যেন শত বছরের অতীত।
শুধু তাই নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সদ্য সাবেক দুই নেতার ছবি সরিয়ে দিচ্ছেন নতুনদের ছবি। আর অভিনন্দন বার্তাতো আছেই। এদিকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতির সাথে সাথেই সংগটনটির নেতা কর্মীরা শীর্ষ এই দুই নেতার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা মন্তব্য করছেন। এর বেশির ভাগ পোস্টই দুই নেতার ব্যর্থতা আর নেতা কর্মীকে অবহেলার করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া শেখ হাসিনার কর্তৃক দুই নেতাকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্তকে যুগোপযোগীও বলছেন নেতা কর্মীরা।
দলটির কর্মী-সমর্থকদের এই মনোভাবকে ছাত্র রাজনীতির অবক্ষয় হিসেবে দেখছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলছেন, আগের ছাত্র রাজনীতি আর বর্তমান ছাত্র রাজনীতির মধ্যে বিস্তর ফারাক। আগে ছাত্র রাজনীতি ছিলো সমাজের অগ্রপ্রতিক। কারণ ছাত্র সমাজ তাদেরকে নেতা মনোনীত করতো। কিন্তু বর্তমানে নেতা হচ্ছেন টাকার জোরে কিংবা বলয়ভিত্তিক। এজন্য যারাই ক্ষমতায় আসছেন তারা দলীয় আদর্শকে একপাশে সরিয়ে ভাইয়ের আদর্শ ধারণ করছেন।
আর এই সুযোগে কথিত ‘বড় ভাই’ বা ‘ভাই লীগ’ ছেলেদেরকে ব্যবহার করছে। এর প্রমাণই বর্তমানে দলটির এই কর্মকান্ড। কারণ সাবেক হওয়া মানেই সব শেষ হয়ে যাওয়া নয় কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সাবেক হয়ে যাওয়া মানে সব শেষ।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়। এরপর ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতিতে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে ছাত্রলীগের কমিটি করা হয়।
কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ ১ বছর না পেরোতেই তাদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ ওঠে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতাসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে নানা ধরনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কথা ওঠে আসে।
এর মধ্যে স্বেচ্ছাচারিতা, অদক্ষতা ও অদূরদর্শিতা, নেতাকর্মীদের প্রত্যাশিত মূল্যায়ন না করা অন্যতম। এছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের উপেক্ষা, ফোন রিসিভ না করার অভিযোগও আছে। এর বাইরে রাতজাগা ও দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা, কর্মসূচিতে বিলম্বে যাওয়া, প্রধান অতিথিদের বসিয়ে রাখা, জেলা সম্মেলন করতে না পারা, বিতর্কিতদের দিয়ে কমিটি গঠনের বিষয়ও এ তালিকায় রয়েছে। এসব দেখে এবং শুনে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা শনিবার সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দিতে বলেন।
সবশেষে শনিবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এ অবস্থায় ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান আল নাহিয়ান খান জয় এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান লেখক ভট্টাচার্য।
এর আগে সংগঠনের ১ নম্বর সহ-সভাপতি হিসেবে আল নাহিয়ান খান জয় ও ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে লেখক ভট্টাচার্য দায়িত্ব পালন করতেন।