কুলাউড়ায় সন্ত্রাসীদের হামলায় ৩ নারী হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:০৩:৫৮,অপরাহ্ন ১০ জুন ২০২০ | সংবাদটি ২৭৮ বার পঠিত
কুলাউড়া প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার রাউতগাঁও ইউনিয়নের কৌলা নজাতপুর গ্রামে সন্ত্রাসীদের হামলায় অসহায় বিধবা গয়া বেগম(৬০) এবং তার ২মেয়ে রাজনা বেগম(৩০) ও আয়েশা বেগম(২৮) গুরুতর আহত হয়ে সিলেট ওসমানি হাসপাতালে মৃত্যুর আশঙ্কাযুক্ত অবস্থায় চিকিৎসাধীন থাকার খবর পাওয়া গেছে। সোমবার ৮জুন আহত ৩ নারী কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বারন্দায় রক্তাক্ত জখম অবস্থায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে দেখা যায়।
সরেজমিনে হাসপাতালে গেলে দেখা যায়,আহত ৩ নারীর পুরো শরীরে এলোপতাড়ী দায়ের কুপ ও লাটির আঘাতের জখম রয়েছে। আহত রাজনা বেগমের মাথায় দায়ের কোপে মগজ বেরিয়ে গেছে এবং দুহাতেও দায়ের ভয়ানক জখম রয়েছে, আয়েশা বেগমের গালে হাতে ও পিঠে দায়ের কোপ ও লাঠির আঘাতের জখম রয়েছে এবং বৃদ্ধ গয়া বেগমের চোখ, মাথা ও হাত জখম হয়েছে, বিশেষ করে চোখের জখম অত্যন্ত ভয়াবহ।
এ ঘটনায় বিধ্বার মেয়ে সাজনা বেগম বাদী হয়ে কুলাউড়া থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং ২২৩৮ তারিখ : ০৮/০৬/২০২০।
মামলার বিবরণ ও বাদিনীর মৌখিক বিবরণ ও স্থানীয়দের দেয়া তথ্য মতে, বিবাদীদের সাথে র্দীঘদিন যাবত বাড়ীর জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। সোমবার ৮জুন দুপুর ১টার সময় বাড়ী ও জমি দখলের উদ্দেশ্যে কৌলা নজাতপুর গ্রামের আঙ্গুর মিয়া, তার স্ত্রী আজিবুন ও মেয়ে রিতা বেগম ও রিমা বেগম এবং একই গ্রামের মানিক মিয়ার ছেলে সিপার মিয়ার নেতৃত্বে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী নিয়ে পুরুষহীন নিরীহ পরিবারের উপর অতর্কিতে হামলা করা হয়। সহযোগী ও ভাড়াটিয়া অন্যান্য হামলাকারীরা হলেন, চাতল গাঁওয়ের হান্নান কারীর ছেলে নাইম মিয়া, নেতৃত্ব দানকারী সিপার মিয়ার ভাই সাদেক মিয়া, স্ত্রী হেনা বেগম ও সাদেকের স্ত্রী তান্নি বেগম,কৌলার মৃত ফারুক মিয়ার ছেলে ফখরুল মিয়া, মেয়ে টুনি বেগম,রফি মিয়ার ছেলে খোকন মিয়া, মৃত তম উল্লার ছেলে আবু সুফিয়ান, মনু মিয়ার ছেলে কাসেম মিয়া, ইছাক আলীর ছেলে ময়জুল মিয়া ও নুরুল মিয়া, তুলাপুরের রোশন মিয়া, দত্তর মুড়ির সবুজ মিয়া, চাতল গাওয়ের মন্নান মিয়ার ছেলে ফাহিম মিয়া ও অজ্ঞাত আরো ১০/১২জন।
ঘটনার সময়ে বিবাদী সিপার মিয়া ও অপরাপর বিবাদীগণ সাজনা বেগমদের বসত ঘর দখল করার উদ্দেশ্যে দেশীয় অস্ত্র দা,কুড়াল লাঠি খুন্তি সহ উপস্থিত হয়ে বসত ঘরের চারদিক বেড়া
দিতে চাইলে সাজনা ও তার মা-বোনরা এতে বাধা প্রদান করে তখন সকল বিবাদী গণ তাদের প্রাণে মারতে উদ্যত হয়ে হামলা চালালে বাদিনী সাজনা বেগম প্রাণ রক্ষার্থে দৌড়ে পার্শবর্তী আজির উদ্দিনের ঘরে আশ্রয় গ্রহন করিলেও তার মা ও বোন নিজঘরের দরজা বন্ধ করে নিজেদের রক্ষার চেষ্টা করেন। বিবাদীগন তাদের আস্ত্র দিয়ে ঘরের দরজা ভাঙ্গিয়া ঘরে প্রবেশ করে তাদের চোখ-মুখে মরিচের গোড়া ছিটিয়ে পরে ইচ্চামতো এলাপাতাড়ি দা দিয়ে কুপিয়ে ও লাঠিদিয়ে আঘাত করে বিধবা গয়া বেগম এবং তার ২মেয়ে রাজনা বেগম ও আয়েশা বেগমকে একপর্যায়ে মৃত মনে করে ঘরে ফেলে রেখে ঘরের স্টিলের আলমিরায় রক্ষিত নগদ ১লক্ষ টাকা,আড়াই লক্ষ টাকা মূল্যের ৫ভরি স্বর্ণালংকার, ও পরনের ৫০হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। সন্ত্রাসীদের হামলায় ঘরের দরজা,জানালা, আলমারি, বাসন কোসন, ও টিভি ভাংচুর করায় আরো আড়াইলক্ষ টাকার ক্ষতি হয়। পরে প্রতিবেশীদের সহায়তায় আহত গয়া বেগম,রাজনা বেগম ও আয়েশা বেগমকে স্থানীয় কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়া গেলে তাদের অবস্থা চরম আশঙ্কাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত ডাক্তারগণ তাদের সিলেট এম.এ.জি ওসমানি হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে তারা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।
উল্লেখ্য অভিযুক্ত সিপার ইতোপূর্বে জালটাকা তৈরীর মেশিনসহ পুলিশের সাথে আটক হয়ে দুই দফায় মোট ৭বৎসর হাজত বাস করেছে। অভিযুক্ত কাসেম, সুফিয়ান ও সিপার মিলে এলাকায় ইয়াবা,হেরোইন সহ নানা অসামাজিক কর্মকান্ডে লিপ্ত রয়েছেন বলে জানা গেছে। ২নং আসামী নাইমের পিতা হান্নান কারীর কিছুদিন পূর্বেও কোন কিছু ছিলনা, সে চৌধুরী বাজারের নোমান মেম্বার(মহরি) পিতা হোছন আলী ও কাসেম সহযোগে কয়দিনের মধ্যে মাদক ব্যবসা, ব্রিটিশের খুটি ও মুর্তি চুরিসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত থেকে তারা বিপুল পরিমান বিত্তবৈভের মালিক হয়েছে। হান্নানকারীর নিজের নামে ব্যাংক টাকা না রেখে ছেলে মেয়ে ও আত্মীয়দের নামে টাকা রেখেছে। অল্প দিনে জায়গা জমি বাসা বাড়ী করে কুটিপতি হলো কি করে ? তার এই বিপুল পরিমান অর্থের উৎস কোথায়?
মামলার বাদী সাজনা বেগম বলেন, আমার বোন রাজনা বেগমের মাথায় দায়ের কোপে মগজ বেরিয়ে গেছে এবং দ’ুহাতে ও পেটের নিচে ও ঘাড়ে দায়ের কোপের ভয়ানক জখম রয়েছে, আয়েশা বেগমের গালে হাতে ও পিঠে দায়ের কোপ ও লাঠির আঘাতের জখম রয়েছে এবং মা গয়া বেগমের চোখ, মাথা ও হাত জখম হয়েছে, বিশেষ করে মায়ের চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। এ পর্যন্ত আহতদের ১১ ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়েছে। আমার বোন রাজনা বেগমের প্রায় ৩দিন হয়ে গেছে জ্ঞান ফিরেনি, ডাক্তার বলেছেন তাকে লাইফ সাপের্টে নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত ডাক্তার এহসান আহমদ গুরুতর আহতের বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিলেও আহতদের গুরুতর জখম থাকায় তাদের সিলেট ওসমানি হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
কুলাউড়া থানার ওসি (তদন্ত) সঞ্জয় চক্রবর্তী জানান, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল ও হাসপাতাল পরিদর্শ করেছে এবং বিবাদীদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে।
রাউৎগাাঁও ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ইসমাইল আলী জানান, ঘটনার সময় আমি বাড়ীতে না থাকায় প্রত্যক্ষদর্শী ছিলামনা। তবে পরে ঘটনাস্থলে ইউপি চেয়ারম্যানসহ গিয়ে নির্যাতিতদের বাড়ীর ধ্বংশযজ্ঞ দেখেছি। মনে হয়েছে প্রলয়ঙকরী ঘুর্ণঝড়ের তান্ডব শেষে ধ্বংশস্তুপ পড়ে আছে। বাড়ীর দরাজ,জানালা, বাসনকোসন,আসবাপত্র কিছুই ধ্বংশ হওয়ার অবশিষ্ট নেই। এ ঘটনায় নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। পক্ষদ্বয়ের ভ’মিসংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্ত্রি জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কয়েকদফা চেষ্ঠা করলে প্রতিবারই একপক্ষের আগ্রাসি ভুমিকার কারণে নিষ্পত্তি হয়নি এবং শেষপর্যন্ত এতবড় ঘটনা সংগঠিত হলো। নির্যাতিতদের পরিবারে কোন পুরুষলোক না থাকায় তারা প্রতিপক্ষকে ন্যুনতম প্রতিরোধ পর্যন্ত করতে পারেনি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দারগা পরিমল চন্দ্র বলেন, মামলায় খোকন মিয়া নামক একজন আসামীকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠনো হয়েছে এবং বাকীদের গ্রেফতরের চেষ্ঠা চলছে। আসামীদের হামলায় গুরুতর আহত বিধবা গয়া বেগম ও তার মেয়ে রাজনা বেগম ও আয়েশা বেগম সিলেট ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।