বিনিয়োগের জায়গা পাচ্ছেন না ব্যাংকাররাই
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:০২:১৮,অপরাহ্ন ২৫ নভেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ৩৫৪ বার পঠিত
নিউজ ডেস্ক : একটি বেসরকারি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, সাধারণ মানুষ তো পরের কথা। ব্যাংকাররাই এখন কোথাও বিনিয়োগ করার জায়গা খুঁজে পাচ্ছেন না। আগে অনেক ব্যাংকার শেয়ারবাজারে কিছু বিনিয়োগ করলেও এখন কেউ করে না বলেও জানান তিনি।
বর্তমান সময়ে এই মনোভাব আরও অনেকের। ব্যাংকে টাকা রাখলে যে সুদ পাওয়া যায় তা মূল্যস্ফীতির কারনে মার খেয়ে যায়। এরপর রয়েছে একটার পর একটা অনিয়ম- দুর্নীতি-কেলেঙ্কারি। যা ব্যাংক ব্যবস্থায় আস্থার ঘাটতি তৈরি করেছে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে সাম্প্রতিক সময়ে মুনাফা করেছেন এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন।
করের হার বৃদ্ধি এবং কড়াকড়ি আরোপের ফলে সঞ্চয়পত্র থেকেও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে মানুষ। এখন মাসের বাড়তি খরচ মিটিয়ে সামন্য যে সঞ্চয় থাকে তা বাসায়ই রেখে দিচ্ছেন অনেকে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্তরা এখন তাদের সঞ্চয় ব্যাংক, পুঁজিবাজার বা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে ততোটা আগ্রহী হচ্ছেন না।
মিরপুরের এক বাসিন্দা জানান, কয়েক বছর আগে পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনেছিলেন তিনি। কিন্তু আগে যা মুনাফা পাওয়া যেত এখন তার অনেক কম পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, নতুন করে সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন লাগবে। আরও কত নিয়ম-কানুন! কি আর করব এখন যা খরচ-টরচ করে বাঁচে, তা বাসায়ই রেখে দেব।
ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদের হার কম এবং পুঁজিবাজারে দীর্ঘ মন্দার কারণে গত কয়েক বছর ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল সঞ্চয়পত্র বিক্রি। কিন্তু বিক্রির চাপ কমাতে ১ জুলাই থেকে মুনাফার উপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়।
একইসঙ্গে এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক করা হয়। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলে কোনো সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে না মর্মে শর্ত আরোপ করা হয়।
আর এ সব কারণে এখন সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমছে। তথ্যে দেখা যায়, যেভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল এখন সেভাবেই লাফিয়ে লাফিয়ে কমছে।
সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য ঘেটে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর মাসে ৯৮৫ কোটি ৭১ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে হয়েছিল প্রায় চার গুণ বেশি, ৪ হাজার ৩৫৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আর চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৪ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। গত বছরের এই তিন মাসে বিক্রির পরিমাণ ছিল তিন গুণ বেশি, ১৩ হাজার ৪১২ কোটি টাকা।
২০১৫ সালের মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার গড়ে ২ শতাংশ করে কমানো হয়। তার আগে পাঁচ বছর মেয়াদি এক লাখ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র থেকে প্রতি মাসে ১ হাজার ৭০ টাকা মুনাফা পাওয়া যেত। সুদের হার কমানোর ফলে পাওয়া যেত ৯১২ টাকা। জুলাই মাস থেকে করের হার বাড়ানোর ফলে পাওয়া যাচ্ছে ৮৬৪ টাকা। তবে পাঁচ লাখ টাকার কম বিনিয়োগ হলে প্রতি লাখে মাসে ৯১২ টাকাই মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে।
ব্যাংকের চলতি হিসাবে টাকা থাকলে তিন-সাড়ে তিন শতাংশের বেশি সুদ পাওয়া যায় না। আর ডিপিএস বা এফডিআরের সুদ ছয়-সাড়ে ছয় শতাংশের বেশি মেলে না। এর উপর ঘণ্টায়-ঘণ্টায় এসএমএসসহ দিনে-মাসে-বছরে নানা চার্জ কেটে রাখে ব্যাংকগুলো।
অর্থনীতিতে যে কোনো হিসাব কষতে গেলে মূল্যস্ফীতি সামনে চলে আসে। পরিসখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসাবে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আমানতের সুদ থেকে মূল্যস্ফীতি এবং চার্জ বাদ দিলে ব্যাংকে টাকা রাখলে আসলে কোনো মুনাফা পাওয়া যায় না; উল্টো ‘লস’ বা ‘লোকসান’ হয়। এছাড়া বেসিক, ফারমার্স, জনতাসহ বিভিন্ন ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি-অনিয়ম এবং বিশাল অংকের খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা দিন দিন কমে যাচ্ছে বলে মনে করেন জায়েদ বখত।
এদিকে পুঁজিবাজারের অবস্থা আরও করুণ। মূল্যসূচক কমছেই। লেনদেন নেমে এসেছে তলানিতে। ২০১০ সালের ধসের পর নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাজার স্বাভাবিক হচ্ছে না। উল্টো দিন যত যাচ্ছে পরিস্থিতি ততোই খরাপের দিকে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক একচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪ হাজার ৭০০ পয়েন্টে নেমে এসেছে। লেনদেন নেমে এসেছে ৩০০ কোটি টাকার ঘরে। ২০১০ সালে চাঙ্গা বাজারে এই সূচক ৯০০০ পয়েন্টে উঠেছিল, লেনদেন চড়েছিল ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকায়। বছর খানেক আগেও ডিএসইএক্স ৬০০০ পয়েন্ট অতিক্রম করেছিল। লেনদেন ছাড়িয়েছিল ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।