রাজনগরে ‘ক্বারী ফরিদ উদ্দিন মাদ্রাসা ও এতিমখানা’ স্থানীয় এক সন্ত্রাসীর দৌরাত্বে ধ্বংশের মুখে
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:০৬:৫৮,অপরাহ্ন ১৩ এপ্রিল ২০২১ | সংবাদটি ৩১০ বার পঠিত
স্টাফ রিপোর্টার : মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার দত্তগ্রামে দীর্ঘ ১৭বছরের পুরোনো মাদ্রাসা ও এতিমখানাকে ধ্বংশ করার হীনমানসে এলাকার সন্ত্রাসী কামরুল ইসলাম ও তার সহযোগীগণ কর্তৃক মাদ্রাসার গাঁ ঘেষে টিনের ঘর নির্মান সহ বিভিন্ন উপায়ে প্রতিষ্ঠানটিকে ক্ষতিগ্রস্থ করার অপচেষ্ঠা চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মৌলভীবাজার ও জেলা শিক্ষা অফিসার মৌলভীবাজার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন মাদ্রাসা ও এতিম খানার প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক মৌলভীবাজার রাজনগর উপজেলা নির্বাহি অফিসার বরাবরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পত্র ইস্যু করেছেন।
সরেজমিনে পরিদর্শনে জানা যায়, দত্তগ্রাম এলাকার ধর্মপ্রান ও জনহিতৈসি বেলজিয়াম প্রবাসী মোহাম্মদন নজরুল ইসলাম রাজনগর এলাকার শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত দরিদ্র, অসহায় ও এতিম শিশুদের লালন-পালন ও সু শিক্ষায় প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে তাঁর প্রবাসের কষ্ঠার্জিত অর্থ এবং এলাকা বাসীর সহযোগিতায় বিগত ২০০৪ সালে নিজস্ব ভূমিতে ক্বারী ফরিদ উদ্দিন হিফজুল কোরআন মাদ্রাসা ও এতিমখানা নামে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্টিত করেন যা বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্র বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যান মন্ত্রনালয় কর্তৃক ক্যপিট্যাশন মঞ্জরী প্রাপ্ত। প্রতিষ্ঠানে রয়েছে ৬০জন দূস্থ ও এতিমদের জন্য আবাসিক এতিমখানা, হেফজ খানান, গণ শিক্ষা, মসজিদ, পাঠাগার ও ফ্রি চিকিৎসা সুবিধা। প্রতিষ্ঠানটিতে ১ম শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত সাধারণ একাডেমিক শিক্ষা চলমান আছে। রয়েছেন বেতন ভূক্ত ৭জন শিক্ষক ও কর্মচারী।
এলাকাবাসী এ প্রতিবেদককে অবহিত করেন যে, স্থানীয় কামরুল ইসলামা নামক এলাকার সন্ত্রাসী প্রকৃতির যুবক তার সহযোগী অপ্রকৃতিস্থ যুবকদের নিয়ে সরকারী নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে এবং স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর বাধাকে উপেক্ষা করে মাদ্রাসা ও এতিম খানার একদম গাঁ ঘেষে সম্পূর্ণ প্রতিহিংসা বশত: সম্পুর্ণ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বলপূর্বক একটি কেজি স্কুলের নাম করে টিনের ঘর নির্মান করেন যদিও এখনো স্কুলের কোন কার্যক্রম শুরু করেন নাই। ফলে বিগত ১৭ বছরের মাদ্রাসা ও এতিম খানার কোমলমতি শিক্ষার্থীগণ সকল প্রকার আলো-বাতাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং পরিবেশ দোষণের সম্মুখিন হচ্ছে। উক্ত কেজি স্কুলের মাত্র ২০০ গজ দূরে দত্তগ্রাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত। কেজি স্কুলের কার্যক্রম শুরু হলে উক্ত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশঙ্কাজনক হারে শিক্ষার্থী সংকট দেখা দিবে এবং এলাকার দরিদ্র শ্রেণীর শিক্ষার্থীগণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হবেন বলে এলাকাবাসী আশঙ্কা করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দত্তগ্রাম এলাকার বেশ কয়েকজন লোক জানান, কেজি স্কুলের নামে টিনের ঘর নির্মান করা হলেও স্কুলের কোন সাইন বোর্ড নাই। রাতের অন্ধকারে এখানে অনেক অপরিচিত লোকের আনাগোনা দেখা যায়। এলাকাবাসীর ধারনা জনসাধারণের চোখে ধুলো দিয়ে হয়তো মদ-জোয়া সহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপ এখানে চলছে।
দত্তগ্রাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিকটে কোন প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত না করার জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বিগত ২৪ জুলাই ২০১৯ তারিখের সভার সিদ্ধান্ত রয়েছে, তথাপিও উক্ত কামরুল ইসলাম এখানে কেজি স্কুল শুরু করতে চাইছেন। যা গায়ের জোরে আইন লংঘন করতে চাইছেন।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার এনামূল হক চৌধুরী বলেন, স্থানীয় কামরুল ইসলাম সরকারী কোন নিয়ম নীতি না মেনেই কেজি স্কুল শুরু করতে চাইছেন। আমরা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ হতে বিষয়টির সুন্দর সমাধানের জন্য বারবার প্রস্তাব দিলেও তিনি তাতে কোন কর্নপাত করেননি। তবে মাদ্রাসার একদম পাশে টিনের ঘর নির্মান করায় কোমলমতি ছোট অসহায় ও এতিম শিশূরা আলো বাতাস হতে বঞ্চিত হচ্ছে এবং পরিবেশ দোষিত হচ্ছে যা অমানবিক।
মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দেওয়ান মিসবাউল মজিদ কালাম বলেন, কামরুলকে আমরা স্থানীয়ভাবে বুঝানোর অনেক চেষ্ঠা করেছি, তাছাড়া মাত্র ২০০গজ দূরে অবস্থিত দত্তগ্রাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে বিধি মোতাবেক কেজি সম্পূর্ণ স্কুল নির্মান করা সম্পূর্ণ বেআইনি। সে কথা শুনেনি। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাতার আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক মহোদয় রাজনগন ইউএনও কে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। আশা করি বিষয়টির একটি সুরাহা হবে।
মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, এলাকার দরিদ্র, এতিম ও অসহায়ের পূনর্বাসন ও শিক্ষা দানের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য নিজের প্রবাসের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের অর্থ ও এলাকাবাসীর সর্বিক সহযোগিতা নিয়ে মাদ্রাসা ও এতিমখানাটি শুরু করি। কিন্তু পরিতাপের বিষয়যে সরকারী নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে আমার নিজের ও এলাকাবাসীর সকল ধরনের বাধাকে উপেক্ষা করে প্রতিবেশি কামরুল এখানে মাদ্রাসার দক্ষিনের আলো-বাতাসকে রুদ্ধ করে দিয়ে একটি ঘর নির্মান করে মূলত উদ্ধেশ্যমূলক পরিকল্পিত ভাবে প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিগ্রস্থ করার চেষ্ঠা করে যাচ্ছেন। আমি এ বিষয়ে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সহ এলাকা বাসীর সার্বিক সহযোগিতা চাই যাতে কেজি স্কুলের নামে নির্মিত এ ঘরটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়।
রাজনগর উপজেলা নির্বাহি অফিসার প্রিয়াঙ্কা পাল এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ বিষয় সরেজমিন তদন্তের জন্য উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। লকডাউন শেষ হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।