কমিটি গঠন ও আন্দোলন প্রস্তুতিতেই বছর শেষ বিএনপির
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:০৭:১৯,অপরাহ্ন ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ৩৪৬ বার পঠিত
ঊষারবাণী ডেস্ক : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সারাবছরই ’কঠোর আন্দোলন’ করার কথা বললেও বাস্তবে তা হয়নি। তিনি কারাগারে আছেন প্রায় দুই বছর। তার অনুপস্থিতিতে লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সিনিয়র নেতাদের সমন্বয়ে দল পরিচালনা করছেন। দলীয় প্রধানের মুক্তির দাবিতে সারাদেশে অনশন, মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, মশাল মিছিল এবং দেশব্যাপী বিভাগীয় সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। তবে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজপথে জোরালো কোনো কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামতে পারেনি দলটির নেতাকর্মীরা।
অবশ্য কেন্দ্র থেকে শুরু করে সারাদেশে সাংগঠনিক পুনর্গঠনের কার্যক্রমের সক্রিয় ছিল পুরো বছর। মুলতঃ কমিটি গঠন ও আন্দোলন প্রস্তুতিতে বছর পার করেছে বিএনপি। বিএনপি নেতাকর্মীদেরই দাবি, খালেদা জিয়াকে দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে আটকে রাখা হলেও রাজপথে কোনো কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলে সরকারকে চাপে রাখতে পারেনি তারা।
গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির মধ্যদিয়ে নতুন বছর শুরু করে বিএনপি। নতুন নির্বাচনের দাবিতে বছরের শুরুতে ঘোষণা দিলেও সময়ের পরিক্রমায় তা ফিঁকে হয়ে যায়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবি, ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির নির্বাচিত প্রার্থীর শপথ গ্রহণের মাধ্য দিয়ে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা নেমে আসে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে গত ৭ মার্চ শপথ নেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে নির্বাচিত সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। পরে ২ এপ্রিল সিলেট-২ আসন থেকে গণফোরাম থেকে নির্বাচিত আরেক সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানও শপথ নেন। এরপর ২৫ এপ্রিল দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়েই সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন ঠাকুরগাঁও-৩ (পীরগঞ্জ-রাণীশংকৈল) আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপি নেতা মো. জাহিদুর রহমান। জাহিদুরকে দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তেই গত ২৯ এপ্রিল সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত চার এমপি শপথ নেন। তবে বগুড়া-৬ আসনে নির্বাচিত দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ নেননি। ওই উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হয়ে সংসদ অধিবেশেনে যোগ দেন।
গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দী খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য পহেলা এপ্রিল বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ৬১২ নম্বর কেবিনে তাকে রাখা হয়েছে। সারা বছর তার জামিন আবেদন নিয়ে ব্যস্ত ছিল দলের গুরুত্বপূর্ণ আইনজীবী নেতারা। বছরের শুরুতে বিএনপির সহযোগী সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। পরে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া বহু বছরের অচলায়তন ভেঙ্গে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করে আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়।
এ বছরের ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্রদলের ভরাডুবি হয়েছে। এই নির্বাচনে সংগঠনটির মনোনীত প্যানেলের কোনো প্রার্থী নির্বাচিত হতে পারেননি। তবে অর্জন বলতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর দীর্ঘ ২৭ বছর পর কাউন্সিলের ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত করে বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কমিটি গঠন করে। সম্প্রতি ওই কমিটি আংশিক পূর্ণাঙ্গ করা হয়। এছাড়া জাতীয়তাবাদী যুবদল ও তাঁতি দলসহ সারাদেশে বেশকিছু মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি নতুন করে গঠন করা হয়।
৫ নভেম্বর ভাইস চেয়ারম্যান মোর্শেদ খান পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এর একদিন পরই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমানের রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর খবর আসে। এছাড়া জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে কয়েকজন দল থেকে চলে যান। বিএনপির সহ-অর্থবিষয়ক সম্পাদক মো. শাহাব উদ্দিন, নির্বাহী কমিটির সদস্য কণ্ঠশিল্পী মনির খান, ইসমাইল হোসেন বেঙ্গলসহ আরো অনেকেই।
দলের কয়েকজন নেতা ইত্তেফাককে বলেন,অনেকগুলো জেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে। বছরজুড়ে আমাদের অর্জন একেবারে কম বলা যাবে না। সীমিত সুযোগের মধ্যে আমরা এ কাজগুলো করেছি। দেশে গণতন্ত্র নেই। নতুন বছরে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে দল মত নির্বিশেষে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।