মৌলভীবাজার হাসপাতালে এক বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট !
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:৪৫:৩০,অপরাহ্ন ২৫ এপ্রিল ২০২১ | সংবাদটি ৩০৬ বার পঠিত
মেহের নিগার তাজকিয়া, মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারে দ্রুত বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সংক্রমণের হারে দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে পরিণত হয়েছে মৌলভীবাজার। কিন্তু এই জেলার হাসপাতালে নেই সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট। এতে করে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে করোনা আক্রান্ত রোগীদের।
এক বছর আগে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে রোগীদের জন্য ৬ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতার একটি অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু এই উদ্যোগ আটকে আছে নানা কারণে। এখন পর্যন্ত অক্সিজেন প্লান্টের কাজ মাত্র ২০ ভাগ শেষ হয়েছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। যদিও বাস্তবে এখন পর্যন্ত এই প্লান্ট স্থাপনে তেমন অগ্রগতি নেই। তাই কবে শেষ হবে প্লান্টের কাজ এবং কবে রোগীরা সেবা পাবে তা অনিশ্চিত।
করোনা রোগীদের চিকিৎসায় অক্সিজেনের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু মৌলভীবাজারে স্থানীওদের উদ্যোগে কেনা ৩টি হাই-ফ্লো নেজাল দিয়ে চলছে রোগীদের সেবা। যার জন্য অক্সিজেনের উচ্চমূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে রোগীদের।
জানা যায়, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশে সংক্রমণের র্শীষে থাকা ২৯ টি জেলার যে তালিকা করা হয় তার শীর্ষে অবস্থান মৌলভীবাজারের। এই জেলায় সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। আক্রান্তের পাশাপাশি বাড়ছে মুমূর্ষু রোগীর সংখ্যাও। করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার অন্যতম অনুষঙ্গ হলো নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ। কিন্তু মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতাল কর্তপক্ষ পযাপ্ত সিট এবং চিকিৎসার সরঞ্জাম আছে জানালেও রোগীরা মৌলভীবাজারে করোনার চিকিৎসায় ভরসা পাচ্ছেন না।
ফলে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ থাকা রোগীরা ছুটছেন সিলেটে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে করোনা আক্রন্ত হয়ে মারা যাওয়া মৌলভীবাজারের ৩ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছিলেন সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতালে।
সংশিষ্ট সুত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালের চাহিদা অনুসারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুরোধে ইউনিসেফের অর্থায়নে হাসপাতালের ২৫০ বেডে অক্সিজেন সাপ্লাই দেওয়ার জন্য একটি অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু গত বছর উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত স্থাপন হয়নি করোনা চিকিৎসার প্রয়োজনীয় উপাদান লিকুইড অক্সিজেনের ট্যাংক ও প্ল্যান্টের কাজ। দ্রুততম সময়ে এই প্লান্টের কাজ শেষ করা এবং রোগীদের সেবা দেওয়া নিয়ে আছে অনিশ্চয়তা।
স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যারা এটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে আছে তারা হয়তো ভাবছিল করোনা শেষ তাই দায়িত্ব অবহেলা করেছেন, যেভাবে কাজ হচ্ছে তাতে তৃতীয় টেউ যদি আসে তবুও এর সুফল রোগীরা পাবে না বলেই মনে হচ্ছে।
আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, গা ছাড়া ভাবসহ, গুরুত্ব না দেওয়াকেই এ জন্য দায়ী করছেন সংশিষ্টরা। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ২ মাসের মধ্যে এই প্লান্টের নির্মাণ শেষ হয়ে সেবা প্রদান সম্ভব হবে। তবে অর্থায়নকারী প্রতিষ্টান ইউনিসেফ বলছে কাজ শেষ হতে আরও ৩ মাস লাগবে। এই অক্সিজেন প্লান্ট নির্মাণের দেখভাল ও অর্থায়ন করছেন ইউনিসেফ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউনিসেফের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, অক্সিজেন প্লান্ট নিমার্ণের জন্য স্থানীয় হাসপাতাল চাহিতাপত্র পাঠায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। এরকম ৩০ টি প্লান্ট সারাদেশে নির্মানের জন্য ইউনিসেফের সহযোগীতা চায় স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়। ইউনিসেফ দেশের ৩০ টি জেলায় এই প্লান্ট নির্মাণ করছে। মৌলভীবাজারে ২৫০ শয্যা হাসপাতালে একটি অক্সিজেন প্লান্ট নিমার্ণের শুরু হয় প্রায় ২ মাস আগে কিন্তু মধ্যে আবারও কাজ বন্ধ হয়। বর্তমানে লকডাউনের কারণে শ্রমিক সংকটে আবারও কমে গেছে কাজের গতি। তাই এই প্লান্ট চালু হতে হতে আর ৩ মাস লাগতে পারে।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, প্রথমে ১০০ বেডের জন্য এটি নিমার্ণের কথা থাকলেও পরে হাসপাতালের চাহিদা অনুসারে ২৫০ বেডের জন্য নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। যার কারণে ফাইল চালাচালি এবং দাপ্তরিক নিয়ম মেন্টেইন করতে সময় নষ্ট হয়েছে।
এদিকে ইউনিসেফের সিলেট বিভাগীয় কর্মকর্তা ডা. মির্জা ফজলে এলাহী জানান, ৬ হাজার লিটারের এই প্লান্ট নির্মাণে আমরা অগ্রাধিকার দিয়ে দ্রুত কাজ শেষের চেষ্টা করছি। এই কাজটি দ্বিতীয় ধাপে নির্মাণের কথা থাকলেও আমরা অগ্রধিকার দিয়ে প্রথম ধাপে নিয়ে এসেছি।
অন্যদিকে হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগীদের অধিকাংশেরই অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে। কিন্তু লিকুইড অক্সিজেন প্ল্যান্ট না থাকায় নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। বর্তমানে সিলিন্ডার দিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে ঝুঁকিতে পড়ছেন করোনায় আক্রান্ত রোগীরা।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্প্রেক্টা অক্সিজেন লিমাটেড’র জিডিএম মুখলেছুর রহমান রিপনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট থেকে নাম্বার নিয়ে অন্য আরও দুইজনের সাথে কথা বললে তারা সংবাদমাধ্যমকে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি ডা. শাব্বির হোসেন খান জানান, কাগজে কলমে প্রায় ৬ মাস আগে কাজ শুরু হলেও বাস্তবে ২ মাস আগেই শুরু হয়েছে, মধ্যে আবার কিছুদিন বন্ধ ছিল। দ্রুত সরকারী উদ্যোগে অক্সিজেন প্লান্ট তৈরী হয়ে গেলে এক দিকে রোগীরা যেমন চিকিৎসা পাবেন অন্যদিকে এখন রোগীদের অক্সিজেনের যে মূল্য দিতে হয় তাও এভাবে থাকবে না।
তিনি বলেন, যদি সরকার সিদ্ধান্ত নেয় রোগীদেরকে বিনামূল্যে অক্সিজেন সরবরাহ করা হবে, তাহলে তাদের চিকিৎসা ব্যয় অনেকটাই কমে যাবে। কোভিড চিকিৎসায় মূল ব্যয়টাই হচ্ছে অক্সিজেনের। ঔষধ সরকারীভাবে যা আছে, সেগুলো পাচ্ছে। কিছুটা কিনতেও হচ্ছে রোগীদেরকে। আর আরেকটি সুবিধা পাওয়া যাবে অক্সিজেন প্ল্যান্ট চালু হলে, সব রোগীর বিছানার কাছে অক্সিজেন পৌছে যাবে। এতে চিকিৎসা দ্রুত যেমন হবে, তেমনি চিকিৎসার মানও বেড়ে যাবে।
তবে হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. পার্থসারথি দত্ত কাননগো শুনিয়েছেন আশার কথা। তিনি বলেন, প্লান্ট নির্মাণের কাজ দ্রুত চলছে। ২ মাসে নির্মাণ কাজ শেষ হবে। বর্তমানে রোগীদের কোন সমস্যা হচ্ছে না, ৫০ টি অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে চিকিৎসা চলছে। প্রয়োজনে আরো ব্যবাস্থা করা হবে।