বড়লেখায় সুদখোর প্রতারক কাওসার মুল্লা ও তার সিন্ডিকেট আগের চেয়ে আরো ভয়ঙ্কর
প্রকাশিত হয়েছে : ১:৫৯:৩৭,অপরাহ্ন ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | সংবাদটি ৬৩৬ বার পঠিত
বড়লেখা প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ এলাকায় সক্রিয় দুর্ধর্ষ প্রতারক ও সুদখোর কাওসার মুল্লা ও তার গঠিত সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের প্রতানার ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছেন সহজ সরল প্রবাসী হাজী তাজ উদ্দিন সহ শতশত মানুষ।। বিশেষ করে হাজী তাজ উদ্দিনের প্রবাসজীবনের সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে এ ভয়ংকর প্রতারক সিন্ডিকেট। এমন অভিযোগ নিয়ে তাজউদ্দিন প্রতিকার চেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে হন্য হয়ে ফিরছেন।
কে সেই কাওসার মুল্লা/ মৌলানা কাওসার ?
খোঁজ নিয়ে জানা যায়- সিলেট জেলার বিয়ানী বাজার উপজেলার ১১নং লাউতা ইউনিয়নের লাউতা গ্রামের মৃত শওকত আলীর ছেলে কাওসার আহমদ। বর্তমানে সে মৌলভীবাজারের জেলার বড়লেখা থানার দক্ষিণ ভাগ ইউনিয়নের দোহালিয়া(পশ্চিম দক্ষিণভাগ) গ্রামের বাসিন্দা, সুজন খাঁ (কথিত সুজন সখার) পুত্র বলে পরিচিত। তার এনআইডির তথ্য অনুযায়ী সে বিয়ানীবাজারের বাসিন্দা। তবে উভয় এলাকাতেই তার পিতৃ পরিচয় নিয়ে নানা ধরনের বিভ্রান্তি ও জনশ্রোতি রয়েছে। বাস্তবে কাওসার মুল্লা নিজেই ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় নিজের পিতার আলাদা আলাদা নাম বলে থাকেন। তিনি কোন পিতৃপরিচয়হীন পথশিশু কিনা সে বিষয়ে মানুষের মাঝে রয়েছে নানা ধুয়াশা। তিনি আবার বড়লেখার টিলাবাজার মোহাম্মদিয়া কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক ও মুহতামিম। মাদ্রাসা শিক্ষক হলেও সরকারী-বেসরকারী অফিস আদালতে নিজেকে কখনো ব্যবসায়ী, কখনো মাইক্রোক্রেডিট ব্যবসায়ী, কখনো আবার মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল বলে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে থাকেন। মূলত তিনি বৈধ কোন ব্যবসায়ী নন। মাদ্রাসার নামে চাঁদাবাজি, বেআইনী দাদন(সুদের) ব্যবসা, একে ৮গুণ ও ১০গুণ হারে সুদ গ্রহণ, প্রতারনার মাধ্যমে সহজ-সরল মানুষদের ঋণের ফাঁদে আটকিয়ে অধিক টাকা আদায়ই তার একমাত্র পেশা ও নেশা। কাগজে কলমে মাত্র সাড়ে ৭ হাজার টাকা বেতনে কওমী মাদ্রাসার শিক্ষক হয়ে এখন তিনি কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক। মৌলভীবাজারের বড়লেখা ছাড়াও সিলেট শহর ও শহরতলিতে রয়েছে তার একাধিক বাসা-বাড়ি ও নিজস্ব গাড়ি।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, উক্ত কাওসার মুল্লা টিলাবাজার মোহাম্মদিয়া কওমি মাদ্রাসার মুহতামিমের পদ লাভের পর নানা ভাবে প্রতারনার ফাঁদ পাতেন। তিনি আবার জাদুটোনায় অত্যন্ত পাকা একজন কবিরাজও। ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে সাধারণের বাড়ীতে আন্তরিক হওয়ার মাধ্যমে তিনি স্বামী স্ত্রীতে, ভাইয়ে বোনে ,ভাইয়ে- ভাইয়ে ঝগড়া বাঁধিয়ে নিজ অবৈধ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় পার্শ্ববর্তী জুড়ী উপজেলার কাতার প্রবাসী হাজী তাজ উদ্দিনের সাথে গড়ে তুলেন বন্ধুত্বের সম্পর্ক। ধর্মপ্রাণ সহজ সরল তাজ উদ্দিন মাদ্রসার কল্যান ও অর্থ কালেকশন করে দেয়ার স্বার্থে কাওসারকে কাতারের একটি ফ্রী ভিসা দিয়ে যাওয়া আসা করার সুযোগ করে দেন।। তাজ উদ্দিনকে জিম্মায় রেখে কাতারে বিলাসবহুল ভাড়া বাসায় থাকেন। আরবি, পাকিস্তানি ,ভারতীয়, বিভিন্ন ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাদ্রাসার নাম কোটি কোটি টাকা চাঁদা কালেকশন করেন। এভাবে তিনি কয়েকবার কোটি কোটি টাকা চাঁদা কালেকশন করলেও নামমাত্র টাকা মাদ্রাসার তহবিলে জমা দিয়ে সাকুল্য টাকা আত্মসাত করেন। গড়ে তুলেন সুদের ব্যবসাসহ নানান অবৈধ ব্যবসার সিন্ডিকেট। এমনকি কাতারস্থ লাখ লাখ টাকা বাসা ভাড়া না দিয়েই দেশে চলে আসেন। ফলে সেখানকার বাসা ভাড়া বাংলাদেশী টাকায় ৪৫ লক্ষ টাকা পরিশোধ করত হয় নিরুপায় তাজ উদ্দিনকেই।
অপরদিকে দেশে তাজউদ্দিনের পাঁচ তলা মার্কেট বানিয়ে দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা এনে দু’তলার কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই কাজ বন্ধ করে টাকার হিসাব না দিয়ে টাকা আত্মসাত করে দীর্ঘদিন থেকে অনেকটা পালিয়ে বেড়াচ্ছে প্রতারক কাওসার মুল্লা। ২০১৭ সালে তাজ উদ্দিন একেবারে দেশে চলে আসলে মেয়ের বিয়েসহ অন্যান্য কাজে ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়লে কাওসার মুল্লার কাছে পাওনা টাকা চাইলে সে তাৎক্ষনিক অপরগতা প্রকাশ করে সময় চায়। তখন হাজী তাজ উদ্দিনের অসাহয়ত্বের সুযোগে তাঁর(তাজ উদ্দিন) মার্কেটের ২শতক ভূমির কাগজ ও কয়েকটি বøাংঙ্ক চেক নিয়ে তাজ উদ্দিনকে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ৬ মাস মেয়াদে ঋণ দেয় কাওসার। পরে প্রতারনার আশ্রয়ে এই বøাঙ্ক চেক দিয়ে এনআই অ্যাক্টের মামলা প্রসেসের ভয় দেখিয়ে তাজ উদ্দিন পরিবারের কাছে সাড়ে ৭লাখ টাকার বদলে সুদসহ ১৪লাখ৫০ হাজার টাকা আদায় করে কাওসার। সমুদয় টাকা হাজী তাজউদ্দিনের বড়ভাই হাজী আলাউদ্দিনের একাউন্ট থেকে পরিশোধ করা হয়, যার ব্যাংক স্টেম্যান্ট গণমাধ্যমকে প্রদর্শন করেন আলাউদ্দিন।
এর আগে তাজ উদ্দিন প্রবাসে থাকাকালে মৌলানা কাউসার সিলেট শহরতলী দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি এলাকায় ১০ শতক জমি তাজ উদ্দিনের নামে কিনে দেয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে ১১লাখ টাকা আনেন। পরে ঐ জমি এককভাবে তাজ উদ্দিনের নামে দলিল না করে কাওসার মুল্লা জমির দলিলে নিজের নাম ও তার সিন্ডিকেটের আরেক প্রতারক কাদির মুল্লার নামে দলিল করেন। অথচ জমির পূরো টাকা তাজ উদ্দিনের কাছ থেকেই আনেন মৌলানা কাওসার। এছাড়াও আরো ৬শতক জমি কিনে দেওয়ার নাম করে তাজ উদ্দিনের কাছ থেকে ৯ লাখ টাকা আনে প্রতারক কাওসার। জমি কিনে না দিয়ে সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাত করে। শুধু তাই নয়, কাওসার মুল্লা তার সিন্ডিকেটের সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে প্রবাসী তাজ উদ্দিনের বড়লেখাস্থ তাজমহল কমিউনিটি সেন্টারের ১৮ লক্ষ টাকার মালপত্র লুটে নেন এবং তাজ উদ্দিন হাজীর একটি দোকান তালা লাগিয়ে দেন। যা দুই বছর পর প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে খুলতে হয়েছে।
মৌলানা কাউসার এলাকার প্রভাবশালী কতিপয় দাদন ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট করে সুদের ব্যবসা প্রতারণা ও আত্মসাতমূলক এসব কর্মকান্ড চালিয়ে আসছেন। কথিত এ কাওসার সিন্ডিকেটের স্থানীয় অন্য সদস্যরা হচ্ছেন এলাকার সন্ত্রাসীদের গডফাদার ফজলুর রহমান ফজলু, আব্দুল খালিক অরফে সুদী খালিক, আব্দুল কাদের মোল্লা, আব্দুল শহীদ মুক্তা,ওবায়দুল্লাহ, সামছুল হক, গিয়াস উদ্দিন, মুজিবুর রহমান জয়নাল, জাহিদুল ইসলাম, খলিলুর রহমান শাহীন, নুর আহমদ ও কয়েছ মিয়া।
কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের পর কাওসার সিন্ডিকেট প্রবাস ফেরত তাজ উদ্দিনকে হত্যার চেষ্টা করে তার বাসােেত হামলা চালায়। বাসায় রক্ষিত মূল্যবান দলিল পত্র, প্রায় ২০০ ভরি সোনা কয়েকটি ব্যাংকের চেক সহ কয়েক লক্ষ টাকার মালামাল লুটে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় তাজ উদ্দিন ২০২০ সালের ৬ আগস্ট মৌলভীবাজার নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রটের আদালতে একটি মামলা (নং-১৭/২০২০) করেন। এ মামলায় দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর কাওসার মুল্লা ও তার সিন্ডিকেট সদস্যরা মুচলেকামূলে মুক্তি লাভ করেন।
হাজী তাজ উদ্দিন সহ নাম প্রকাশে অনিচ্চুক এলাকার অনেকের বর্ণনা মতে, ভয়ঙ্কর প্রতারক ও দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী কাওসারের বিরুদ্ধে এলাকায় কেউ ভয়ে মুখ খুলতে চায়না। কারণ তার রয়েছে বিশাল পালিত সন্ত্রাসী বাহিনি। এক কথায় এরা সবাই তার পালিত কুকুর। কাওসার মুল্লার বিরুদ্ধে কথা বললেই এরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নামে বেনামে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি দিয়ে লেখালেখি ও অপপ্রচার করতে থাকে। এমনকি অনেক সময় সরাসরি সন্ত্রাসী হামলাও করে থাকে। কাওসার সিন্ডিকেটের এহেন প্রতারনা, সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও আত্মসাতের প্রতিকার চেয়ে তাজ উদ্দিন সম্প্রতি মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার, ও বড়লেখার থানার ওসি বরাবরে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন, যা তদন্তাধীন। এছাড়াও সাইবার ক্রাইম সিলেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের প্রতিকারে ১৯ জনকে আসামী করে তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন বলে জানান।
এসব অভিযোগের বিষয়ে বড়লেখা মুহাম্মদিয়া কওমি মাদ্রাসার মৌলানা কাওসারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রবাস ফেরত তাজ উদ্দিনের সাথে তার দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কথা, তার টাকায় বিদেশ যাওয়ার কথা, তাজ উদ্দিনের বিল্ডিং বানানোর দায়িত্বে থাকার কথা ও বিরোধের কথা তিনি স্বীকার করে বলেন- স্থানীয় গণ্যমান্যদের সালিশে বিষয়ের সমাধান হলেও তাজ উদ্দিন তা না মেনে মামলার পথকে বেছে নিয়েছেন। আদালত তাদেরকে তার একটি মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। বাকি মামলা গুলো আইন দেখছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে নির্যাতন ও প্রতারণার স্বীকার হাজী তাজ উদ্দিন বলেন, জংঘি, প্রতারক, অর্থআত্মসাৎকারী, সুদখোর কাওসার মুল্লা আমার সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে ক্ষান্ত হয়নি। এখন সে তার কুকরদের আমার পিছনে লেলিয়ে দিয়েছে। আমাদের ভ্রাতৃত্বের মধ্যে ফাটল ধরিয়েছে। এক কথায় আমাকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। একটি দীনি প্রতিষ্ঠান মাদ্রাসার সাহায্য করেত গিয়ে তার সাথে আমার সম্পর্ক সৃষ্টি হয়ে ছিল। আমার জীবনের সবচেয়ে বড়ভূল মৌলানা পরিচয়ধারী নর্দমার কীট প্রতারক কাওসার কে বিশ্বাস করে কোটি কোটি টাকা লেনদেন করা। আমি দুধকলা দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে একটা কালসাপ পুষেছিলাম। যদি তা না করে কতগুলো কুকুর পুষতাম তবে ঐ প্রাণী গুলে কখনোই তার মতো গাদ্দারী করতোনা।”
সূত্র : ক্রাইম সিলেট ও অনিলা টিভি