কৃষি শুমারির প্রাথমিক ফল প্রকাশ; কমে যাচ্ছে কৃষিনির্ভর পরিবার
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:০৪:৩১,অপরাহ্ন ২৮ অক্টোবর ২০১৯ | সংবাদটি ৩৭৭ বার পঠিত
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) কৃষি শুমারি ২০১৯-এর প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে দেশে কৃষি খানার শতকরা হার ৫৩ দশমিক ৮২ শতাংশে নেমেছে যা ২০০৮ সালের তুলনায় ২ দশমিক ৯২ ভাগ কম। ১৯৮৩ সালে দেশে পল্লি অঞ্চলে কৃষি খানার শতকরা পরিমাণ ছিল ৭২ দশমিক ১০ শতাংশ যা ১৯৯৬ এবং ২০০৮ সালে ছিল যথাক্রমে ৬৬ দশমিক ১৮ শতাংশ এবং ৫৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ। অর্থাত্ ধারাবাহিকভাবে কমেছে কৃষিনির্ভর পরিবারের সংখ্যা। দেশে সবচেয়ে বেশি কৃষিনির্ভর পরিবার বরিশালে। ১৯৬০ সালে দেশে প্রথম কৃষি শুমারি হয়েছিল। এরপর সবশেষ ২০০৮ সালে হবার পর ৬ষ্ঠ কৃষি শুমারি চলতি বছরের শুরুর দিকে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর প্রাথমিক ফলাফল গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীসহ অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব রইছউল আলম, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামান, বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও প্রকল্প পরিচালক জাফর আহমেদ খান।
মূলত দেশে কৃষি খানার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্য, শস্য, মত্স্য, প্রাণিসম্পদসহ পোলট্রি উপ-খাতের অবস্থা, ভূমি ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ের সঠিক ধারণা পেতে এক দশক পরপর এ ধরনের শুমারি করা হয়। এবারের শুমারিতে ৯ থেকে ২০ জুন পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। শুমারির প্রাথমিক ফলাফলে বলা হয়েছে, দেশে মোট পরিবারের (খানা) সংখ্যা ৩ কোটি ৫৫ লাখ ৩৩ হাজার ১৮০টি। এরমধ্যে দেশে কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ১ কোটি ৬৫ লাখ ৬২ হাজার ৯৭৪ পরিবার। এক্ষেত্রে শহরে ৬ লাখ ১৭ হাজার ৮৫৫টি পরিবার এবং গ্রামে ১ কোটি ৫৯ লাখ ৪৫ হাজার ১১৯টি পরিবার। প্রাণিসম্পদের তথ্যে দেখা যায়, দেশে গরুর সংখ্যা ২ কোটি ৮৪ লাখ ৮৭ হাজার ৪১৫টি। ছাগলের সংখ্যা ১ কোটি ৯২ লাখ ৮৭ হাজার ৪১৩টি, মহিষ রয়েছে ৭ লাখ ১৮ হাজার ৪১১টি, ভেড়া রয়েছে ৮ লাখ ৯২ হাজার ৬২৮টি। হাঁসের সংখ্যা ৬ কোটি ৭৫ লাখ ২৯ হাজার ২১০টি এবং মুরগি রয়েছে ১৮ কোটি ৯২ লাখ ৬২ হাজার ৯১০টি। দেশে টার্কি রয়েছে ১৪ লাখ ৪৫ হাজার ৪২০টি।
মাছ চাষের ওপর নির্ভরশীল পরিবার ৯ লাখ ৯৫ হাজার ১৩৫টি, কৃষি মজুরির ওপর নির্ভরশীল এমন পরিবারের সংখ্যা ৯০ লাখ ৯৫ হাজার ৯৭৭টি, নিজস্ব জমি নেই এমন পরিবার রয়েছে ৪০ লাখ ২৪ হাজার ১৮৯টি এবং অন্যের কাছ থেকে জমি নিয়েছে এমন পরিবার ৬৭ লাখ ৬৩ হাজার ৪৮৭টি। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, নিজের জমি নেই এমন পরিবার সবেচেয়ে বেশি রয়েছে ঢাকা বিভাগে। এ বিভাগে প্রতি হাজারে ৬৪৮টি পরিবারের নিজস্ব জমি নেই। রাজশাহী বিভাগে প্রতি হাজারে ২৪১টি পরিবারের নিজস্ব জমি নেই। এছাড়া রংপুর বিভাগে প্রতি হাজারে ৩১৭টি, চট্টগ্রাম বিভাগের ২৭৫টি, খুলনা বিভাগে ২৬৯টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৬৯টি, সিলেট বিভাগে ২২১টি এবং বরিশাল বিভাগে প্রতি হাজারে ৯২টি পরিবারের নিজস্ব জমি নেই। প্রকল্প পরিচালক জাফর আহমেদ জানান, নিজস্ব জমি নেই মানে ভূমিহীন নয়। অনেক সময় নিজের নামে জমি না থাকলেও তার বাবা বা দাদার নামে থাকতে পারে।
অনুষ্ঠানে কৃষি শুমারির তথ্যের সঙ্গে দ্বিমত জানিয়ে মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব রইছউল আলম মণ্ডল বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে বিশুদ্ধ ডাটা দরকার। বেইজ লাইন না থাকলে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম সঠিক হয় না। শুমারিতে ডিম, দুধ, ইলিশ এবং মিঠা পানির মাছের তথ্য থাকা উচিত ছিল।
কৃষি সচিব নাসিরুজ্জামান বলেন, বিবিএসের তথ্যের সঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যের মিল নেই। গতবছর কৃষি মন্ত্রণালয় হিসাব করে বলেছে—আমন ধান উত্পাদন হয়েছিল ১ কোটি ৫৩ লাখ মেট্রিক টন; কিন্তু বিবিএস বলেছে উত্পাদন হয়েছে ১ কোটি ৪০ লাখ মেট্রিক টন। অর্থাত্ বাজারে এই ১৩ লাখ মেট্রিক টন ভাসমান। এর ফলে এখন দেখা যাচ্ছে ধানের দাম ৪০ টাকা হবার কথা; কিন্তু ২৫ টাকায় নেমে এসেছে। শুধু আমন ধানই নয়, অন্য ফসলের ক্ষেত্রে বিবিএসের তথ্যের সঙ্গে কৃষি বিভাগের তথ্য মিলছে না। তিনি বলেন, হাইব্রিড ধানের কোনো হিসাব নেই। কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, ছাদবাগান এখন অনেক জনপ্রিয়। সেটি যুক্ত করা হয়নি। ভাসমান কৃষিকেও যুক্ত করা হয়নি। মাষকলাই ও ছোলার ডালের তথ্য বাদ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পরিসংখ্যানের সঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় করা উচিত। তাহলে এত বেশি ব্যবধান আর থাকবে না।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, এত বড়ো মহাযজ্ঞ বোধ হয় নিখুঁত হওয়া সম্ভব নয়। প্রতিটি ক্ষেত্রে আরো নিবিড়ভাবে সবাই কাজ করবে বলে আমি কথা দিচ্ছি। বিবিএসকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হবে। দেশের সব পরিকল্পনায় ভিত্তি হবে পরিসংখ্যান।