ডেস্ক নিউজ : আজ ৯ ডিসেম্বর, বেগম রোকেয়া দিবস। প্রতিবারের মতো এ বছরও যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালিত হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। এ উপলক্ষে বিশেষ ক্রোড়পত্র, পোস্টার, বুকলেট ও স্যুভেনির প্রকাশিত হয়েছে। যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদযাপনের লক্ষ্যে দেশব্যাপী জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়ার কর্ম ও আদর্শ সামনে রেখে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের অনন্য অর্জনের জন্য প্রতি বছর ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া পদক প্রদান করা হয়। নারী জাগরণের অগ্রদূত মহীয়সী এই নারী বেগম রোকেয়ার জন্ম ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর, রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে। মৃত্যুবরণও করেন একই দিন ১৯৩২
সালের ৯ ডিসেম্বরে। সে সময় মুসলিম সমাজে মেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর কোনো চল ছিল না। তাই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও পরিবারে সবার অগোচরে তার বড় ভাইয়ের কাছে উর্দু, বাংলা, আরবি ও ফারসি পড়তে এবং লিখতে শেখেন। তার জীবনে শিক্ষালাভ ও মূল্যবোধ গঠনে বড় ভাই ও বোন উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন। পরবর্তীকালে বিহারের ভাগলপুরে সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয়। স্বামীর উত্সাহে ও নিজের আগ্রহে তিনি লেখাপড়ার প্রসার ঘটান। বেগম রোকেয়া ২০০৪ সালে বিবিসি বাংলার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি’ জরিপে ষষ্ঠ নির্বাচিত হন। তিনি প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক হিসেবে পরিচিত। তার উল্লেখযোগ্য রচনাগুলো হলো—মতিচূর, সুলতানার স্বপ্ন, পদ্মরাগ, অবরোধ-বাসিনী।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, বেগম রোকেয়া শুধু নারী শিক্ষার অগ্রদূতই ছিলেন না, তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী, নিবেদিত প্রাণ একজন সমাজকর্মী। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে বেগম রোকেয়া তার শানিত অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে উপলব্ধি করেছিলেন যে, সমাজে নারীর অধস্তন অবস্থা নারী উন্নয়নের পথে প্রধান অন্তরায়। তাই তার চিন্তা-ভাবনা-উদ্বেগ সর্বক্ষণ আবর্তিত ছিল নারী জাগরণ ও সম-অধিকার প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন, বাংলাদেশে নারী শিক্ষার প্রসার ও নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন পথিকৃৎ। তিনি বিশ্বাস করতেন দেশকে এগিয়ে নিতে হলে এবং সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হলে নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করা ছাড়া তা সম্ভব নয়। তাই তিনি জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য আসন সংরক্ষিত রাখার বিধান করেন। ১৯৭২ সালেই চাকরির ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করেন।
এ বছর বেগম রোকেয়া দিবসে পাঁচ জন বিশিষ্ট নারীকে ‘বেগম রোকেয়া পদক’ প্রদান করা হবে। তারা হলেন, নারী শিক্ষায় অবদানের জন্য কুমিল্লা জেলার অধ্যাপক হাসিনা জাকারিয়া বেলা। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায়, যশোর জেলার অর্চনা বিশ্বাস। নারীর আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য কুমিল্লার শামসুন্নাহার রহমান পরাণ (মরণোত্তর)। সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাধ্যমে নারী জাগরণের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও রোকেয়া হলের প্রভোস্ট ড. জিনাত হুদা। পল্লি উন্নয়নে অবদান রাখায় কুষ্টিয়া জেলার গবেষক ড. সারিয়া সুলতানা।
আজ সকাল ১০টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে দিবসের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করবেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। এই অনুষ্ঠানেই বেগম রোকেয়া পদক-২০২১ প্রদান করা হবে।