চট্টগ্রাম ‘গণহত্যার’ বিচার পেতে লেগেছে ৩২ বছর
প্রকাশিত হয়েছে : ২:৪৫:১৫,অপরাহ্ন ২১ জানুয়ারি ২০২০ | সংবাদটি ২৯৭ বার পঠিত
ঊষারবাণী ডেস্ক : এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রামের লালদীঘির ময়দানে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাণনাশের চেষ্টার ঘটনায় দায়ের করা ‘চট্টগ্রাম গণহত্যা’ মামলার রায় প্রদান করা হয়েছে। রায়ে তত্কালীন পাঁচ পুলিশ সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল সোমবার বিভাগীয় বিশেষ জজের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ ইসমাইল হোসেন এ রায় দেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন—কোতোয়ালি থানার তত্কালীন প্যাট্রল ইন্সপেক্টর গোবিন্দ চন্দ্র মণ্ডল (মামলার বিচার শুরুর পর থেকে পলাতক), সাবেক পুলিশ কনস্টেবল মোস্তাফিজুর রহমান, প্রদীপ বড়ুয়া, মো. আব্দুলাহ এবং মমতাজ উদ্দিন।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট মেজবাহউদ্দিন চৌধুরী জানান, ৩২ বছর আগে ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি নগরীর লালদীঘির ময়দানে আয়োজিত সমাবেশে যাবার পথে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি চালালে নিহত হন ২৪ জন। আহত হন কমপক্ষে দুই শতাধিক মানুষ। ঘটনাটি ‘চট্টগ্রাম গণহত্যা’ হিসেবে পরিচিতি পায়। এই ঘটনায় নিহতরা হলেন—হাসান মুরাদ, মহিউদ্দিন শামীম, স্বপন কুমার বিশ্বাস, এথেলবার্ট গোমেজ কিশোর, স্বপন চৌধুরী, অজিত সরকার, রমেশ বৈদ্য, বদরুল আলম, ডি কে চৌধুরী, সাজ্জাদ হোসেন, আব্দুল মান্নান, সবুজ হোসেন, কামাল হোসেন, বি কে দাশ, পঙ্কজ বৈদ্য, বাহার উদ্দিন, চান্দ মিয়া, সমর দত্ত, হাশেম মিয়া, মো. কাশেম, পলাশ দত্ত, আব্দুল কুদ্দুস, গোবিন্দ দাশ, মো. শাহাদাত।
আদালত সূত্র জানায়, এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে প্রয়াত আইনজীবী শহীদুল হুদা বাদী হয়ে চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় হত্যাকাণ্ডের সময় চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) কমিশনারের দায়িত্বে থাকা মীর্জা রকিবুল হুদাকে প্রধান আসামি করা হয়। এতে রকিবুল হুদাকে ‘হত্যার নির্দেশদাতা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বহুল আলোচিত মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। আদালতের নির্দেশে সিআইডি দীর্ঘ তদন্ত শেষে প্রথম দফায় ১৯৯৭ সালের ১২ জানুয়ারি সিএমপির তত্কালীন কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদাকে এবং পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালের ৩ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে মীর্জা রকিবুল হুদাসহ আট পুলিশ সদস্যকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। অভিযুক্ত অন্যরা হলেন—কোতোয়ালি জোনের তত্কালীন প্যাট্রল ইন্সপেক্টর (পিআই) জে সি মণ্ডল, পুলিশ কনস্টেবল আব্দুস সালাম, মোস্তাফিজুর রহমান, প্রদীপ বড়ুয়া, বশির উদ্দিন, মো. আব্দুল্লাহ এবং মমতাজ উদ্দিন। আসামিদের মধ্যে রকিবুল হুদা, বশির উদ্দিন ও আব্দুস সালাম মারা গেছেন। জে সি মণ্ডল পলাতক আর বাকি চার জন আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিয়ে আসছিলেন। আদালতে দুই দফায় আলোচিত এ মামলার চার্জ গঠন (দ্বিতীয় দফায় সংশোধিত আকারে) করা হয়। প্রথম দফায় ১৯৯৭ সালের ৫ আগস্ট এবং দ্বিতীয় দফায় ২০০০ সালের ৯ মে আট আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২/ ২০১/ ১০৯/ ৩২৬/ ৩০৭/ ১১৪/ ৩৪ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়।
আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর ১৯৯৭ সালের ২২ অক্টোবর থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মামলার মোট সাক্ষী ১৬৭ জন। গত ১৪ জানুয়ারি ৫৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্য কার্যক্রম শেষ হয়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আওয়ামী লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. অনুপম সেন, সাংবাদিক অঞ্জন কুমার সেন ও হেলাল উদ্দিন চৌধুরীসহ বেশ কয়েক জন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী মামলায় সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে গত রবিবার রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে যুক্তি উপস্থাপন করেন। সোমবার আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন করার কথা ছিল। কিন্তু আসামিপক্ষ যুক্তি উপস্থাপনে অসম্মতি জানালে আদালত তাত্ক্ষণিকভাবে রায়ের সময় নির্ধারণ করেন।