বকেয়া মজুরির দাবিতে কুলাউড়ায় চা শ্রমিকদের ভুখা লংমার্চ ও সড়ক অবরোধ
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:৩৩:৩৫,অপরাহ্ন ২০ এপ্রিল ২০২০ | সংবাদটি ২৮৯ বার পঠিত
নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রায় ১২ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে মজুরি বঞ্চিত মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কালিটি চা বাগানের শ্রমিকেরা ভুখা লংমার্চ, বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছেন। তাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে পার্শ্ববর্তী দুটি চা বাগানের শ্রমিকরাও লংমার্চে অংশ নেন। দীর্ঘদিন কাজ করে মজুরি না পাওয়ায় খাবার ও মৌলিক চাহিদার সঙ্কটে তাঁরা বর্তমানে অসহায় দিনাতিপাত করছেন।
রোববার (১৯ এপ্রিল) বাগান থেকে উপজেলা সদর অভিমুখে প্রায় সাত কিলোমিটার এলাকা পদযাত্রা এবং নবীন চন্দ্র সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় চৌমুহনীস্থ সড়ক প্রায় আধা ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা।
পরে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পুলিশের কর্মকর্তারা গিয়ে এ ব্যাপারে দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিলে শ্রমিকেরা ফিরে যান। তবে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়ে এর সমাধানের শর্তে সেখান থেকে ফিরেছেন বলে জানান শ্রমিকরা।
এর আগে গত ১৫ এপ্রিল একই দাবিতে তারা বাগানে ‘ভুখা মিছিল’ করেন।
জানা যায়, রোববার সকাল ১১টার দিকে পাঁচ শতাধিক শ্রমিক বাগান এলাকা থেকে পদযাত্রা শুরু করেন। এ সময় মজুরির দাবিতে বিভিন্ন শ্লোগান দেন তাঁরা। পথিমধ্যে সদর ইউনিয়নের গাজীপুর চৌমুহনীত পৌঁছালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী তাঁদের বুঝিয়ে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তা কর্ণপাত না করে প্রায় সাত কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে শ্রমিকেরা পৌর শহরের নবীন চন্দ্র মডেল উচ্চবিদ্যালয় চৌমুহনীতে পৌঁছান। সেখানে তাঁরা সড়কে বসে অবরোধের সৃষ্টি করেন। এ সময় চারটি সড়কের দুই পাশে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন আটকা পড়ে।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানান, কালিটি বাগানে ৫৩৭ জন শ্রমিক রয়েছেন। প্রত্যেক শ্রমিক দৈনিক ১০২ টাকা করে মজুরি পান। প্রতি সপ্তাহে তা পরিশোধের কথা। কিন্তু ১২ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাজ করেও শ্রমিকেরা মজুরি পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় শ্রমিকেরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।
বাগান শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির সম্পাদক উত্তম কালোয়ার বলেন, ‘শ্রমিকেরা এমনিতেই সামান্য মজুরি পান। এরপর ১২ সপ্তাহ থেকে কেউ সেই মজুরি পাচ্ছেন না। কাজ করেও মজুরি মিলছে না। ঘরে চাল-ডাল নেই। উপোষ দিন কাটাতে হচ্ছে। বাগান কর্তৃপক্ষ আজ দিচ্ছি, কাল দিচ্ছি বলে সময়ক্ষেপণ করছে।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য লছমী নারায়ণ অলমিক বলেন, বাগানে দীর্ঘদিন ধরে নানা সমস্যা। শ্রমিকদের আগের মজুরিরও বেশ কিছু টাকা বকেয়া পড়ে আছে। অনেক শ্রমিক জরাজীর্ণ কাঁচাঘরে বাস করছেন। এসব ঘর মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। অবসরে যাওয়া শ্রমিকেরা তহবিলের টাকা পাচ্ছেন না। অথচ প্রত্যেক শ্রমিকের মজুরি থেকে সাত শতাংশ করে ভবিষ্যৎ তহবিলের টাকা কেটে রাখা হয়। এর সঙ্গে মালিক পক্ষ আরও সাত শতাংশ যোগ করে মোট ১৫ শতাংশ টাকা শ্রম অধিদপ্তরে জমা দেওয়া কথা। বাগান কর্তৃপক্ষ তা-ও করছে না।
ছাত্র-যুবক নেতা দয়াল অলমিক বলেন, বাগানে চিকিৎসক নেই। শ্রমিকেরা বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করালে বাগান কর্তৃপক্ষ বিলের টাকা দেয় না। বাগানে বিরাজমান এসব সমস্যার কথা তুলে ধরে এর প্রতিকার চেয়ে ৫ জানুয়ারি তাঁরা শ্রীমঙ্গলে শ্রম অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। আর শ্রমিকেরা তো ‘মানুষ’ না, তারা যেনো অন্য গ্রহের বাসিন্দা।
চা শ্রমিক সন্তান মোহন রবিদাস বলেন, একদিকে ১২ সপ্তাহ ধরে মজুরি বঞ্চিত অন্যদিকে করোনা ভাইরাসের সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঝুঁকিতে আছেন এই বাগানের শ্রমিকগণ। অবিলম্বে এই বাগানের সংকট নিরসন করা না গেলে শত শত চা শ্রমিকের জীবন বাঁচানো অসম্ভব হয়ে পড়বে।
অবরোধ চলাকালে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম সফি আহমদ সলমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী ও কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়ারদৌস হাসান সেখানে গিয়ে আন্দোলনকারী শ্রমিকদের সাথে কথা বলেন এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে শ্রমিকেরা সড়ক ছেড়ে বাগানে ফিরে যান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী জানান, বাগানের মালিকপক্ষের খামখেয়ালিপনার কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া ইতিমধ্যে বাগানের ৫০০ শ্রমিককে সরকারিভাবে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কিছুদিনের মধ্যে বাগানের সব শ্রমিককে এককালীন পাঁচ হাজার করে টাকা দেওয়া হবে।