সিলেট-৩ উপ-নির্বাচন : নৌকা পেতে দৌড়ঝাঁপ, বিএনপিও নির্বাচন করবে
প্রকাশিত হয়েছে : ১:১৯:৫৫,অপরাহ্ন ২৪ মে ২০২১ | সংবাদটি ৪০৭ বার পঠিত
মেহের নিগার তাজকিয়া : সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে তিন ডজন নেতা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। নানাভাবে তারা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ব্যানার-পোস্টার টাঙিয়ে তারা প্রার্থিতার জানান দিচ্ছেন। শুভেচ্ছা-মতবিনিময়ও করছেন তারা। আসনটিতে কে প্রার্থী হতে যাচ্ছেন তা নিয়ে চলছে আলোচনা ও চুলচেরা বিশ্লেষণ।
সিলেট-৩ আসনের (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) সংসদ সদস্য এবং জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জনপ্রিয় নেতা মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১১ মার্চ মারা যান। তার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হয়। এরপর থেকেই মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ধরনা দিতে শুরু করেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি আসনটি চায়। আসনটি ছাড় দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের কাছে তারা জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানায়, আসনটিতে আওয়ামী লীগ এমপি ছিলেন তাই জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। এ উপনির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না। বিএনপি নির্বাচনে অংশ গ্রহন নিয়ে আলোচনা রয়েছেন দলটির একাধিক নেতা প্রার্থী হতে আগ্রহী বলে জানা গেছে।
দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে সিলেট-৩ আসন। এর ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৫৫ হাজার ৩০৯ জন। জুলাইয়ে সংসদীয় এ আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের এ ঘোষণার পর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে প্রার্থীর দীর্ঘ লাইন পড়েছে। দলের উপরের সারি থেকে শুরু করে মধ্যম সারি এমনকি নিচের সারির অনেক নেতা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে তৎপর।
এ পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেতে বেশ কয়েকজন নেতা মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁদের প্রায় সকলেই দলীয় মনোনয়ন নিতে কেন্দ্রীয় নীতি নির্ধারণী ও তৃণমূলে পর্যায়ে লবিং করছেন। এর মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন প্রয়াত এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর স্ত্রী ফারজানা সামাদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান গৌছ সুলতান, বিএমএ’র কেন্দ্রীয় মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সিলেট জেলা বারের পিপি এডভোকেট নিজাম উদ্দিন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ শমশের জামাল, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ম্যানচেষ্টার শাখার সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা স্যার এনাম উল ইসলাম, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ত্রান ও সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ও সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, সহকারী এর্টনী জেনারেল ও বাংলাদেশ এ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য এডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক আ.স.ম মিসবাহ।
বিএনপির আলোচনায় আছেন সাবেক সংসদ সদস্য শফি আহমেদ চৌধুরী, যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার এমএ সালাম ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এমএ মালেক। এক সময় জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসাবে পরিচিত এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান ও শিল্পপতি নজরুল ইসলাম বাবুলের নাম শোনা যাচ্ছে।
এদিকে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার অভিযোগ তুলে সিলেট-৩ আসনসহ চারটি সংসদীয় আসনে আসন্ন উপনির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। আজ রোববার গুলশানে চেয়ারপারসন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমা এলাকার বেশ কয়েকজন ভোটারের সাথে কথা বলে সিলেট- ৩ আসনে তাদের প্রার্থী পছন্দ ও অপছন্দের বিষয়টি উঠে এসেছে। অধিকাংশ সাধারণ ভোটার মনে করেন, যে প্রার্থী রাজনৈতিকভাবে কেন্দ্রের সু পরিচিত, আস্থাবান, শিক্ষিত ও প্রজ্ঞাবান, নির্বাচনী এলাক্রা সন্তান এমনকি যিনি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে প্রভাব বিস্তারে সক্ষম, সে রকম প্রার্থীর মাধ্যমেই জনগণের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলণ ঘটবে। অনেকে মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর অসমাপ্ত উন্নয়নের জন্য এলাকার সন্তান মিসবাহ সিরাজের প্রতিই তাদের আস্থার কথা তুলে ধরেছেন।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ফারজানা সামাদ চৌধুরী বলেন, আমি মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ। অতীতের প্রতিটি সংসদ নির্বাচনে আমি কাজ করেছি। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে যে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলছে তা অব্যাহত রাখতে এবং প্রয়াত এমপির অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে দল আমাকে মানোনয়ন দিলে মানুষের খেদমত করব। দলের নেতাকর্মীরা আমার প্রতি যে ভালোবাসা দেখিয়েছেন তাতে আমি অভিভূত।
বিএনপি নেতা আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, দলের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন হলে তার দল অংশ নেবে না। তবে সংগঠন যদি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে আমি নির্বাচনে প্রার্থী হব।