কুলাউড়ায় তান্ত্রিকের কারিশমায় স্কুলের নিয়োগ পরীক্ষা ভন্ডুল ; নৈশ প্রহরি শ্রীঘরে
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৪৯:১২,অপরাহ্ন ২৩ জানুয়ারি ২০২১ | সংবাদটি ৭৭৫ বার পঠিত
কুলাউড়া প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেয়া মহতছিন আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আতিকুর রহমান সোহেলকে স্কুলের নৈশ প্রহরী কর্তৃক তাবিজের স্পর্শে অজ্ঞান করে দেয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাবিজ দিয়ে এমন ক্যারিশমা দেখান এই বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী বিপুল বিশ্বাস(নমসুদ্র) (৪৮)। ক্ষুব্ধ স্থানীয়দের ধারণা, তন্ত্র-মন্ত্র করে পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বিপুল। উক্ত ঘটনায় এলাকায় তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয়ায় পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে ও স্কুলের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করেন স্কুল কর্তপক্ষ। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার সকাল সাড়ে ১১ টায় ব্রাহ্মনবাজার ইউনিয়নের শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে।
এদিকে শিক্ষক সোহেল অজ্ঞান হওয়া এবং তার অসুস্থতার খবর পেয়ে ওই এলাকায় হট্টগোল ও উত্তেজনা দেখা দেয়। বিক্ষুব্ধ মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে তাৎক্ষনিক নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করে দেন কর্তৃপক্ষ।
২৩ জানুয়ারি বেলা ১১টার দিকে ঘটনাটি ঘটে। পরে অসুস্থ শিক্ষক সোহেলকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২৩ জানুয়ারি শনিবার উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষা ছিলে। প্রধান শিক্ষক পদে ৫ জন প্রার্থী এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে ১০ জনের মধ্যে ৪ জন প্রার্থী নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেন। নিয়োগ পরীক্ষার বোর্ডের দায়িত্বে ছিলেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আনোয়ার, জেলা শিক্ষা অফিসের প্রতিনিধি ও মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফারুক আহমদ, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম খান বাচ্চু, সদস্য আব্দুল মন্নান ও বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাসান খান।
শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে পূর্বনির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী শনিবার সকাল ১১ টায় প্রধান শিক্ষক পদে ৫ জন ও সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে ১০ জন প্রার্থী নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য উপস্থিত হন। নিয়োগ পরীক্ষা শুরুর পূর্ব মুহূর্তে স্কুলের নাইট গার্ড শ্রীপুর লামাপাড়া নিবাসী বিপুল বিশ্বাস প্রধান শিক্ষক পদের প্রার্থী মহতোছিন আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আতিকুর রহমান সোহেলকে অতর্কিতভাবে মাথায় তাবিজ বুলিয়ে দেয়ার সাথে সাথে প্রার্থী সোহেলের শরীরে কম্পন শুরু হয়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে স্থানীয়ভাবে উদ্ধার করে ব্রাহ্মনবাজার মুসলিম এইড হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখান থেকে তাকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। উক্ত ঘটনার পর পর এলাকায় তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে কুলাউড়া থানার এসআই কানাই লালের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারায় পরবর্তীতে ওসি বিনয় ভূষণ রায়ের নেতৃত্বে আরও পুলিশ ফোর্স ঘটনাস্থলে পৌঁছে নাইড গার্ড বিপুল বিশ্বাসকে আটক করে থানায় নিয়ে যান। অপরদিকে উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক পদের নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে বলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আনোয়ার জানান।
এসময় বিদ্যালয়ের আশপাশের লোকজন এসে জড়ো হয়ে হট্টগোল শুরু করেন। তারা নৈশপ্রহরী বিপুল বিশ্বাসকে তান্ত্রিক উল্লেখ করে গণধোলাই দেন। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যরা পরিস্থিতি শান্ত রাখতে নৈশ প্রহরি বিপুলকে বাথরুমে আটকে রাখেন।
থানায় আটক বিপুল বিশ্বাস জানান, সোহেল স্যার আমার খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি আমার কাছে নিয়োগ পরীক্ষার জন্য আশির্বাদ চেয়েছিলেন। আমি তাকে ধর্ম ও মা-প্রভূর দোহাই দিয়ে তাবিজ দিয়ে আশীর্বাদ করতে উনার শরীরে স্পর্শ করি।। তাবিজ কোথায় থেকে পেয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার ধর্মীয় গুরু কুলাউড়ার কাদিপুর কাকিচারের মহেশ চাষার কাছ থেকে কয়েকমাস আগে তাবিজ সংগ্রহ করেছি।
তবে মহেশ চাষার বাড়ীতে পুলিশ পৌছার আগেই তিনি বাড়ী থেকে পালিয়ে যান বলে পুলিশ সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম খান বাচ্চু জানান, আমার সামনে এই ঘটনাটি ঘটে। প্রধান শিক্ষক পদে পরীক্ষা অংশ নেয়া শিক্ষক সোহেল মাটিতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। তখন তাকে উদ্ধার করে আমরা হাসপাতালে পাঠাই এবং নিয়োগ পরীক্ষা তাৎক্ষণিক স্থগিত করি।
কুলাউড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আনোয়ার জানান, বিদ্যালয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে হওয়ায় আপাতত শিক্ষক নিয়োগ স্থগিত রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুনরায় শিক্ষক নিয়োগ করা হবে।
কুলাউড়া থানার অফিসার্স ইনর্চাজ বিনয় ভূষণ রায় জানান, আটক বিপুল বিশ্বাসকে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। যার কাছ থেকে বিপুল বিশ্বাস তাবিজ সংগ্রহ করেছে সেই মহেশ চাষাকে আটকের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তদন্তক্রমে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।