করোনার কারণে টানা এক মাস পর মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফেরার অপেক্ষার পালা শেষ আজ মঙ্গলবার। এক মাস এক দিন পর এদিন শিক্ষাঙ্গনের আঙিনায় পা পড়বে তাদের। তবে প্রাথমিকের খুদে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও সাত দিন। আগামী ২ মার্চ থেকে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হবে তাদের।
ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার থেকেই ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া নতুন শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্লাস শুরুর ঘোষণা দিয়েছে। সরকারি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও কাল-পরশুর মধ্যে ক্লাস শুরু হচ্ছে। এরই মধ্যে করোনার বিধিনিষেধ মঙ্গলবার থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। তাই ১০৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও ক্লাস শুরু হচ্ছে পুরোদমে।
গত দুই বছরে দফায় দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের শিখন-ঘাটতি (লার্নিং লস) পুষিয়ে নিতে অতিরিক্ত ক্লাস চালুর পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা। প্রয়োজনে ছুটির দিনগুলোতেও ক্লাস চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ তাদের।
ইউনেস্কোর তথ্যমতে, বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ২০২০ সালের মার্চ থেকে প্রায় ৮২ সপ্তাহের জন্য সম্পূর্ণ এবং আংশিকভাবে বন্ধ রয়েছে, যা বিশ্বের দীর্ঘতম। করোনার বিস্তারকালে বিশ্বের প্রায় ১৫০টি দেশ তাদের স্কুল পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছিল, ১০টি দেশ তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আংশিকভাবে বন্ধ এবং আরও ১০টি দেশ স্কুল খোলা রেখেছিল। কুয়েত ৬২ সপ্তাহ, ভেনেজুয়েলা ৬১ সপ্তাহ, উগান্ডা এবং ফিলিপাইন ৬০ সপ্তাহ, মিয়ানমার ৫৯ সপ্তাহ এবং হন্ডুরাস ৫৮ সপ্তাহ বন্ধ রেখেছিল।
জানা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে প্রতিবেশী ভারত ২৫ সপ্তাহের জন্য তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সম্পূর্ণ বন্ধ রেখেছিল এবং পাকিস্তান ৩৭ সপ্তাহের জন্য বন্ধ করেছিল। উন্নত দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং সুইডেন কখনোই পুরোপুরি স্কুল বন্ধ করেনি। এমনকি ব্রাজিল, দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে যেখানে সর্বোচ্চ মৃত্যুর হার, সেখানেও মাত্র ৩৮ সপ্তাহ সম্পূর্ণ স্কুল বন্ধ ছিল। ইউনেস্কো এবং ইউনিসেফের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার শুরু থেকে স্কুল বন্ধের কারণে বাংলাদেশে প্রায় তিন কোটি ৭০ লাখ শিশুর শিক্ষা ব্যাহত হয়েছে। তৈরি হয়েছে ব্যাপক শিখন-ঘাটতি।
বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে এর আগের দেওয়া গাইড লাইনের নির্দেশনার সঙ্গে নতুন করে ২০টি নির্দেশনা দিয়েছে মাউশি অধিদপ্তর। এগুলো স্কুল-কলেজের জন্য প্রযোজ্য হবে।
নির্দেশনায় যা রয়েছে-
১. কোডিড-১৯ টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেয়া শিক্ষার্থীরা সশরীরে শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে।
২. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রবেশমুখসহ অন্যান্য স্থানে কোডিড-১৯ অতিমারি সম্পর্কিত সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি পালনে করণীয় বিষয়গুলো ব্যানার বা অন্য কোনো উপায়ে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রবেশপথে শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্রের মাধ্যমে নিয়মিত তাপমাত্রা মাপা ও তা পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা।
৪. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি বিবেচনায় অনলাইন/ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে শিখন-শেখানো কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।
৫. শিক্ষার্থীদের জন্য বিতরণ করা অ্যাসাইনমেন্টগুলোর কার্যক্রম যথারীতি অব্যাহত থাকবে।
৬. শিক্ষার্থীদের ক্লাস রুটিন আগের নির্দেশনা মেনে প্রণয়ন করতে হবে।
৭. শিক্ষার্থীদের ভিড় এড়াতে প্রতিষ্ঠানের সব প্রবেশ/প্রস্থান মুখ ব্যবহারের ব্যবস্থা করা। একটি প্রবেশ/প্রস্থান মুখ থাকলে সে ক্ষেত্রে একাধিক প্রবেশ/প্রস্থান মুখের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করতে হবে।
৮. প্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের আনন্দঘন পরিবেশে শ্রেণি কার্যক্রমে স্বাগত জানানোর ব্যবস্থা করা।
৯. প্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিন শিক্ষার্থীরা কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করবে এবং বাসা থেকে যাওয়া-আসা করবে, সে বিষয়ে তাদের শিক্ষণীয় ও উদ্বুদ্ধকারী ব্রিফিং দিতে হবে।
১০. প্রতিষ্ঠানের একটি কক্ষ প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ আইসোলেশন কক্ষ হিসেবে প্রস্তুত রাখতে হবে।
১১. প্রতিষ্ঠানের সব ভবনের কক্ষ, বারান্দা, সিঁড়ি, ছাদ ও আঙিনা যথাযথভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে হবে।
১২. প্রতিষ্ঠানের সব ওয়াশরুম নিয়মিত সঠিকভাবে পরিষ্কার ও পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে।
১৩. প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারী, অভিভাবকসহ অন্য কেউ প্রবেশ/অবস্থান/প্রস্থানের সময় সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
১৪. সব শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারী এবং অন্য কেউ সঠিকভাবে মাস্ক পরিধান করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
১৫. প্রতিষ্ঠানে সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধোয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করতে হবে।
১৬. শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বসার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ এবং পারস্পরিক ৩ ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
১৭. খেলার মাঠ, ড্রেন ও বাগান যথাযথভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা এবং কোথাও পানি জমে না থাকে তা নিশ্চিত করা।
১৮. প্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিতির সংখ্যা নিরূপণ করতে হবে।
১৯. প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে আনন্দঘন শিখন কার্যক্রমের মাধ্যমে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালিত করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
২০. প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি ও অভিভাবকদের সঙ্গে সভা করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।