কুলাউড়ায় আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে সমালোচনা ; দলীয় সম্পাদকের দিকে অভিযোগের তীর
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৪১:৫৬,অপরাহ্ন ২৩ নভেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ৫৭১ বার পঠিত
নিউজ ডেস্ক : ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশকারী আছে বলে গুঞ্জন ওঠেছে। সেই থেকে দলে শুরু হয় শুদ্ধি অভিযান। সারাদেশ থেকে শুরু হয় অনুপ্রবেশকারীদের নাম সংগ্রহ। পরবর্তীতে শুরু হয় তালিকা যাছাই-বাছাই। দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজের তত্ত্বাবধানে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেন। ৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার তালিকায় যুক্ত থাকা অনুপ্রবেশ কারীদের আংশিক নাম প্রকাশ করা হয়েছে। সেই তালিকায় কুলাউড়ার কয়েকজনের নাম প্রকাশ করায় পুরো উপজেলা জুড়ে চলছে নানা সমালোচনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা আওয়ামীলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রেনু ক্ষমতার প্রভাব খাঁটিয়ে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন কমিটিতে জামাত-বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত অনেক নেতাকে আওয়ামীলীগে স্থান দিয়েছেন। এরা আসন্ন সম্মেলনে কাউন্সিলর থাকায় এ নিয়ে বিতর্কের কোন শেষ নেই। তৃণমূল পর্যায়ে এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।
ভাটেরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরুজ মিয়া তালুকদার আওয়ামীলীগে যোগদানের পূর্বে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ভাটেরা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক বদরুল আলম সিদ্দিকী নানু জামাত শিবিরের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন এবং পনবর্তীতে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ভাটেরা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সদস্য মধু মিয়া জামায়াতে ইসলামীর নেতা ছিলেন। তাঁর চাচাতো ভাই তাজুল ইসলাম জেলা ছাত্রশিবিরের বর্তমান সভাপতি।
হাজীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুদ বক্স উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন। তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের খুব ঘনিষ্টজন বলে জানা গেছে।
ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের অন্যতম নেতা মোঃ মমদুদ হোসেন তাঁর চাচা লেচু মিয়ার মাধ্যমে ২০০৫ সালে অত্যন্ত সুকৌশলে জামাত হতে আওয়ামীলীগে যোগদান করেন। ১৯৮০ সাল হতে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের একজন তুখোড় ক্যাডার ও ছাত্রনেতা ছিলেন। ১৯৯৮ সাল হতে ২০০৫ সাল পর্যন্ত তিনি জামাত ইসলামীর রাজনীতিতে অত্যন্ত সক্রিয় নেতা ছিলেন। তিনি আসন্ন উপজেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিলে সাংগঠনিক সম্পাদক পদপ্রার্থী। তাছাড়া ব্রাহ্মনবাজার ইউনিয়নের শ্রীপুরের আব্দুল লতিফ ছাত্রশিবরের নেতা ছিলেন এবং মুসলীমলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এএনএম ইউছুফের ভাতিজা প্রভাষক এ্এনএম আলম শিবিরের একনিষ্ট কর্মী ও মমদুদ হোসেনের সহকর্মী ছিলেন।কাদিপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের মাস্টার ছিলেন জামাতের একনিষ্ঠ কর্মী।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রেনু বৃহস্পতিবার রাতে সাংবাদিকদের বলেন, উপজেলার ভাটেরা ও হাজীপুর ইউনিয়ন কমিটির দু’জন নেতার নাম পাওয়া গেছে। তবে তারা জামাত বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত না থাকায় আমি তাদেরকে আওয়ামীলীগে যোগদান করাই। গোপনে তারা যদি জামাত বিএনপির সাথে জড়িত থাকে সেটা আমার জানার কথা নয়। আর কেউ থেকে থাকলে আমি জানিনা। তারা প্রমাণ করবে তারা আওয়ামীলীগ না অন্য রাজনীতি দলের সাথে সম্পৃক্ত।
জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মিছবাউর রহমান রাত নয়টায় মুঠোফোনে বলেন, দলের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে সিলেট বিভাগে অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা তৈরি করেছেন। এরমধ্যে মৌলভীবাজার জেলায় ৭জনের নাম পাওয়া গেছে। তন্মধ্যে কুলাউড়ার ভাটেরা ও হাজিপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের দু’জন অনুপ্রবেশকারীর নাম এসেছে। আরো কয়েকজনের নামও আছে। এটা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। পরবর্তীতে দলের নির্দেশনা আসলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ নেছার আহমদ এমপি বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, দলীয়ভাবে আমাদের জরিপ করা হয়েছে এবং হচ্ছে। কে কোন পর্যায় থেকে এসেছেন আমরা দলীয়ভাবে তা খতিয়ে দেখে করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবো।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, কারা অনুপ্রবেশকারী আমরা যাচাই করে দেখবো। তবে যারা বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত তাদের দলে রাখবো না। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন কমিটিতে সভাপতি/সম্পাদকের পদে জামাত-বিএনপি থেকে অনুপ্রবেশকারী এসেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি আসার পর বিষয়টি দেখবো। কারা জামাতের শূরা সদস্য সেটা আমরা খতিয়ে দেখবো।
সূত্র: রিয়েল টাইম্স৭১