আ’লীগের কেন্দ্রে উত্তরের প্রতিনিধিত্ব তলানিতে: রাজশাহীতে নেতাকর্মীদের ক্ষোভ-হতাশা
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৩৫:৩৬,অপরাহ্ন ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ৩১৫ বার পঠিত
নিউজ ডেস্ক : সদ্য ঘোষিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব আরও সঙ্কুচিত হওয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা নেমে এসেছে। এ নিয়ে প্রকাশ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা।
তারা বলছেন, স্বাধীনতার আগে ও পরে উত্তরের নেতারা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন অত্যন্ত সফলভাবে। কিন্তু গত ৩ যুগে তা ক্রমাগতভাবে হ্রাস পেয়েছে। এবারও কেন্দ্রীয় কমিটিতে উত্তরের প্রতিনিধিত্ব একেবারেই তলানিতে। নেতৃত্ব নির্বাচনে দলের এ নীতিকে চরম বৈষম্যমূলক বলে মনে করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, স্বাধীনতা উত্তরকালে বঙ্গবন্ধু রাজশাহীর কৃতী সন্তান জাতীয় চারনেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামরুজ্জামানকে (বঙ্গবন্ধু তাকে হেনা ভাই বলতেন) আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক করেছিলেন। পঁচাত্তরের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নৃসংশভাবে নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ওই পদে আসীন ছিলেন।
ওই সময় শহীদ কামারুজ্জামান ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। পঁচাত্তর পরবর্তী একুশ বছর পর উত্তরের আওয়ামী লীগ নেতারা চরম বৈরী পরিবেশে দলকে সংগঠিত করতে গিয়ে জেল-জুলুম ও চরম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তখনও উত্তরের নেতারা দলে যোগ্য মূল্যায়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
এদিকে একুশ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলে আবদুল জলিল বাণিজ্যমন্ত্রী হন। উত্তরের নেতা আবদুল জলিল ২০০২ সালে হন দলের সাধারণ সম্পাদক। উত্তরের মানুষের কাছে নওগাঁর জলিল নামে সমধিক জনপ্রিয় ও পরিচিত ছিলেন তিনি। শেষকালে দলের মধ্যে চরম অবহেলার শিকার হন যা তার অনুসারীদের ব্যথিত করে।
এদিকে দলের সর্বশেষ কমিটিতে সিরাজগঞ্জ থেকে মোহাম্মদ নাসিমের প্রেসিডিয়াম পদটি অক্ষুণ্ন থাকলেও বাদ পড়েছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে। খালিদ মাহমুদ চৌধুরী দিনাজপুরের বিরল থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। তবে কোনো রকমে টিকে গেছেন আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের সাংগঠনিক সম্পাদক পদটি।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির দুটি পদে উত্তরবঙ্গ থেকে পাবনার নুরুল ইসলাম ঠাণ্ডু ও রাজশাহীর আখতার জাহান ঠাঁই পেয়েছেন। নুরুল ইসলাম ঠাণ্ডু গত কমিটিতেও ছিলেন।
এর আগের কমিটিতে রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত মমতাজ উদ্দিন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ছিলেন। এবার মেয়র লিটন বাদ পড়েছেন। লিটনের জায়গায় রাজশাহীর আখতার জাহান নির্বাহী কমিটিতে ঢুকেছেন। তবে বগুড়া থেকে আর কাউকে নির্বাহী কমিটিতে নেয়া হয়নি।
এর বাইরে উত্তরের বৃহত্তর রাজশাহী, রংপুর আর দিনাজপুর থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো পদে কেউ জায়গা পাননি। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের পাশাপাশি হতাশা ভর করেছে। এর প্রভাব উত্তরের জেলাগুলোর রাজনীতিতে পড়বে বলে মনে করছেন দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে উত্তরের প্রতিনিধিত্ব কমে যাওয়া প্রসঙ্গে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের একজন সহ-সভাপতি বলেন, যে যত যোগ্যই হোক, দল সুযোগ না দিলে নতুন নেতৃত্ব তৈরির পথটি রুদ্ধ হয়ে পড়ে। রাজশাহীর মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক কোনো পদে দেয়ার জন্য রাজশাহী তথা উত্তরবঙ্গের নেতাকর্মীরা একযোগে দাবি করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি কমিটিতে ঠাঁই পাননি।
এ নেতা আরও বলেন, উত্তরবঙ্গের এমন অনেক নেতা রয়েছেন যারা কেন্দ্রীয় কমিটিতে সাংগঠনিক পদ পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু অঞ্চলগত প্রভাবে দলের পদ ভাগবণ্টন হওয়ায় উত্তরের নেতারা বরাবরই বঞ্চিত থেকে যাচ্ছেন। এতে একদিকে যেমন অঞ্চলগতভাবে উত্তরাঞ্চলে আওয়ামী লীগের রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি সম্ভাবনাময় নতুন নেতৃত্ব তৈরির পথও রুদ্ধ হচ্ছে।
এদিকে তৃণমূলের একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদকেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেয়ার দাবি উঠলেও শেষ পর্যন্ত তার নাম না দেখতে পেয়ে জেলার নেতাকর্মীরা হতাশ হয়েছেন।
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক যুগান্তরকে বলেন, নুরুল ইসলাম ঠাণ্ডু ও আখতার জাহানের দলে অবদান রয়েছে কিন্তু অঞ্চলগতভাবে দলকে সংগঠিত ও শক্তিশালী করতে যে নেতৃত্ব প্রয়োজন বয়সের কারণে তা তারা দিতে পারবেন না। রাজশাহী তথা উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে তাদের তেমন কোনো সাংগঠনিক ও ব্যক্তিগত প্রভাব ও পরিচিতিও নেই। ফলে এমন নেতৃত্বের কারণে দল ও দলের নেতাকর্মীরা কোনোভাবেই উপকৃত হবেন না।
কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে রাজশাহী তথা উত্তরের ক্রমহ্রাসমান প্রতিনিধিত্ব সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, যারা দল ও নেতাকর্মীদের দুর্দিনে পাশে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, দলকে সংগঠিত করেছেন, যাদের নেতৃত্ব সময়ের বিচারে পরীক্ষিত, সেসব নেতৃত্বকে কেন্দ্রের রাজনীতিতে মূল্যায়ন করা উচিত। কখনও দলের জন্য কঠিন সময় যদি আসে সে ক্ষেত্রে শুধু যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে সাংগঠনিক সংকট কাটিয়ে উঠা অসম্ভব হয়ে পড়বে।