ইউপি নির্বাচনে কুলাউড়ায় নৌকার জয়জয়কার ; আ.লীগ ৭ ও স্বতন্ত্র ৬
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:২৫:১৩,অপরাহ্ন ২৯ নভেম্বর ২০২১ | সংবাদটি ৪৫৪ বার পঠিত
রাহেলা সিদ্দিকা, কুলাউড়া থেকে : মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ১৩ ইউনিয়নে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া,ব্যালরট ছিনাতাই ঘটনার মাধ্যমে রোববার (২৮ নভেম্বর) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের মধ্যে রয়েছেন- আ.লীগের ৭ জন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ৬ জন। এছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বিদের মধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যান ৪ জন পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন।
ভোটগ্রহণ শেষে রাতে কুলাউড়া উপজেলা পরিষদ হলরুমে ১৩ ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত ৬ জন রিটার্নিং অফিসাররা তাদের স্ব স্ব ইউনিয়নের ফলাফল ঘোষণা করেন।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী প্রার্থীরা হলেন- বরমচাল ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান খোরশেদ আহমদ খান সুইট (স্বতন্ত্র) ৬৪৩৫ ভোট পেয়ে বেসরকারী ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্ধন্দী আবুল হোসেন খসরু (আ.লীগ) পেয়েছেন ২৯৩১ ভোট,
ভূকশিমইল ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান (স্বতন্ত্র) ৬৫৯৮ ভোট পেয়েনির্বাচিত হয়েছেন, তার নিকটতম প্রতিদ্ধন্দী মো. মইনুল ইসলাম সোহাগ (আ.লীগ)পেয়েছেন ৫৫০৮ ভোট।
ভাটেরা ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান সৈয়দ একেএম নজরুল ইসলাম (স্বতন্ত্র) ৩৪৮৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন, তার নিকটতম প্রতিদ্ধন্দী কামাল ইবনে শহীদ চৌধুরী (স্বতন্ত্র) পেয়েছেন ২১৪০ ভোট ও জুবায়ের সিদ্দিকী (আ.লীগ) পেয়েছেন ২৭৭৯ ভোট।
জয়চন্ডী ইউনিয়নে মো. আব্দুর রব মাহাবুব (আ’লীগ) নৌকা) ৯৫৬৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিতহয়েছেন, তার নিকটতম প্রতিদ্ধন্দী বর্তমান চেয়ারম্যান কমর উদ্দিন আহমদ কমরু (স্বতন্ত্র) পেয়েছেন ৬৪৬২ ভোট।
ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান মমদুদ হোসেন (আ.লীগ) ৮৬৪৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন, তার নিকটতম প্রতিদ্ধন্দী খান ময়নুল হোসেন (স্বতন্ত্র) পেয়েছেন ৪৫৮২ ভোট।
কাদিপুর ইউনিয়নে জাফর আহমদ গিলমান (আ.লীগ) ৭১৩৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন, তার নিকটতম প্রতিদ্ধন্দী বর্তমান চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান সালাম (স্বতন্ত্র) পেয়েছেন ৩০৪৮ ভোট এবং আব্দুল মুহিত (স্বতন্ত্র) পেয়েছেন ২৫৩৯ ভোট।
কুলাউড়া সদর ইউনিয়নে মোছাদ্দিক আহমদ নোমান (আ.লীগ) ৩১১৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন, তার নিকটতম প্রতিদ্ধন্দি বর্তমান চেয়ারম্যান নার্গিস আক্তার বুবলি (স্বতন্ত্র) পেয়েছেন ২৯৮৯ ভোট।
টিলাগাঁও ইউনিয়নে মো. আব্দুল মালিক (আ.লীগ) ১০,৩৬৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন, তার নিকটতম প্রতিদ্ধন্দি বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল মালিক (স্বতন্ত্র) পেয়েছেন ৬১১৯ ভোট।
হাজীপুর ইউনিয়নে ওয়াদূদ বক্স (আ.লীগ) ৬৬৩০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন, তার নিকটতম প্রতিদ্ধন্ধি বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল বাছিত বাচ্চু (স্বতন্ত্র) পেয়েছেন ৩৩২০ ভোট।
রাউৎগাঁও ইউনিয়নে মো. আকবর আলী (আ.লীগ, নৌকা) ৪৭২৩ ভোট, তার নিকটতম প্রতিদ্ধন্ধি বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল জামাল (স্বতন্ত্র) পেয়েছেন ৩৫৯১ ভোট।
কর্মধা ইউনিয়নে মো. মুহিবুল ইসলাম আজাদ (স্বতন্ত্র) ১১,১২৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন, তার নিকটতম প্রতিদ্ধন্দি বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আতিকুর রহমান (আ.লীগ) পেয়েছেন ৪২৪৯ ভোট।
পৃথিমপাশা ইউনিয়নে এম জিমিউর রহমান চৌধুরী (স্বতন্ত্র) ৬৬৭১ ভোট মো. তার নিকটতম প্রতিদ্ধন্দি সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ (স্বতন্ত্র) পেয়েছেন ৪০৬০ ভোট এবং বর্তমান চেয়ারম্যান নবাব আলী বাকর খাঁন (স্বতন্ত্র) পেয়েছেন ৩৮২৩ ভোট।
শরীফপুর ইউনিয়নে মো. খলিলুর রহমান (স্বতন্ত্র) ৫৬৭৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন, তার নিকটতম প্রতিদ্ধন্ধি মোহাম্মদ চিনু মিয়া (আ.লীগ) পেয়েছেন ২৯৬০ ভোট।
সকাল ৮.০০টায় শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ শুরু হলেও দুপুরের দিকে কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই ও নৌকার সিলমারা ব্যালট উদ্ধার নিয়ে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বদরুল ইসলাম (৩০)নামে একজন আহত হয়েছেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে রাবার বুলেট ও গ্যাস গান নিক্ষেপ করে। উপজেলার বরমচাল, ভূকশীমইল, ব্রাহ্মণবাজার ও কুলাউড়া সদর ইউনিয়নের ৭ টি কেন্দ্রে সংঘর্ষ এবং উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বরমচালে নন্দনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুপুর ১২ টার দিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী খুরশেদ আলম খান সুইটের সমর্থকরা কেন্দ্র থেকে ব্যালট পেপার নিয়ে যাওয়ার সময় প্রতিদন্ধী প্রার্থীর সমর্থকদের হাতে ধরা পড়েন। এ সময় একজনকে হাতেনাতে ধরে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। এই ইউনিয়নের একই সময় বরমচাল স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রের নৌকার সীলমারা প্রায় ৪০ টি ব্যালট পেপার উদ্ধার করেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকরা। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হলে প্রায় আধাঘণ্টা ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে ভোটগ্রহণ স্বাভাবিক হয়।
দুপুর আড়াইটার দিকে নন্দনগর কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল হোসেন খসরু ও বিদ্রোহী প্রার্থী খোরশেদ আলম খান সুইটের সমর্থকদের মধ্যে ফের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে বদরুল ইসলাম নামে এক যুবক আহত হোন। এ সময় মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৫০ রাউন্ড রাবার বুলেট ও গ্যাস গান ছুড়া হয়।
এদিকে ভূকশীমইলের কানেহাত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এবং বাদেভূকশিমইল মোহাম্মদিয়া এবদেতায়ী মাদ্রাসা ভোট কেন্দ্রে জাল ভোট এবং কেন্দ্র দখল নিয়ে আওয়ামী লীগের মইনুল ইসলাম সোহাগের ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আজিজুর রহমান মনিরের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামিলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রেনুর সাথে ২০/২৫ জন উছৃঙ্খল আওয়ামি সমর্থক ভোটে কেন্দ্রে প্রবেশ করে বলপূর্বক ভোট প্রদানের চেষ্ঠা করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ছুঁড়ে।
কুলাউড়া সদর ইউনিয়নে গাজীপুর চা বাগান কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী মোছাদ্দিক আহমদ নোমান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জুবের আহমদ খানের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। ওই ইউনিয়নে হোসেনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগে নৌকার প্রার্থীকে আটক করেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখান থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে উদ্ধার করে নিয়ে যান। এদিকে ভোট গ্রহণ শেষ হলেও বরমচালে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
উল্লেখ্য, এবারের নির্বাচনে ১৩ চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থী ১৩ জন, লাঙ্গলের ১ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ৫ জন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ৩৭ জনসহ মোট ৫৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।