১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওর মাধ্যমে বেতন-ভাতাদির সরকারি অংশ দেওয়া শুরু হয়। সে বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ঢাকা বিভাগে এবং ডিসেম্বর মাস থেকে খুলনা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগে সর্বপ্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক এমপিও শিটের মাধ্যমে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেয়ার সূচনা হয়। কিন্তু এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদির সরকারি অংশ দেওয়া সংক্রান্ত জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা সর্বপ্রথম শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি হয় ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে।
জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালার ধারাবাহিক পথ পরিক্রমা:
১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার সরকারি অংশ প্রদান এবং জনবল কাঠামো সম্পর্কিত পৃথক পৃথক চারটি নীতিমালা জারি হয়। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য সমন্বিতভাবে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ) শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদির সরকারি অংশ প্রদান এবং জনবল কাঠামো সম্পর্কিত নির্দেশিকা জারি করা হয়। পরবর্তীতে সে জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা সংশোধিত আকারে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ আগস্ট ও ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ মার্চ জারি হয়।
মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দেরর ৩০ নভেম্বর জারি হওয়া প্রজ্ঞাপনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পূণর্গঠিত করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ নামে দুটি বিভাগ সৃষ্টি করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জুন স্কুল ও কলেজে জন্য বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল ও কলেজ) এর জনবল কাঠামো এবং এমপিও নীতিমালা-২০১৮ এবং কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগ থেকে সে বছরের ১৯ জুলাই মাদরাসার জন্য ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদরাসা) জনবল কাঠামো এবং এমপিও নীতিমালা-২০১৮ ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জনবল কাঠামো এবং এমপিও নীতিমালা-২০১৮ জারি করা হয়।
সর্বশেষ, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ জুলাই কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ থেকে জারিকৃত জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা সংশোধন করে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ নভেম্বর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদরাসা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ (২৩ নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সংশোধিত) এবং বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জনবল কাঠামো এবং এমপিও নীতিমালা-২০১৮ [ ভোকেশনাল, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা (বিএম), কৃষি ডিপ্লোমা ও মৎস্য ডিপ্লোমা] (২৩ নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সংশোধিত) জারি করা হয়। অন্যদিকে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ মার্চ স্কুল ও কলেজের জন্য বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো এবং এমপিও নীতিমালা-২০২১ জারি করা হয়।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) সর্বশেষ জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা:
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ মার্চ জারি হওয়া স্কুল ও কলেজের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো এবং এমপিও নীতিমালা-২০২১ জারি করা হয়, যা বাংলাদেশে সর্বশেষ জনবল কাঠামো এবং এমপিও নীতিমালা। এই নীতিমালা জারির পর কতিপয় ব্যক্তি ও সংগঠন কিছু কিছু বিষয়ে সমালোচনা করলেও একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ অক্টোবরের থেকে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ মার্চ পর্যন্ত জারিকৃত জনবল কাঠামো ও নীতিমালার মধ্যে এটিই সর্বোৎকৃষ্ট। ভালোর যেহেতু কোনো শেষ নেই এবং চাহিদারও কোনো অন্ত নেই, তাই একশত ভাগ সুন্দর, নিখুঁত এবং সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য কোনো জনবল কাঠামো এবং এমপিও নীতিমালা প্রত্যাশা করা কঠিন। তবে কিছু কারণে এই জনবলকাঠামো এবং এমপিওনীতিমালাকে সহজবোধ্য, যথেষ্ট শিক্ষক বান্ধব ও স্বয়ংসম্পূর্ণ বলা যেতে পারে:
১. ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ মার্চ জারিকৃত জনবলকাঠামো এবং এমপিও নীতিমালায় বিদ্যালয় (নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়) ও কলেজের (উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ, ডিগ্রি কলেজ) পাশাপাশি সংগীত কলেজ, শরীরচর্চা কলেজ, চারুকলা কলেজ, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ, বিকেএসপি ও নৈশকালীন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ বিশেষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা করে প্রয়োজনে এমপিওভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে {অনুচ্ছেদ: ৩ (৩.১-৩.৩৩)}।
২. প্রথমবারের মতো এমপিওভুক্তির সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শব্দের ‘সংজ্ঞা’ বা ‘ব্যাখ্যা’ প্রদান করা হয়েছে {অনুচ্ছেদ: ৪ (৪.১-৪.২৩)}।
৩. বিদ্যালয় ও কলেজে জনবল-এর প্রয়োজন অনুযায়ী এবং চাহিদার নিরিখে অতিরিক্ত শিক্ষক-কর্মচারী পদ সৃষ্টি করা হয়েছে {অনুচ্ছেদ: বিদ্যালয় : ৬.১ (ক-গ) এবং কলেজ : ৬.১ (ঘ-ঙ)}।
৪. বিদ্যালয়ের শাখায় শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বিষয়ক্রমের পরিবর্তে বিদ্যালয়ের চাহিদাকে গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে {অনুচ্ছেদ: ৬.২ (ক-খ)}।
৫. জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০২১ অনুসারে প্রথমবারের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (স্কুল ও কলেজে) শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মহিলা কোটার কঠোরতা বাদ দিয়ে অনগ্রসর গোষ্ঠী, দুর্গম পাবর্ত্য এলাকা, পিছিয়ে পড়া এলাকা, বস্তি, হাওড়-বাওড়, চরাঞ্চল, ছিটমহল প্রভৃতি এলাকায় বাস্তবতা বিবেচনায় শিক্ষা মন্ত্রণায়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ সময়ে সময়ে পরিপত্রের মাধ্যমে কোটার বিষয়ে আদেশ জারি করতে পারবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে (অনুচ্ছেদ: ৯.৬ )।
৬. প্রথমবারের মতো ২০২১-এর এমপিও নীতিমালায় এমপিওভুক্ত কলেজ ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক বা সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির হার ৫:২ এর পরিবর্তে ৫০ শতাংশ করা হয়েছে (অনুচ্ছেদ: ১১-৪)।
৭. জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০২১ অনুসারে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা উচ্চতর পদ বা সমপদে পদে নিয়োগ, পদ পরিবর্তন বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন, সিলেকশন গ্রেড বা উচ্চতর স্কেল প্রাপ্তিতে ফিক্সেশন বেনিফিট প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে {অনুচ্ছেদ: ১১.৭ (ক-ঙ)।
৮. বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো ‘সিনিয়র শিক্ষক’ পদ সৃষ্টি করা হয়েছে (অনুচ্ছেদ: ১১.৮-১১.৯)।
৯. বেসরকারি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদকে ‘অধ্যক্ষ’ পদে উন্নীত করে বেতন স্কেল বৃদ্ধি করা হয়েছে (অনুচ্ছেদ: ১১.২৩)।
১০. জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০২১ অনুসারে প্রথমবারের মতো নিয়মিত ও অ্যাডহক কমিটি এবং প্রতিষ্ঠান প্রধানের অবর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা উত্তোলনের সুব্যবস্থার নিদেশনা প্রদান করা হয়েছে (অনুচ্ছেদ: ১৭.১০)।
শুধু এগুলোই নয়, আরো কিছু কিছু বিষয়ে নতুন নির্দেশনা প্রদান করে এই নীতিমালাকে যথেষ্ট যুগোপযোগী করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অনুচ্ছেদ: ১১.৫ (প্রভাষক পদে ১৬বছর চাকরিপূর্তিতে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক বা সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি), অনুচ্ছেদ:১১.১৭ (এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী একই সাথে একাধিক পদে নিয়োজিত থাকার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা), অনুচ্ছেদ:১৩ (জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণে একাডেমিক পরীক্ষার ফলাফল অন্তর্ভুক্ত) ইত্যাদি।
জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালার সুষ্ঠু বাস্তবায়নে কতিপয় সমস্যা ও সম্ভাব্য সমাধান:
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো এবং এমপিও নীতিমালা-২০২১কে সহজবোধ্য, শিক্ষক-বান্ধব ও স্বয়ংসম্পূর্ণ বলা হলেও নীতিমালা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এসব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হলে একদিকে যেমন এই নীতিমালার নির্দেশনাসমূহ দ্রুত বাস্তবায়িত হবে, অন্যদিকে, শিক্ষক-কর্মচারীগণও সকল সেবা দ্রুত লাভ করতে সক্ষম হবেন। এধরনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু সমস্যা তুলে ধরে সম্ভাব্য সমাধানের উপায় সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো:
১. শিক্ষকতার পেশাগত উন্নয়নে প্রত্যেক শিক্ষকের শিক্ষায় ডিগ্রি গ্রহণ অনস্বীকার্য। একারণে জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০২১ অনুসারে এমপিওভুক্ত নিম্ন-মাধ্যমিক বা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষায় ডিগ্রিবিহীন কোনো সহকারী শিক্ষক বা সহকারী মৌলভি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পাঁচ বছরের মধ্যে এবং ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ মার্চ তারিখের আগে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষায় ডিগ্রিবিহীন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা এ জনবলকাঠামো জারির পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে এ নীতিমালায় উল্লিখিত প্রতিষ্ঠান হতে শিক্ষায় ডিগ্রি (বিএড/বিএমএড/সমমান-যাদের ক্ষেত্রে এ সকল ডিগ্রি প্রযোজ্য) অর্জন করতে পারবেন (অনুচ্ছেদ: ১১-৩)। কিন্তু অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষায় ডিগ্রিবিহীন শিক্ষকরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শিক্ষায় ডিগ্রি (বিএড/বিএমএড/সমমান ইত্যাদি কোর্সে) গ্রহণের জন্য ছুটি বা ডেপুটেশন বা অনুমতি পান না। অনেক ক্ষেত্রে ওইসব কোর্সে ভর্তির পরও অনেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অনুমতি বা ছাড়পত্র পান না। আবার অনেক শিক্ষকও শিক্ষায় ডিগ্রি গ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করেন না।
এ সমস্যার সমাধানকল্পে প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষায় ডিগ্রিবিহীন শিক্ষকবৃন্দ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শিক্ষায় ডিগ্রি গ্রহণের জন্য যাতে ছুটি বা ডেপুটেশন বা অনুমতি পান অথবা শিক্ষকরা যাতে বাধ্যতামূলকভাবে শিক্ষায় ডিগ্রি গ্রহণ করেন সে বিষয়ে প্রশাসনিক নির্দেশনা জারি করা প্রয়োজন।
২. জ্যেষ্ঠ প্রভাষক বা সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির হার ৫:২ এর পরিবর্তে ৫০ শতাংশ করা হয়েছে (অনুচ্ছেদ: ১১-৪)। কিন্তু পদোন্নতি প্রদানের জন্য একটি কমিটি মোট ১০০ নম্বরের মূল্যয়ন সূচকে কৃতকার্যদের পদোন্নতি প্রদান করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ মার্চ নীতিমালা জারি হলেও মূল্যায়ন কমিটি গঠিত না হওয়ায় পদোন্নতি বিঘ্নিত হচ্ছে। পরবর্তীতে পদোন্নতি পেলেও বকেয়া প্রদানের বিষয়ে নীতিমালার ১১.১৬ অনুচ্ছেদে নিষেধাজ্ঞা থাকায় পদোন্নতি প্রাপ্য প্রভাষকরা সেবাবঞ্চিত হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে।
দ্রুততার সাথে পদোন্নতি প্রদানের জন্য ‘পদোন্নতি মূল্যয়ন কমিটি’ গঠন করা এবং পদোন্নতিপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ প্রভাষক বা সহকারী অধ্যাপকদের এমপিও নীতিমালার নির্দেশনা (অনুচ্ছেদ: ১১.১৬ ) বহাল রেখে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ মার্চ তারিখের পর থেকে উচ্চতর পদের বকেয়া প্রদান করা (যার যে তারিখ থেকে প্রাপ্য ) প্রয়োজন।
৩. জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০২১ অনুসারে প্রথমবারের মতো এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা উচ্চতর পদে নিয়োগ, উচ্চতর স্কেল প্রাপ্তি, জ্যেষ্ঠ প্রভাষক বা সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি প্রভৃতির জন্য ফিক্সেশন বেনিফিটসহ পূর্ণাঙ্গ আর্থিক সুবিধাদি পাবেন। ফলে সুবিধাপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা মূল বেতন বর্তমানে তার আহরিত বেতনের চেয়ে কোনো ক্রমেই কম হবে না বলে নীতিমালায় উল্লেখ আছে{অনুচ্ছেদ: ১১.৭ (ক-ঙ)}। এরপরও মাঠ পর্যায়ে অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারী উচ্চতর স্কেল প্রাপ্তিতে যথাযথভাবে ফিক্সেশন বেনিফিট পাচ্ছেন না। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনসহ নীতিমালা জারি করা হলেও অনেক মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা অর্থ মন্ত্রণালয়ের পৃথক আদেশ চান, ইএমআইএস সফটওয়ারে উচ্চতর স্কেলের নির্দিষ্ট ধাপে বেতন ফিক্সেশনের সুযোগ থাকলেও অনেক কর্মকর্তা মূল বেতনের প্রারম্ভিক ধাপ ছাড়া প্রস্তাব প্রেরণ বা অনুমোদন করেন না। অন্যদিকে, উচ্চতর স্কেলে প্রারম্ভিক ধাপে এমপিও পেয়ে পরবর্তীতে ফিক্সেশন অনুযায়ী বকেয়া দাবি করলে বকেয়া প্রাপ্তিতেও সমস্যার সৃষ্টি হয়।
এ সমস্যা সমাধান কল্পে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ফিক্সেশন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত জুম প্রশিক্ষণের আয়োজন করা এবং উচ্চতর পদে নিয়োগ, উচ্চতর স্কেল প্রাপ্তি, জ্যেষ্ঠ প্রভাষক বা সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ফিক্সেশন বেনিফিটসহ পূর্ণাঙ্গ আর্থিক সুবিধাদি প্রদানের জন্য প্রশাসনিক নির্দেশনা দেয়া প্রয়োজন।
উপসংহার:
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদির সরকারি অংশ প্রদানের ক্ষেত্রে জনবল কাঠামো এবং এমপিও নীতিমালার কোনো বিকল্প নেই। কারণ এমপিও নীতিমালায় বেতন-ভাতা প্রদান ও কর্তনের সকল নিয়ম-কানুন, বিধি-বিধান, জনবল, পদসংখ্যা, বেতন-ভাতা, অভিজ্ঞতা, সংশ্লিষ্ট সকলের দায়িত্ব-কর্তব্যসহ সরকারের এ সংক্রান্ত পলিসি প্রভৃতি বিশদভাবে লিপিবদ্ধ থাকে। যুগোপযোগী এবং সময়ের দাবি ও চাহিদার সাথে সমন্বয় করে জনবল কাঠামো এবং এমপিও নীতিমালা প্রণীত হয়। ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে ২৪ অক্টোবর থেকে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ মার্চ পর্যন্ত দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় বারবার এমপিও. নীতিমালা প্রণীত, সংশোধিত, বাতিল হয়েছে আবার নতুনভাবে নীতিমালা প্রণীত হয়েছে। জনবল কাঠামো এবং এমপিও নীতিমালা পরিবর্তন-পরিবর্ধনযোগ্য একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। সুতরাং এখানে শেষ বলে কোনো কিছু নেই। সর্বশেষে প্রণীত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো এবং এমপিও নীতিমালা-২০২১ ও একদিন পরিবর্তন হয়ে আবার নতুন জনবল কাঠামো এবং এমপিও নীতিমালার আবির্ভাব ঘটবে। এ নীতিমালার বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধান হলে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা যথেষ্ট উপকৃত হবেন বলে আশা করা যায়।
লেখক: ড. সাধন কুমার বিশ্বাস, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত উপপরিচালক (মাধ্যমিক) এবং মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার স্পেশালিস্ট (ন্যাশনাল কনসালটেন্ট), সেসিপ।